চুল পড়া প্রতিরোধে করণীয় কি
চুল পড়া ছেলেমেয়ে উভয়েরই রোজকার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত এই সমস্যাই ভুগছি। চুল পড়া রোধে দামি দামি ওষুধ ও প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু কিছুতেও কিছু হয় না। তবে চুল পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
How to prevent hair loss

কারণ ভেদেই মূলত চুল পড়া সমস্যার সমাধান করাটাই ভালো। তবে পেয়ারা পাতার ব্যবহারে আপনি পেতে পারেন জাদুকরী সমাধান।
পেয়ারা পাতায় অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান রয়েছে যা মাথার তালু সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এমনকি এটি মাথার খুশকি হওয়া রোধ করে। ভিটামিন সি মাথার তালুতে ফলিক অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় রেখে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
যা যা লাগবে:
১। এক মুঠো পেয়ারা পাতা
২। ১ লিটার পানি
যেভাবে তৈরি করবেন:
১। একটি পাত্রে পানি জ্বাল দিতে দিন। পানি ফুটে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
২। ফুটে এলে এতে পেয়ারা পাতা দিয়ে দিন।
৩। পেয়ারা পাতা দিয়ে ২০ মিনিট জ্বাল দিন।
৪। ২০ মিনিট পর নামিয়ে ফেলুন।
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
১। প্রথমে চুল ভাল করে শ্যাম্পু করে নিন; তবে কন্ডিশনার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
২। চুল কিছুটা শুকিয়ে এলে চুল বেণী করে তারপর পেয়ারা পাতার পানি ঢালুন।
৩। পানিটি মাথার তালুতে কমপক্ষে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন এবং ২ ঘণ্টা রেখে তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কতদিন পর পর ব্যবহার করবেন:
চুল পড়া বন্ধ করবে যদি চুল পড়া সমস্যা অনেক বেশি থাকে তবে সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করুন এটি চুল পড়া বন্ধ করবে । আর যদি চুল শাইনি সিল্কি করে তুলতে চান তবে সপ্তাহে দুইবার এটি ব্যবহার করুন।
চুল পড়া রোধ করতে হলে অবশ্যই এর কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা প্রয়োজন। নিজে নিজে চিকিৎসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
নিচে চুল পড়া রোধে ১০টি টিপস দেওয়া হলো-
১। ধুমপান ত্যাগ করুন। ধুমপানের কারণে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, রক্ত নালিকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এটা প্রমাণিত। ধুমপানের কারণে চুল পড়া বেড়ে যায় এবং চুল বাদামি বর্ণ ধারণ করে, তাই চুল বৃদ্ধি করতে চাইলে ধুমপান করবেন না।
২। অতিরিক্ত চা বা কফি পান করবেন না। চা বা কফিতে ক্যাফেইন থাকে যা সকল প্রকার চুল ও স্কিনের সমস্যার জন্য দায়ী, তাই মাত্রাতিরিক্ত চা, কফি পান করবেন না।
৩। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় শরীরে আয়রনের অভাবে চুল পড়ে। আয়রনের অভাবে আমাদের দেহে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যায়, যা আমাদের চুলের গোড়ার (হেয়ার ফলিকল) জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি তাই হয়, তাহলে প্রচুর পরিমাণে লাল শাক, কচুশাক খেতে হবে।
৪। ভিটামিন-ই চুল পড়া রোধে ও নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী, তাই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি খান। ভিটামিন-ই চুলের ত্বকে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয় যা চুল বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে এটি চুল পড়া রোধ করে।
ভিটামিন-ই এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেল অপসারণের মাধ্যমে স্কিনকে সুরক্ষিত রাখে। নাশপাতি, বাদাম ও জলপাই তেলে প্রচুর ভিটামিন-ই থাকে। অন্যদিকে ভিটামিনের সর্বোৎকৃষ্ট প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে গম, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সবজি, ডিম প্রভৃতি।
৫। স্বাস্থ্যকর খাবার বা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার শুধু যে চুল শক্ত করে তা নয়, চুল গজাতেও সহায়তা করে। এছাড়া অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবারও পরিহার করুন।
৬। ওমেগা- থ্রি (৩) ফ্যাটি অ্যাসিড চুল পড়া রোধে খুব কার্যকর। সাধারণত বিশেষ ধরনের মাছে এই উপাদানটি থাকে। তবে আমাদের দেশে এসব স্যামন, ম্যাকারেল মাছ পাওয়া যায় না। প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি (৩) ফ্যাটি অ্যাসিড তিসির তেলে পাওয়া যায়। আর এই তেল পাবেন স্থানীয় বাজারেই। মনে রাখবেন, এই তিসির তেল কিন্তু মাথায় লাগানোর জন্য নয় অথবা রান্নায় ব্যবহার করার জন্যও নয়। প্রতিদিন ২ চা চামচ তিসির তেল সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। তাহলেই আপনার চুল পড়া অনেক কমে আসতে পারে। এছাড়া প্রচলিত চুল সুরক্ষার তেল ব্যবহার করার মাধ্যমেও চুলের প্রতি যতœশীল হোন।
৭। নতুন চুল গজাতে উদ্দীপনা দেবার জন্য প্রতি সপ্তাহে চুলের ত্বক ম্যাসেজ করুন।
৮। চুলে অপ্রয়োজনীয় ঘষা-মাঝা, অতিরিক্ত আচরানো পরিহার করুন। গরম পানি, ড্রায়ার বা এমন কিছু ব্যবহার করবেন না যা চুলে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে।
৯। চুলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
১০। পর্যাপ্ত ঘুমান এবং বিশ্রাম নিন, কেননা ঘুম ও বিশ্রাম নতুন চুল গজানো ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা করে।