পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ডিম স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকারী।অনেকের হয়তো জানা নেই, ডিমের সাদা অংশ ও কুসুমে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান ত্বক ও চুল পরিচর্যায় দারুন কাজ করে। তৈলাক্ত ত্বক, মুখের অবাঞ্ছিত লোম বা ব্রণের সমস্যা দূর করতে এটি কাজে লাগতে পারেন। তেমনি চুলের যত্নেও ডিমের ভূমিকা অনেক।
ত্বক ও চুলের যত্নে ডিমের ব্যবহার
ত্বকের যত্নে যেভাবে ডিম কাজে লাগাবেন-
ডিমের প্রোটিন ত্বকের কালচে ভাব দূর করে এক নিমেষেই উজ্জ্বল ও মসৃণ করে। আপনি চাইলে ডিমের সাদা অংশ সরাসরি ত্বকে লাগাতে পারেন। এ ছাড়া ডিমের কুসুম দিয়েও প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। তবে ত্বকের ধরন বুঝে কুসুমের প্যাক ব্যবহার করুন।
ত্বক অনুযায়ী ডিমের কুসুমের প্যাকে যা যা লাগবে :
ডিমের কুসুমের ব্যবহারঃ
ত্বক অনুযায়ী ডিমের কুসুমের প্যাকে যা যা লাগবে :
সাধারণ ত্বকের জন্য : একটি ডিমের কুসুম, গাজরের রস কিংবা কুচানো গাজর ও দুধ।
শুষ্ক ত্বকের জন্য : একটি ডিমের কুসুম ও অর্ধেকটা চটকানো অ্যাভোকাডো।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য : একটি ডিমের কুসুম, এক চা চামচ লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু।
স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য : একটি ডিমের সাদা কুসুম ও এক চা চামচ টক দই (ব্রণের জন্যও এই প্যাক উপকারী)।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
ত্বক অনুযায়ী এর মধ্যে যেকোনো একটি প্যাক বেছে নিন। এবার সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এখন পানি দিয়ে মুখ ভিজিয়ে হালকাভাবে পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করে নিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অনেকে ডিমের কুসুমের বাজে গন্ধ সহ্য করতে পারেন না,তাদের জন্য ডিমের সাদা অংশ দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরীর নিয়ম দিয়ে দিলাম। ডিমের সাদা অংশ দিয়ে ফেসপ্যাক কীভাবে তৈরি ও ব্যবহার করবেন-
ডিমের সাদা অংশ ও মধু
১টি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে ৫ চা চামচ মধু মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকের যত্নে এই ফেসপ্যাকটি খুবই কার্যকর।
ডিম ও অলিভ অয়েল
১ কাপ ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে ৭/৮ চা চামচ অলিভ অয়েল মেশান। মিশ্রণটি ভালো করে ফেটিয়ে ত্বকে লাগান। ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করলে বিবর্ণ ত্বকে ফিরবে জৌলুস।
ডিমের সাদা অংশ ও মুলতানি মাটি-
ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে আধা চা চামচ মুলতানি মাটি মেশান। ১ চা চামচ লেবুর রস মিশ্রণে দিয়ে ভালো করে নেড়ে নিন। ফেসপ্যাকটি আধা ঘণ্টা ত্বকে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারি এই ফেসপ্যাক।
ডিমের সাদা অংশ ও লেবু-
ডিমের সাদা সঙ্গের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এটি লোমকূপের ভেতর থেকে ময়লা বের করবে ও ত্বক টানটান করবে।
ডিমের সাদা অংশ ও নারিকেল তেল-
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এই ফেসপ্যাকের জুড়ি নেই। ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে ফেটিয়ে নিন। মিশ্রণে ১ চা চামচ হলুদ ও লেবুর রস দিন। ভালো করে নেড়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ডিমের সাদা অংশ ও দুধ-
ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে খানিকটা দুধ মিশিয়ে নিন। আধা চা চামচ হলুদ ও ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ত্বক। সপ্তাহে দুইবার এটি ব্যবহার করলে ত্বকের জৌলুস বাড়বে।
মুখের অবাঞ্ছিত লোম্কুপ কমাতে ডিমের সাদা অংশঃ
ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে ফেটে পরিষ্কার ত্বকে মাখুন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
চুলের যত্নে ডিম:
– একটি ডিম, আধা কাপ টক দই, এক চা চমচ অলিভ অয়েল/ আমন্ড অয়েল ভালো ভাবে মিক্স করে চুলে ভালোমতো লাগান। ৪০-৪৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এতে করে চুল খুব ভালোমতো কন্ডিশন্ড হবে, উজ্জ্বল এবং সুন্দর হবে।
– নিষ্প্রাণ এবং রুক্ষ চুলের জন্য একটি ডিমের সাদা অংশ আলাদা করে ভালোভাবে ফেটে নিয়ে পুরো চুলে মাস্ক হিসেবে লাগান। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এই মাস্কটি আপনার চুলের প্রাণ ফিরিয়ে এনে একে করে তুলবে নরম এবং উজ্জ্বল।
– একটি কলা , একটি ডিম , তিন চা চমচ মধু, তিন চা চমচ দুধ, পাঁচ চা চমচ অলিভঅয়েল ভালো ভাবে মিক্স করে ১৫- ২০ মিনিট মাথায় রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন । এটি চুলের ড্যামেজ সারাতে খুবই কার্যকর একটি মাস্ক।
রান্না হয়ে গেলে ডিমের খোসা নিশ্চয় ফেলে দিয়ে থাকি আমরা? কিন্তু ডিমের খোসা দিয়েও আমরা দৈনন্দিন জীবনে নানা কাজে ব্যবহার করতে পারি ডিমের খোসা কোন কোন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, তা জেনে নেওয়া যাক…
- ডিমের খোসা ক্যালসিয়ামে ভরপুর। সে কারণে গাছের সার হিসেবে ডিমের খোসার ব্যবহার অতুলনীয়। তাই ফেলে না দিয়ে ডিমের খোসা গুঁড়ো করে গাছের গোড়ায় দিতে পারেন। এর থেকে গাছ পুষ্টি পাবে।
- ডিমের খোসার ফার্স্ট এইড হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। হ্যাঁ, ঠিকই পরেছেন। ডিম সিদ্ধ করার পর খোসা এবং এগ হোয়াইটের মধ্যে যে পাতলা সাদা একটা আবরণ থাকে, সেটি সাধারণ কাটা-ছেঁড়া সারাতে দারুন উপকারী হতে পারে। ওই আবরণটি ব্যান্ডেজের মতো কাটা জায়গায় লাগিয়ে রাখলে খুব তাড়াতাড়ি রক্ত বন্ধ হয়ে যায়।
- রান্নাঘরের সিংক পরিষ্কার করতেও ডিমের খোসা দারুন কাজে লাগতে পারে। সিংকের নলে খাবারের টুকরো আটকে অনেক সময় মুখ বন্ধ হয়ে যায়। বাসন পরিষ্কার করার সময় সিংকের মুখে একটু বড় সাইজের ডিমের খোসা রেখে দিলে খাবারের টুকরো তার মধ্যে থেকে যাবে।
- রুপোর বাসন পরিষ্কার করতেও ডিমের খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে। হার্ডবয়েল্ড ডিমের খোসা গুঁড়ো করে তা দিয়ে রূপোর বাসন আর গয়না পরিষ্কার করলে একদম ঝকঝকে হয়ে যাবে।
- ফ্লাস্ক পরিষ্কার করতেও ডিমের খোসা ব্যবহার করতে পারেন। ডিমের খোসা টুকরো করে ফ্লাস্কের ভেতরে ফেলে দিন, তার মধ্যে গরম জল দিন। এবার মুখ বন্ধ করে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিয়ে খোসাসুদ্ধ জলটা ফেলে দিন। দেখবেন ফ্লাস্ক একদম নতুনের মতো হয়ে গেছে
আশা করি পোস্টটি দ্বারা আপনারা উপকৃত হবেন।