গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের নিয়ম

গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের নিয়ম
গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের নিয়ম

পুরনো গাড়ি ক্রয় বিক্রয়ের সময় গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে গেলে কিছু আইনি জটিলতা দেখা দেয়। যার ফলে ক্রেতা বা বিক্রেতা কেউই এই আইনি জটিলতায় যেতে চায় না। কিন্তু আইনগতভাবে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা থাকলে অনেক ঝামেলা মুক্ত থাকা যায়।

গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের নিয়ম

 

এসব সমস্যা এড়াতে অবশ্যই গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন ও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করা উচিত।

কাগজপত্র :

রেজিস্ট্রেশন করার সময় কাগজপত্রগুলো তিন রকমের হয়। যেমন- ক্রেতা হিসেবে,বিক্রেতা হিসেবে ও ওয়ারিশ সুত্রে।

ক্রেতার যেজব কাগজপত্র লাগবে:

১. ফর্ম

গাড়ি কেনার সময় প্রথম যে কাগজটি প্রয়োজন সেটি হল টিও ফর্ম (Trasfer of Ownership) সংগ্রহ করা যা আপনি অফিস বা অনলাইন দুইভাবেই করতে পারেন। বিআরটিএ ওয়েবসাইট থেকে এই ফর্ম দুটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। টিওতে ক্রেতার স্বাক্ষর এবং টিটিওতে ক্রেতার নমুনা স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে।

২. ফি

ফর্মের পর আসে ফি। গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে আর রশিদের মূলকপি বিআরটিএ তে জমা দিতে হবে। ফি জমা দেয়ার কাজটি বিআরটিএ অফিসে গিয়ে করলে অনেক কাজ একসাথে করা সম্ভব। সকল কাগজপত্র গুছানো হয়ে গেলে ফি জমা দিতে হবে। ব্যাংকের কর্মকরতার কাছে ব্লু বুকের কপি জমা দিয়ে ফি জমা দেয়ার রশিদ নিতে হবে এবং তা অন্য কাগজপত্রের সাথে যুক্ত করতে হবে।

৩. কাগজপত্র জমা

জরুরী কাগজপত্রের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু কাগজ থাকা বাঞ্ছনীয়। যেমন-

ক্রেতার টিন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, বর্তমান ঠিকানার ফোন বা বিদ্যুৎ বিলের সত্যায়িত ফটোকপি ইত্যাদি। এসব কাগজপত্র ছাড়া কখনো কোন ধরনের গাড়ি রেজিস্ট্রেশন সম্ভব না।

৪. সত্যায়িত কাগজপত্র

ফিটনেস ও রুট পারমিট হচ্ছে গাড়ির একটি অন্যতম জরুরী বিষয়। আর এই পারমিটের জন্য মূল রেজিস্ট্রেশনের ফটোকপি, ডিজিটাল সার্টিফিকেট, নতুন ট্যাক্স টোকেনের সত্যায়িত কপি ইত্যাদি প্রদান করতে হয়।

৫. চিঠি প্রেরন

ক্রেতা যদি ব্যাক্তিগত ব্যাবহারের জন্য গাড়িটি ক্রয় করে তাহলে সাধারন ফর্ম আর ক্রেতা যদি প্রাতিষ্ঠানিক কাজে গাড়ি ব্যাবহার করে তাহলে অফিসিয়াল প্যাডে চিঠি প্রদান করতে হবে। ছবিসহ জুডিশিয়াল ফর্ম অথবা নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে হলফনামা দাখিল করতে হবে, যার মুল্য ২০০ টাকা।

৬. ব্লক লেটার

দাখিল করার সময় সবকিছু ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লিখতে হবে। নির্দিষ্ট নমুনা স্বাক্ষর ফর্মে ক্রেতার নমুনা স্বাক্ষর ও ৩ কপি রঙিন স্ট্যাম্প সাইজ ছবি প্রদান করতে হবে।

৭. সরেজমিনে উপস্থাপন

গাড়িটি কেনার আগে অবশ্যই সবকিছু দেখিয়ে নেওয়া বা দেখে নেওয়া উচিত,তাই বিআরটিএ অফিসে অবশ্যই গাড়িটি নিয়ে যেতে হবে। বিআরটিএ তে ফি জমা দেয়ার পর ১০০ নং কক্ষে কাগজপত্র দেখিয়ে একটি সাক্ষর নিতে হবে। একবার এসব কাগজপত্র নিয়ে পরিদর্শক কক্ষে গিয়ে বলতে হবে আপনি গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে চান। একজন পরিদর্শক এসে আপনার গাড়িটি দেখে একটি সিল মেরে দিবে এবং কাগজে সাইন করে দিবে।

৮.সাক্ষর গরমিল

স্বাক্ষর সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।সব জায়গায় স্বাক্ষর করার আগে ভাল ভাবে সব মিলিয়ে নিতে হবে। যার সাক্ষরে অমিল থাকবে তাকে বিআরটিএর অফিসে সশরীরে আসতে হবে। এজন্য বিক্রেতাকে সবসময় সাথে নিয়ে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করার কাজটি শেষ করা উচিৎ। এতে করে অনেক অহেতুক ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাও যদি সাক্ষর গরমিল হয় এবং বিক্রেতা উপস্থিত না থাকে তাহলে বিআরটিএ এডির রুমে গিয়ে তাকে প্রমান এবং বিক্রেতার অনুপস্থিতির কারণ দর্শাতে হবে। এবং ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে কারণ গুলো লিখে নোটারি করিয়ে জমা দিতে হবে।

বিক্রেতার যেসব কাগজপত্র লাগবে:

১. টিটিও ফর্ম

বিক্রেতা হিসেবে ফর্মে টিটিও ও বিক্রয় রশিদ অফিস থেকে সংগ্রহ করে বিক্রেতা ও রাজস্ব স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে হবে।

২. ফি

ছবিসহ একটি জুডিশিয়াল ফর্ম হচ্ছে ২০০ টাকা আর নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে হলফনামা দাখিল করতে হয়, বিক্রয় সংক্রান্ত হলেই শুধু এই প্রক্রিয়াটি হবে।

৩. সার্টিফিকেট জমা

বিক্রেতা সাধারন হলে সাধারন চিঠি কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক হলে অবশ্যই কোম্পানির হেড প্যাডে ইণ্টিমেশন, বোর্ড রেজুলেশন, অথরাইজেশনপত্র প্রদান করতে হবে।

৪. চিঠি প্রেরন

গাড়িটি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কেনা হয় তাহলে অবশ্যই সেই ঋণ আগে পরিশোধ করিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত ছারপত্র, লোন এডজাস্টমেণ্ট স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক কর্তৃক সহকারী পরিচালক বিআরটিএ বরাবর অনুরোধপত্র যার মূল্য ২০০ টাকা অথবা নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে হলফনামা দাখিল করতে হবে।

৫. জাতীয় পরিচয়পত্র

বিক্রেতাকে অবশ্যই বাংলাদেশি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের অধিকারী হতে হবে, এবং গাড়ি বিক্রির সময় তা দেখাতে হবে।

৬. সাক্ষর গরমিল

স্বাক্ষর প্রদানের সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সাক্ষরে কোন গরমিল না হ্য়।কারন যার স্বাক্ষরে গরমিল হবে তাকেই সশরীরে বিআরটিএ অফিসে এসে স্বাক্ষর দিয়ে প্রমাণ দেখাতে হবে।

ওয়ারিশদের ক্ষেত্রে দরকারি কাগজপত্র:

১. একাধিক ওয়ারিশ হলে টিন সার্টিফিকেট

গাড়িটি ব্যাক্তিগত ব্যাবহার করা হলে বা গাড়ির মালিকানায় যদি একের বেশি ওয়ারিশ থাকে তাহলে সকল ওয়ারিশদের টিন সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।

২. মুল রেজিস্ট্রেশন সনদ

ওয়ারিশদের ক্ষেত্রে মূল রেজিস্ট্রেশনের সনদ ও কপি অথবা ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।

৩. একাধিক ওয়ারিশ হলে সবার সাক্ষর

ওয়ারিশসুত্রে একাধিক ওয়ারিশ হলে একাধিক হলফনামা ও সবার ছবি সহ নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে একটি হলফ নামা প্রদান করতে হবে।

৪. সঠিক তথ্য

নমুনা স্বাক্ষর ফর্মে সব তথ্য নির্ভুল ও সঠিক হতে হবে, তানাহলে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনে অনেক ধরণের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।এখানে পিতার নাম , পূর্ণ ঠিকানা ও ৩ কপি রঙ্গিন স্ট্যাম্প সাইজ ছবি দিতে হবে।

ঠিকঠাক মতো সব কাগজ তৈরি করে গুছিয়ে নেওয়ার পর আসবে ক্রেতা ও বিক্রেতার দায় দায়িত্ব। ক্রেতা ও বিক্রেতার দায়িত্বগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিক্রেতার দায়িত্ব:

গাড়ি বিক্রির ১৪ দিনের মধ্যে বিক্রেতা যে এলাকার বাসিন্দা সে এলাকার নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে গাড়ি নিবন্ধনের ব্যাপারে জানাতে হবে এবং পাশাপাশি হস্তান্তর গ্রহিতাকেও সেই রিপোর্টের একটি কপি জমা দিতে হবে।

ক্রেতা হিসেবে দায়িত্ব:

গাড়ি ক্রয় করার ক্ষেত্রে ক্রেতার কিছু দায়িত্ব থাকে ।গাড়ি কেনার ৩০ দিনের মধ্যে ক্রেতা যে এলাকায় থাকে সে এলাকার নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি রিপোর্ট ফি সহ জমা দিবে। এবং বিক্রেতার কাছ থেকে যে সে একটি রিপোর্টের কপি পায় তাও সে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিবে তাহলে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ মালিকানা পরিবর্তনের বিষয়টি লিপিবদ্ধ করতে পারবেন।

সকল তথ্য ও কাগজপত্র দেখে যাচাই করে যদি কর্তৃপক্ষের মনে হয় যে সব কাগজপত্র মিল আছে তাহলে নিবন্ধন সার্টিফিকেটে কর্তৃপক্ষ ৩০ দিনের মধ্যে বিষয়টি লিপিবদ্ধ করবেন।আর যদি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ মূল কর্তৃপক্ষ না হন তাহলে তারা মূল নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারটি সম্পর্কে জানাবেন।

সবশেষে বলা যায় যে, গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের আইনি প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ না করলে বিভিন্ন আইনি জটিলতায় পরতে হয় ।এসব আইনি জটিলতা এড়াতে অবশ্যই গাড়ি কেনার সময় সব আইনি কাজ সম্পূর্ণ করুন আর নিশিন্ত থাকুন।