শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের নিয়ম
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা একটি বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত, তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণও। সফলভাবে বিনিয়োগ করতে হলে কিছু মৌলিক নিয়ম, কৌশল ও শৃঙ্খলা অনুসরণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
Investment in share market

নিচে ধাপে ধাপে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের নিয়ম বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো —
বাজার সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান অর্জন করুন
বিনিয়োগ শুরু করার আগে আপনাকে জানতে হবে —
– শেয়ার কীভাবে কাজ করে
– স্টক এক্সচেঞ্জ কী (যেমন: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ – DSE, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ – CSE)
– শেয়ার মূল্যের ওঠানামার কারণ কী
– বাজার বিশ্লেষণের ধরণগুলো (Fundamental Analysis, Technical Analysis)
পরামর্শ: প্রাথমিকভাবে “Investopedia”, DSE/CSE ওয়েবসাইট, এবং নির্ভরযোগ্য ইউটিউব চ্যানেল থেকে শেখা শুরু করুন।
নিজের আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ন করুন
বিনিয়োগের আগে ঠিক করুন:
– কত টাকা আপনি বিনিয়োগ করতে পারবেন (যে টাকাটা হারালে আপনার জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে না)
– আপনার লক্ষ্য কী (স্বল্পমেয়াদী লাভ না দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ বৃদ্ধি)
– ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা কেমন
মূল কথা: কখনও ঋণ নিয়ে বা প্রয়োজনীয় খরচের টাকা দিয়ে বিনিয়োগ করবেন না।
একটি বিনিয়োগ অ্যাকাউন্ট খুলুন
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে হলে আপনাকে –
1. BO (Beneficiary Owner) অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে কোনো ব্রোকার হাউসে (যেমন LankaBangla, IDLC, BRAC EPL, ইত্যাদি)।
2. একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে সেটি লিঙ্ক করতে হবে।
3. NID, ছবি, এবং কিছু ফর্ম জমা দিতে হবে।
এরপর আপনি অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম বা মোবাইল অ্যাপে শেয়ার কিনতে-বিক্রি করতে পারবেন।
Fundamental Analysis করুন
একটি ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনতে নিচের বিষয়গুলো দেখুন:
– কোম্পানির **EPS (Earnings Per Share) – যত বেশি, তত ভালো।
– P/E Ratio (Price/Earnings Ratio) – কম হলে ভালো হতে পারে, তবে সেক্টরের গড় দেখে তুলনা করুন।
-Dividend history – কোম্পানি নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেয় কি না।
-Debt-to-equity ratio – কোম্পানির ঋণ কতটা।
– কোম্পানির **ব্যবসায়িক সম্ভাবনা ও সুনাম।
Technical Analysis (চার্ট বিশ্লেষণ) শিখুন
যদি আপনি সক্রিয় ট্রেডার হতে চান, তাহলে চার্ট পড়া শিখুন।
– Trend line, Support & Resistance, Moving Average, RSI, MACD ইত্যাদি ধারণা বুঝুন।
– দাম ওঠানামার প্যাটার্ন দেখে কখন কেনা-বিক্রি করবেন তা নির্ধারণ করুন।
দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন
– ভালো কোম্পানির শেয়ার ধরে রাখলে সময়ের সাথে মূল্য বৃদ্ধি পায়।
– প্রতিদিন দাম ওঠানামায় আতঙ্কিত হবেন না।
– নিয়মিত ডিভিডেন্ড ও বোনাস শেয়ার পেলে তা পুনর্বিনিয়োগ করুন (Compounding effect)।
বৈচিত্র্য আনুন (Diversify)
– এক বা দুইটি শেয়ারে সব টাকা বিনিয়োগ করবেন না।
– ভিন্ন সেক্টরে (Banking, Pharma, Energy, IT ইত্যাদি) ভাগ করে বিনিয়োগ করুন।
– এভাবে ঝুঁকি কমবে।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন
– ভয় বা লোভে সিদ্ধান্ত নেবেন না।
– হঠাৎ খবর বা গুজবে শেয়ার কেনা-বিক্রি করবেন না।
– সব সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করুন।
নিয়মিত শিখুন ও আপডেট থাকুন
শেয়ার বাজার প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। তাই:
– আর্থিক সংবাদ পড়ুন।
– কোম্পানির বার্ষিক রিপোর্ট দেখুন।
– নতুন বিনিয়োগ কৌশল শিখুন।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করুন
– প্রতিটি ট্রেডে **stop loss** নির্ধারণ করুন।
– মোট পোর্টফোলিওর একটি নির্দিষ্ট অংশই (যেমন ৫%-১০%) ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারে রাখুন।
– টেকনিক্যাল ভুল বা ক্ষতি মেনে নিয়ে বেরিয়ে আসুন।