বাকৃবির ক্লাশ পরীক্ষা ৫ অক্টোবর থেকে শুরু

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘ দিনের অচলাবস্থার অবসান ঘটেছে। আগামী ৫ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ-পরীক্ষা শুরু হবে। ৩ অক্টোবর খুলে দেওয়া হবে আবাসিক হল।

বাকৃবির ক্লাশ পরীক্ষা ৫ অক্টোবর থেকে শুরু

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) অনলাইনে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে দুপর সাড়ে ১২টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে অচলাবস্থা নিরসনের আশ্বাস দেওয়া হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জি এম মুজিবর রহমান, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীমসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। আন্দোলনকারী পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদেরও একটি প্রতিনিধি দল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী ভেটেরিনারি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিবলী সাদী বলেন, আমরা আজকের বৈঠকে শিক্ষকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। আন্দোলনের সময়ে আমাদের কিছু আচরণ শোভন ছিল না, সেটি আমরা অনুধাবন করেছি। স্যারদের সঙ্গে আমাদের আন্তরিক আলোচনার মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। ভিসি স্যার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, আন্দোলনের কারণে কোনো শিক্ষার্থী একাডেমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, কিংবা হেনস্তার শিকার হবে না।

আরেক শিক্ষার্থী এহসানুল হক হিমেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আমরা চাই বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ বন্ধ হোক এবং প্রবেশপথগুলোতে কঠোর নজরদারি থাকুক। ভিসি স্যার আমাদের এ বিষয়ে ইতিবাচক নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আশা করছি, খুব দ্রুত শিক্ষার্থী-শিক্ষক-প্রশাসনের যৌথ আলোচনায় একটি স্থায়ী সমাধান বের হবে।

কম্বাইন্ড ডিগ্রি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের এই দাবি ছিল। এ নিয়ে বহু আলোচনা ও প্রচেষ্টা হয়েছে। অবশেষে সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত উদ্যোগে একটি কার্যকর সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সময়মতো সম্পন্ন করা এবং তাদের ক্ষতির মুখে না ফেলা।

কম্বাইন্ড ডিগ্রি প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক বাকৃবির কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিএম মুজিবর রহমান বলেন, দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের চাওয়া বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য ও তৃপ্তি। অতীতের ক্ষত ভুলে আমরা চাই সামনে পথ চলাটা হোক মসৃণ। ভেটেরিনারি ও হাসবেন্ড্রির সমস্যা সমাধানে দেশের ১৫টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে সবার জন্য মোটামুটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে। হয়তো সবার মতামত পুরোপুরি মানা সম্ভব নয়, তবে কমিটি প্রতিটি বিষয় দেখবে। ৩১ আগস্টের ঘটনার মতো অবস্থায় আর ফিরে যেতে চাই না। শিক্ষার্থীদের অনুরোধ, পেছনের দিকে না তাকিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষায় ফিরুক। কম্বাইন্ড মেকাপ কোর্স দ্রুত চালু হবে এবং ৫ বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কোর্স শেষ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন আমাদের একসঙ্গে কাজ করার সময়।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু আচরণগত ত্রুটি করেছিল, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে আমাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছে। আমরা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তাদের ক্ষমা গ্রহণ করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক একাডেমিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং বাকৃবির মর্যাদা বৃদ্ধি করা।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে যদি সাময়িক ভুল বোঝাবুঝি হয়, সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের কেন্দ্র, এখানে দ্বন্দ্ব বা সংকটের কোনো স্থান নেই। ভবিষ্যতে যাতে এমন পরিস্থিতি আর সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আমরা সতর্ক থাকব। ন্যায্য দাবি পূরণে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় সবার, এটি আমাদের মায়ের সমান। তাই এখানে কারো শিক্ষা জীবন যেন এক মুহূর্তের জন্যও ব্যাহত না হয়, সেটা আমাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব। আমরা চাই সবাই মিলেমিশে একটি সুন্দর, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষা পরিবেশ গড়ে তুলুক। শিগগিরই ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হবে এবং আমরা সবাই মিলে বাকৃবির মান-মর্যাদা ধরে রাখব।

উল্লেখ্য, ৩১ আগস্ট কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে চলমান আন্দোলনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাশ-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।