পেশা হিসেবে শিক্ষকতা

পেশা হিসেবে শিক্ষকতা

আভিধানিক সংজ্ঞায় শিক্ষকতা হলো শিক্ষকের কাজ বা পেশা। জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানই এ পেশার মূল বিষয়। মানুষকে পাশবিক থেকে মানবিক পর্যায়ে উন্নীত এবং অসভ্য থেকে সভ্যতার আলোয় আলোকিত করার পিছনে যে পেশার অবদান শতভাগ তা হচ্ছে শিক্ষকতা। এ পেশার মাধ্যমে একজন শিক্ষক তার উপর অর্পিত সামাজিক, মানবিক ও নৈতিক দায়িত্বগুলো অত্যন্ত সুচারু রূপে পালন করতে পারেন।

Teaching Career

Teaching Career

শিক্ষকতা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ:

সুদূর অতীত থেকে আজ অবধি উপমহাদেশের এ ভূখণ্ডে অর্থাৎ বাংলাদেশে শিক্ষকতাকে একটি মহৎ সেবাধর্মী পেশা হিসেবে গণ্য হয়। তবে পেশার চেয়ে সেবাটাই বেশি গুরুত্ব পাবার কানণে শিক্ষকতায় পেশাদারিত্বের অভাব এখনও কোন কোন বাঙালি মানসে পরিলক্ষিত। কিন্তু দিন বদলের পালায় শিক্ষিত মানুষের পাল্লা ভারী হবার সুবাদে শিক্ষকতা এখন এখানে একটি Smart পেশা এবং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় পেশাজীবী দল এখন শিক্ষক সমাজ।

বাংলাদেশ: শিক্ষকতার ক্ষেত্র:

বাংলাদেশে বহুস্তর বিশিষ্ট শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষকতার সুযোগ বিদ্যমান। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নুাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রতিটি মানুষের জন্য স্বস্ব ডিগ্রি ও বিষয় অনুযায়ী শিক্ষকতার সুযোগ বিদ্যমান। ক্যারিয়ার হিসেবে বাংলাদেশে এখনও সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-এ শিক্ষকতার প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে কৃতিত্বপূর্ণ একাডেমিক ফলাফল। এ কারণে এসব পদগুলোতে যাঁদেরকে নির্বাচিত করা হয় তাঁরা শিক্ষা জীবনের প্রতিটি সার্টিফিকেট অর্জনী পরীক্ষায় বিশেষ করে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী (বা সমমানের গ্রেড) পেয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে শিক্ষকতার অন্যতম বড় ক্ষেত্র কলেজ এবং সমমানের মাদরাসা। পাঠদানের স্তর অনুযায়ী কলেজগুলো উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি কলেজ- এ দুভাগে বিভক্ত। উচ্চ মাধ্যমিক তথা এইচএসসি পর্যন্ত পাঠদানে রত কলেজকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পাঠ পরিচালনাকারী কলেজই ডিগ্রি কলেজ।

কলেজের শ্রেণী যাই হোক না কেন শিক্ষক নিয়োগের শিক্ষাগত শর্ত সব জায়গায় একই রকম। অর্থাৎ কলেজ শিক্ষকতায় যিনি আসতে চান তার অবশ্যই স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া (এ বইয়ের বিসিএস অংশে দেখুন) বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন পরিচালিত বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভাল ফলাফলই কলেজ শিক্ষক পদের অন্যতম পূর্বশর্ত।

ক্যারিয়ার হিসেবে স্কুল শিক্ষকতা নানা মাত্রায় তাৎপর্যপূর্ণ। প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা-এ দুটোই স্কুল শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত। সেবা, ত্যাগ ও আদর্শের বীজ স্কুল পর্বেই একজন মানুষের মধ্যে উপ্ত হয়ে থাকে। কেউ যদি জাতির ভাগ্য নির্মাণের কারিগর হতে চান, স্বোপার্জিত আদর্শ, ন্যায় ও কল্যাণের মাধ্যমে মানব সমাজকে উপকৃত করতে চান তাহলে তাকে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকের পদ গ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের (সরকারি ও বেসরকারি) স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষক হতে হলে কমপক্ষে স্নাতক এবং কখনো কখনো স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক পদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মহিলা (এসএসসি) এবং পুরুষ (ডিগ্রি পাশ)।

শাহরিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে যারা গ্রামীণ স্নিগ্ধ জীবনে স্বীয় আদর্শ ও বিশ্বাসের সৌরভে সুরভিত করতে চান-এ মাটির সন্তানদের, তাদের জন্য ক্যারিয়ার হিসেবে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা অনন্য।

এ পেশায় কাদের আসা উচিত:

পঠন-পাঠন এবং অনুশীলনের জীবনে যারা বিশ্বাসী, বিত্তের চেয়ে চিত্তের বৈভবে যাদের পক্ষপাতিত্ব, সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা অন্যের মনোজগতের গুপ্তধন আবিষ্কারের নেশায় মত্ত মোটকথা স্রষ্টার রহস্যময় অপার সৃষ্টি যাদেরকে কৌতুহলী করে তাদের জন্য শিক্ষকতা আরামের, আনন্দের। এছাড়া শিক্ষার্থীর প্রতি মমত্ববোধ, প্রখর ধৈর্য, বহির্মুখী স্বভাব এবং অনুসন্ধিৎসু মন থাকলে এ পেশায় ভাল করা সম্ভব।

প্রস্তুতি কখন কিভাবে নেওয়া উচিত:

একজন ব্যক্তির জন্য শিক্ষকতা তখনই ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া উচিত যখন এ পেশার প্রতি তার অগাধ প্রেম এবং শ্রদ্ধাবোধ থাকবে। আমরা জানি, বাংলাদেশের পেশা নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি এখন অনেক বেশি জটিল এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও এই প্রতিযোগিতার বাইরে নয়। যার ফলে সেই তীব্র প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে দীর্ঘ মেয়াদী একটি পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক।

প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি সমসাময়িক সমাজের নানা বিষয়ে চোখ কান খোলা রাখা দরকার। বিশেষ করে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, সাধারণ গণিত বিষয়গুলোতে এসএসসি মানের দখল থাকা অপরিহার্য।

বাংলা প্রবাদ “সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র” মনে রাখলে এবং চর্চা করলে নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। মনে রাখা দরকার সুন্দর মুখ মানে সুন্দর কথা বলার ক্ষমতা।

মানুষের আর্থ-সামজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি ‘শিক্ষকতা’কেও প্রভাবিত করেছে নানা মাত্রায়। যার অনিবার্যতায় শিক্ষকতা এখন আর নিছক ঐতিহ্যিক সেবা নয়, চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ারও বটে। নানা অবক্ষয়ের এদেশে এখন ক্রান্তিকাল। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে কান্ডারির বড় দরকার। একমাত্র আদর্শ দেশ প্রেমিক শিক্ষকরাই পারে সেই কান্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে।

7 Comments

  1. Thank you for your sharing. I am worried that I lack creative ideas. It is your article that makes me full of hope. Thank you. But, I have a question, can you help me?

Leave a Reply