পাল্লেকেলের নিখাদ ব্যাটিং উইকেটে যখন ১৫৪ রান তুলে ইনিংস শেষ করল বাংলাদেশ, তখনই তো হারটা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল! এরপর দুই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা আর কুশল মেন্ডিসের ঝড়ে পাওয়ারপ্লেতেই যখন শ্রীলংকা তুলল ৮৩ রান, তখন তো ফলাফলটা একেবারেই পরিষ্কার হয়ে যায়।
পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ
পাওয়ারপ্লের পর লঙ্কানরা ঝিমিয়ে পড়েছিল, তাতে জয়টা পেতে একটু দেরি হলো এই যা। তবে ৭ উইকেটের দারুণ জয়টা ঠিকই তুলে নিয়েছে স্বাগতিকরা। ফলে টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজ হারের পর টি-টোয়েন্টিটাও বাজেভাবেই শুরু হলো বাংলাদেশের।
টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ফলে শুরুতেই ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা ভালোই হয় তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন ইমনের। দ্বিতীয় ওভারেই চার মেরে পারভেজ ইঙ্গিত দেন আক্রমণাত্মক মেজাজের। দুই ওপেনারের হাত ধরে পাওয়ার প্লেতে উঠে আসে ৫৩ রান, যেখানে পারভেজের অবদান সবচেয়ে বড়—১৬ বলে ৩৫ রান, ৫টি চার ও ১টি ছয়ে।
তবে এই জুটি বেশিক্ষণ টিকেনি। পঞ্চম ওভারে তানজিদ (১৭ বলে ১৬) ফিরলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। এরপর আসে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতন। লিটন দাস (১১ বলে ৬) এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন ভ্যান্ডারসের গুগলিতে। রিভিউ নিলেও ‘আম্পায়ার্স কল’ বহাল থাকে।
পারভেজ চেষ্টা করেছিলেন ইনিংস গড়ার, কিন্তু তিনিও থিকশানার বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২২ বলে ৩৮ রান করে। ৯ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬৯/৩। বাউন্ডারির খরা দেখা দেয় তখনই—২৭ বল পর মোহাম্মদ নাঈম স্লগ সুইপে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে সেই খরা কাটান।
তাওহিদ হৃদয় বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৩ বলে ১০ রান করে শানাকার বল কাট করতে গিয়ে মেন্ডিসের হাতে ধরা পড়েন। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, বাংলাদেশের রানের গতি হারিয়েছে ততই। ১৭তম ওভারে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান নাঈম শেখ। তবে তার ইনিংস খুব বড় হয়নি এরপরও। ২৯ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকেই ফেরেন তিনি।
১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে মিরাজ (২৩ বলে ২৯) কাভারে আসালঙ্কার হাতে ক্যাচ দিয়ে তিকশানার শিকার হন। তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৩৫/৫। মিরাজের বিদায়ের পর শেষদিকে ঝড় তোলেন শামীম পাটোয়ারী। ৫ বল খেলেছেন তাতেই হাঁকিয়েছেন দুটো ছক্কা। তাতেই বাংলাদেশ ইনিংস শেষ করে ১৫৪ রানের পুঁজি নিয়ে।
ব্যাটিং উইকেটে এমন পুঁজি নিয়ে ম্যাচ জিততে হলে শুরুটা ভালো হতে হতো দলের। তবে তা আর হলো কই? শ্রীলংকান দুই ওপেনার মিলে যে তাণ্ডবই বইয়ে দেন বোলারদের ওপর!
শুরুটা হয়েছিল সাইফউদ্দিনকে দিয়ে। টানা তিন চার মেরে পাথুম নিসাঙ্কা ইঙ্গিত দেন ঝড়ের। সে ওভার থেকে সাইফউদ্দিন দিয়ে যান ১৪ রান।
এরপর আক্রমণে আসা তাসকিন আহমেদ শুরুটা ভালোই করেছিলেন। তবে খেই হারিয়ে ফেললেন এরপর। একটা ছক্কাসহ হজম করে গেলেন ১৬ রান।
তৃতীয় ওভারে আসা তানজিম হাসান সাকিবও শুরুটা ভালো করেছিলেন। প্রথম তিন বল থেকে দিয়েছিলেন ২ রান। তখন পর্যন্ত লঙ্কানদের স্কোরবোর্ডটাকে বেশ সহনীয়ই মনে হচ্ছিল। ২.৩ ওভার শেষে ছিল ৩২ রান।
এরপরই নিসাঙ্কা খুনে হয়ে উঠলেন রীতিমতো। দুটো চারের পর একটা ছক্কা হাঁকালেন সাকিবকে।
ওভার বদলাল, ব্যাটার বদলাল, বোলারও বদলাল। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশের ভাগ্য বদলাল না। ওপাশ থেকে কুশল মেন্ডিস এবার সপাটে বাউন্ডারি হাঁকাতে শুরু করলেন তাসকিনের বলে। প্রথম তিন বলে দুটো ছক্কার পাশাপাশি এল একটা চার।
পরের ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজও সে ঝালটা টের পেলেন। প্রথম তিন বলে হজম করলেন দুটো ছক্কা। তবে এরপরই মিরাজের বলে লং অনে রিশাদ হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন নিসাঙ্কা। ১৬ বলে তিনি করেছেন ৪২ রান। ওদিকে শ্রীলঙ্কা তাদের ওপেনিং জুটি থেকে পেয়ে যায় ৭৮ রান, মাত্র ৪.৪ ওভারেই। পাওয়ারপ্লে শেষে রানটা দাঁড়ায় ৮৩তে।
তবে এরপর একটু যেন রয়েসয়ে খেলতে চেয়েছে শ্রীলঙ্কা। পাওয়ারপ্লেতে খুনে রূপ ধারণ করা কুশল মেন্ডিসের ব্যাটেও একটু আড়ষ্টতা ভর করল যেন। শামীম পাটোয়ারীর দারুণ ক্যাচে সাইফউদ্দিনের শিকার বনে ইনিংস শেষ করলেন যখন, তার নামের পাশে ৫১ বলে ৭৩ রান। তার আগেও লঙ্কানদের উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। রিশাদ হোসেন বিদায় করেছেন কুশল পেরেরাকে।
যদিও সেসব উইকেট শ্রীলঙ্কার রানেই বাধ দিতে পেরেছে কিছুটা, জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজটাও শুরু হলো ওই ব্যাকফুটে থেকেই।