ই টিন রেজিস্ট্রেশন

ই টিন রেজিস্ট্রেশন

অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের আয়কর নিবন্ধন বা টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ব্যাংক থেকে লোন কিংবা সরকারি বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নিতে কিংবা কর পরিশোধ করতে প্রয়োজন হয় আয়কর নিবন্ধন সনদ বা টিন সার্টিফিকেট।

e tin registration

etin certificate

ই টিন রেজিস্ট্রেশন

ETin কি?

ETIN এর ফুল ফর্ম হচ্ছে  Electronic Taxpayer’s Identification Number (ইলেক্ট্রনিক ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নাম্বার )। আসলে এটি হচ্ছে আয়কর নিবন্ধন সনদ নাম্বার। সংশ্লিষ্ট কর অফিস থেকে এই বিশেষ নাম্বার বিশিষ্ট সার্টিফিকেট বা সনদটি দেয়া হয়ে থাকে।

 

সনদটি নাম্বারযুক্ত করার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে করদাতাদের শনাক্ত করা। তবে হ্যা, শুধু কর বা ট্যাক্সের জন্য নয়, যেহেতু বিভিন্ন প্রয়োজনে টিন সাটিফিকেটটি আপনার কাজে লাগবে, তাই ট্যাক্সপেয়ার বা করদাতা হিসেবে আপনি যে নাম্বারটি বহন করবেন তা অনেক ক্ষেত্রে আপনার রাষ্ট্রস্বীকৃত একটি দলিল হিসেবে কাজ করবে।

দশ (১০) সংখ্যাবিশিষ্ট এই বিশেষ সনদের আবার একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে। নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন সেটি কি! বলছি- এর প্রথম তিনটি সংখ্যা দিয়ে করদাতার অঞ্চল এবং মাঝের তিনটি সংখ্যা দিয়ে তার পদমর্যাদা বোঝানো হয়। আর শেষের চারটি সংখ্যা দিয়ে ঐ করদাতাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়।

ETin করার পদ্ধতি

আপনি দুইভাবে ই-টিন সার্টিফিকেট করতে পারেন।প্রথমত সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে, দ্বিতীয়ত অনলাইন থেকে আবেদনের মাধ্যমে। অনলাইন পদ্ধতিটা দ্রুত ও সহজ করতে অনলাইনে (e-TIN) রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অনলাইন এবং অফলাইন ফর্মে কোনো ভিন্নতা নাই। এমনকি আগের করা টিন সার্টিফিকেট দিয়েও নতুন ই-টিন ডাউনলোড করতে পারবেন।‍

রেজিস্ট্রেশন করতে নিচের ধাপগুলো ফলো করুনঃ

-এন বি আর (NBR)- এর ই-টিন রেজিস্ট্রেশানের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।

মেনু লিস্টে পাবেন রেজিস্ট্রেশান লিংক। ওটাই আপনি সরাসরি নিয়ে আবেদন ফর্মে। ক্লিক করুন!

e tin registration

 

– এবার এই পৃষ্ঠায় আবেদনকারী হিসেবে আপনাকে একটা ইউজার একাউন্ট করতে হবে। একাউন্টটি ভবিষ্যতে আপনার ঠিকানা বা কর অঞ্চল পরিবর্তনে কাজে দেবে। পৃষ্ঠার পুরোটাই ইংরেজিতে করা বাধ্যতামূলক।

ইউজার আইডি ঘরটিতে আপনার নামের সাথে এমন কিছু রাখুন যা আইডিকে স্বতন্ত্র একটা রুপ দেবে। এটা অনেকটা জিমেইল একাউন্ট খোলার মতো। যেমন –  Khairul 7726। এরপর ৮ ক্যারেক্টার বিশিষ্ট একটি পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। এবং বুদ্ধিমানের কাজ হলো ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড কোনো নোটবুকে টুকে রাখা।

– এরপর আপনার একাউন্টের নিরাপত্তার স্বার্থে একটা ‘সিকিউরিটি কোশ্চেন’ থাকবে যার উত্তর সেট করে আপনি একাউন্টটাকে নিরাপদ করবেন। একনাগাড়ে ১৯টি প্রশ্ন দেখে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। যেকোনো একটি প্রশ্ন বেছে নিলেই চলবে। এমনকি ‘Other’ অপশন থেকে নিজের মতো করে একটি প্রশ্ন কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন।

– পরের ধাপে দেশের নাম সিলেক্ট করতে হবে। অতঃপর আপনাকে আপনার মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। প্লিজ, ভুল করেও কোনো অচল সিম নাম্বার দেবেন না।

– এরপরের ধাপে ইমেইল এড্রেস দেবার অপশন আসবে। বাধ্যতামূলক  না হলেও দিয়ে রাখা ভালো। হাজার হলেও আপনি এ জামানার মানুষ তাইনা!

– তারপর একটি ক্যাপচার মুখোমুখি হবার পালা। অক্ষরগুলো শনাক্ত করুন এবং লিখে ফেলুন নির্দেশিত ঘরে।

– আপনার ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ হয়ে গেছে। এবার ‘Register’ বাটনটিতে ক্লিক করুন।

e tin registration

– এবার ৬ ডিজিটের একটা এক্টিভেশান কোড যাবে আপনার দেয়া মোবাইল নাম্বারে। কোডটি ব্যবহার করে একাউন্ট এক্টিভেট তথা সচল করে ফেলুন।

e tin registration

 

– একাউন্টটি চালু হওয়া মাত্র স্ক্রিনে রেজিস্ট্রেশান সম্পন্ন হওয়ার ও নতুন করে লগ-ইন করার ম্যাসেজ দেখানো হবে। এবার ঐ একই ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে ফের লগ-ইন করুন।

– তারপর আপনি বাম দিকের সবার উপরের সারিতে TIN Application বাটন দেখতে পাবেন। ক্লিক করুন।

e tin registration

 

– এবার করদাতার ধরণ নির্বাচনের পালা। আপনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিক? ওকে ফাইন, তবে Taxpayer Status হিসেবে Individual Bangladeshi অপশনটি সিলেক্ট করুন। এ ভিন্ন অন্য কিছু হয়ে থাকলে সে অনুযায়ী অপশন বেছে নিন। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়, আপনার বয়স ১৮ এর নিচে হয়ে থাকলে Minor/Dependant অপশনে যেতে হবে। অপরদিকে ১৮ এর ঊর্ধ্বে হয়ে থাকলে Having NID অপশনে যেতে হবে।

e tin registration

কিন্তু আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানের করদাতা হলে কি করবেন? জেনে নিন, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ধরণ অনুযায়ী Company বা Partnership Firm বা অন্য কিছু নির্বাচন করতে হবে। এছাড়া ব্যবসা বা পেশার ধরন কমন না পড়লে Business Location অপশনটি বেছে নেবেন। অর্থাৎ আপনি যা করেন যে অনুসারে এলাকাটি বেছে নিন। ব্যস!

e tin registration

 

পরের পৃষ্ঠায় আপনাকে ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে এবং সেগুলো লিখতে হবে ইংরেজিতে। সেগুলো হচ্ছে – নাম, লিঙ্গ, পিতামাতার নাম, স্বামী/স্ত্রীর নাম, এনআইডি নাম্বার, মোবাইল নাম্বার, জন্মতারিখ, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা।

মনে রাখবেন, স্মার্ট এনআইডি হলে ১০ ডিজিট, লেমিনেটেড হলে ১৭ ডিজিট হবে এবং জন্মতারিখ অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী হতে হবে। আর হ্যা, এড্রেস লাইনগুলো যত্নের সাথে লিখবেন যেনো বাসা বা রোড নাম্বার ভুল না হয়! এ সবক’টা তথ্য দেবার পর ‘Go to Next’ বাটনে ক্লিক করুন।

e tin registration

 

– ওই বাটনটি আপনাকে আপনার এ পর্যন্ত ইনপুট করা সব তথ্য যাচাই করতে একটা পৃষ্ঠায় নিয়ে যাবে। ওটাকে বলা হয় ‘Final Preview’। ভালো করে দেখে নিন সবকিছু ঠিক আছে কিনা।

এ সবের নিচে আপনি একটা লাইন দেখবেন – ‘‘I hereby affirm that all information given above is correct & complete and I have not taken any TIN’’ যার অর্থ ‘‘উপরে দেয়া সবগুলো তথ্য সঠিক ও সম্পূর্ণ এবং আমি কোনো টিন নেইনি’’। এই লেখার পাশে একটা টিক বক্স দেখবেন। টিক দিন এবং Submit Application বাটনে ক্লিক করুন। আপনার আবেদনটি জমা হয়ে যাবে।

e tin registration

 

– ব্যস, তৈরি হয়ে গেলো আপনার টিন সার্টিফিকেট! সামনে আসা পৃষ্ঠায় আপনি ছবিসহ আপনার দেয়া সবগুলো তথ্য দেখতে পাবেন। এগুলো প্রিন্ট আকারে চাইলে সেই অপশনটাও আপনি পাবেন।

যাহোক, এরপর ‘View Certificate’ বাটনে ক্লিক করুন। আপনার টিন সার্টিফিকেটটি স্ত্রিনে দেখতে পাবেন। এটাই আপনার কাঙ্খিত ই-টিন সার্টিফিকেট! আপনি যেকোনো সময় এটিকে প্রিন্ট করে ব্যবহার করতে পারেন।