টোফেল পড়ার নিয়ম

টোয়েফল (TOEFL) বা Test of English as a Foreign Language হলো ইংরেজি ভাষাভাষী নন, এমন শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে দক্ষতা যাচাই করার পরীক্ষা।

TOEFL course in Bangladesh

TOEFL course in Bangladesh
TOEFL course in Bangladesh

স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা কিংবা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য এ পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টোয়েফলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (www.ets.org/toefl) রেজিস্ট্রেশন করে অনলাইনে নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হয়। ঢাকায় একাধিক টেস্ট সেন্টার রয়েছে, যেগুলোর ঠিকানাও পাওয়া যাবে ওয়েবসাইটে।

Reading, Listening, Speaking ও Writing—এই চারটি সেকশনে নেওয়া হয় পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী ইংরেজিতে কতটুকু দক্ষ, তার ওপর নির্ভর করে প্রস্তুতি নিতে কত সময় প্রয়োজন, যা কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস হতে পারে। টোয়েফল পরীক্ষা সারা বছরই দেওয়া যায় এবং একজন পরীক্ষার্থী চাইলে যতবার ইচ্ছা পরীক্ষা দিতে পারেন। ইংরেজিতে বেশ দক্ষ হওয়ার পরও অনেকে পরীক্ষার খুটিনাটি না জানার কারণে প্রত্যাশিত স্কোর পেতে ব্যর্থ হন। তাই টোয়েফলের প্রস্তুতি–সম্পর্কিত বিভিন্ন বই পড়া এবং প্র্যাকটিস টেস্ট দেওয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেটে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন পরামর্শ ও টিপসে চোখ বুলিয়ে নেওয়া ভালো।

১৯০টির বেশি দেশের ১১ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রধান যোগ্যতা হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় এ পরীক্ষার ফলাফলকে। এই পরীক্ষাপদ্ধতি প্রণয়ন এবং বিশ্বজুড়ে এর পরিচালনার নেপথ্যে থাকা সংস্থাটির নাম এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিস (ইটিএস)। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ভিত্তি ইটিএস টোয়েফল স্কোর প্রস্তুত করে, যার মেয়াদ থাকে দুই বছর। এই স্কোর সরাসরি ইটিএসের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষাটির নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

 

টোয়েফল পরীক্ষার নিবন্ধনের আগে যা জানা জরুরি:

নিবন্ধনের মাধ্যম: ইটিএসের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি এই নিবন্ধনের জন্য রয়েছে টোয়েফল অ্যাপ মাইটোফেল। এটি বিনা মূল্যেই পাওয়া যাবে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর বা গুগল প্লেতে। তবে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনটি শুধু কেন্দ্রে গিয়ে সশরীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। টোয়েফল আইবিটি (ইন্টারনেট—বেজড টেস্ট) হোম সংস্করণ কিংবা কাগজ সংস্করণের জন্য অবশ্যই ইটিএস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।

পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ:

টোয়েফল আইবিটি পরীক্ষা সপ্তাহে ছয়বার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কোনো একটি অনুমোদিত কেন্দ্রে গিয়ে অথবা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে ঘরে বসেও এই টেস্টে অংশ নেওয়া যায়। এ ছাড়া টোয়েফল এক বছরে ৫০ বারের বেশি অনুষ্ঠিত হয়। তাই শিক্ষার্থীরা যতবার খুশি পরীক্ষা দিতে পারেন। তবে প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্টের ১২ দিনের মধ্যে টোয়েফল রিটেক দেওয়া যায় না।

 

পরিবর্তনযোগ্য সময়সীমা:

পরীক্ষাকেন্দ্র ও তারিখসংক্রান্ত যাবতীয় হালনাগাদকৃত তথ্য ইটিএস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাওয়া যায়। এগুলো যেকোনো সময় বিভিন্ন কারণে পরিবর্তন হতে পারে। তাই অ্যাপয়েন্টমেন্টের সর্বশেষ অবস্থা যাচাইয়ের জন্য নিয়মিত ইটিএস অ্যাকাউন্ট চেক করা জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে সব পরীক্ষার তারিখে সব কেন্দ্র খোলা থাকে না।

পরীক্ষার সঠিক দিনক্ষণ নির্ধারণ:

পরীক্ষার দিন থেকে প্রায় ছয় মাস আগে নিবন্ধন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সাধারণত পরীক্ষার তারিখের স্লটগুলো খুব দ্রুত পূর্ণ হয়ে যায়। তাই কাঙ্ক্ষিত তারিখ ও কেন্দ্র পেতে যত শিগগিরই সম্ভব নিবন্ধন করা উচিত। বিশেষ করে পরীক্ষার দিন থেকে প্রায় চার মাস আগে নিবন্ধন করলে পছন্দের স্লট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পরীক্ষার তারিখগুলো এমনভাবে নির্ধারণ করা উচিত, যেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক আবেদন বা সময়সীমার কমপক্ষে দুই থেকে তিন মাস আগে পড়ে।

টোয়েফল নিবন্ধন ফি:

বর্তমানে নিয়মিত টোয়েফল অনলাইন নিবন্ধন ফি ২০৫ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২৪ হাজার ৯৩ টাকা (১ মার্কিন ডলার সমান ১১৭ দশমিক ৫২ বাংলাদেশি টাকা)। নিয়মিত নিবন্ধন পরীক্ষার সাত দিন আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও নিবন্ধন নেওয়া হয়, তবে তা বিলম্বিত নিবন্ধন হিসেবে গ্রাহ্য হয় এবং তার জন্য অতিরিক্ত ৪০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৪ হাজার ৭০১ টাকা) ফি দিতে হয়। পরীক্ষার দিনের ঠিক দুই দিন আগে এই বিলম্বিত নিবন্ধনও বন্ধ হয়ে যায়।

 

টোয়েফল পরীক্ষার নিবন্ধনপদ্ধতি:

ইটিএসে অ্যাকাউন্ট তৈরি: নিবন্ধনের আগে প্রথম কাজ হচ্ছে ইটিএস পোর্টালে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা। এর জন্য সরাসরি চলে যেতে হবে www.ets.org/mytoefl লিংকে। অতঃপর ইউজার নেম, ই-মেইল ঠিকানা এবং কয়েকটি নিরাপত্তামূলক প্রশ্নোত্তর সেট করতে হবে। পরবর্তী পর্যায়ে প্রদানকৃত ই-মেইল ঠিকানায় সেই ইউজার নেম, একটি অস্থায়ী পাসওয়ার্ডসহ একটি বার্তা পাঠানো হবে। এই নাম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টে লগইন করার পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে বলা হবে। এখানে নিজের পছন্দমতো একটি পাসওয়ার্ড সেট করার মাধ্যমেই সফলভাবে অ্যাকাউন্ট তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে।

নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি প্রদান:

অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে প্রার্থীর ইটিএস আইডি তার মাইটোফেল হোমে প্রদর্শিত হবে। এবার নিবন্ধনের স্ক্রিনে এই আইডিসহ প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্যসহ বিভিন্ন বিবরণী চাওয়া হবে। এখানে বিশেষ করে (*) তারকা চিহ্নবিশিষ্ট ঘরগুলো নির্ভুলভাবে পূরণ করা জরুরি। এখানে প্রার্থীর নামের বানান অবশ্যই তাঁর পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি কার্ড) সঙ্গে হুবহু মিল থাকতে হবে। সংগত কারণেই নিবন্ধন ফরম পূরণের সময় পাসপোর্ট ও এনআইডি কার্ড সঙ্গে রাখা অপরিহার্য। সব তথ্য দেওয়া হয়ে গেলে প্রার্থীর প্রোফাইলে তার প্রতিটি প্রদর্শিত হবে।

 

পরীক্ষার দিনক্ষণ ও কেন্দ্র নির্ধারণ:

এ অংশে টোয়েফল কেন্দ্র ও তারিখ নির্বাচন করতে হবে। স্ক্রিনে প্রদর্শিত তারিখগুলোর পর পরীক্ষার নির্দিষ্ট কেন্দ্রগুলোর তালিকা দেখাবে। যেকোনো কেন্দ্রের ওপর ক্লিক করলে নির্বাচিত তারিখের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সূচিগুলো দেখা যাবে।

স্কোর পাঠানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লিপিবদ্ধ করা:

টোয়েফল স্কোরের প্রাপক হিসেবে সর্বোচ্চ চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা যায়। অন্তর্ভুক্তির শেষ সময় পরীক্ষার আগের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত। এরপর অতিরিক্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যুক্ত করার জন্য ২০ মার্কিন ডলার করে ফি দিতে হবে। সেই সময়ের পর ইতিমধ্যে লিপিবদ্ধকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম পরিবর্তন করা বা সম্পূর্ণ মুছে ফেলা যাবে না। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোডগুলো ইটিএসের ওয়েবসাইটেই (www.ets.org/toefl/test-takers/) পাওয়া যায়।

সংযুক্তি আপলোড ও নিবন্ধন রিভিউ:

এখানে উল্লেখকৃত তথ্যাবলির সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় শনাক্তকরণ নথিপত্র আপলোড করতে হবে। সেই সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরও উল্লেখ করা জরুরি।

 

নিবন্ধন ফি পরিশোধ:

এটিএসে সর্বাধিক গৃহীত পরিশোধের মাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড। ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস ও ডিস্কভারের মতো ডুয়েল কারেন্সি কার্ডগুলো দিয়ে নিবন্ধনকরণ চলাকালেই অনলাইনে ফি প্রদান করা যায়।

 

নিশ্চিতকরণ ই-মেইল:

সবশেষে নিবন্ধন সফলভাবে সম্পন্ন হলে প্রার্থীর ইটিএস অ্যাকাউন্টে পরীক্ষার তারিখ, কেন্দ্রের বিবরণসহ একটি বার্তা পাঠানো হবে।

Similar Posts

  • IELTS | আইইএলটিএস নিবন্ধন ও পরীক্ষা

    ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য প্রমিত নিরীক্ষণপদ্ধতি ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম বা আইইএলটিএস। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ে এই পরীক্ষা অনেক জনপ্রিয়। IELTS ভিনদেশে উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির আবেদনে পূর্বশর্ত হিসেবে আইইএলটিএস স্কোরের কথা উল্লেখ করা থাকে। স্পিকিং (বলা), লিসেনিং (শোনা), রাইটিং (লেখা) ও রিডিং (পড়া)—এ চার অংশ মিলিয়ে নেওয়া হয় আইইএলটিএস পরীক্ষা। বিদেশে উচ্চশিক্ষা,

  • বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা

    বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তিন স্তরবিশিষ্ট- প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর এবং উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তর। সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় ৫ বছর মেয়াদী প্রাথমিক, ৭ বছর মেয়াদী মাধ্যমিক – এর মধ্যে ৩বছর মেয়াদী জুনিয়র, ২ বছর মেয়াদী মাধ্যমিক এবং ২ বছর মেয়াদী উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়। Education system of Bangladesh বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয়।বাংলাদেশে তৃতীয় পর্যায়ে

  • বিশ্বের সেরা পাঁচ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়

    যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের সেরা যে পাঁচ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজেন শিক্ষার্থীরা, এগুলো হলো ম্যাসাচুসেটস ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। world top engineering university ১. ম্যাসাচুসেটস ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য স্যাট (SAT) বা

  • ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ

    ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও জয়েন্ট মাস্টার্সে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয় ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপে। ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ এ বৃত্তির যাত্রা শুরু ১৯৮৭ সালে। বৃত্তিটির আওতায় শিক্ষার্থীরা প্ল্যান্ট হেলথ প্রোগ্রামে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। erasmus mundus scholarship সম্পূর্ণ অর্থায়িত এ বৃত্তিতে অর্থায়ন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। দুই বছর মেয়াদি এ বৃত্তির চার সেমিস্টার ইউরোপের

One Comment

  1. Pingback: 2024

Leave a Reply