Dragon fruit plant

ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি

ড্রাগন ফল মূলত আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল যা বর্তমানে আমাদের দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে এই ফলের বিভিন্ন জাত আনা হয়। ড্রাগন ফলের গাছ এক ধরনের ক্যাকটাস জাতীয় গাছ। এই গাছের কোন পাতা নেই। ড্রাগন ফলের গাছ সাধারনত ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

Dragon fruit plant

বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিউট (বারি) কতৃক উদ্ভাবিত ড্রগন ফলের নতুন জাতটি হলো বারি ড্রাগন ফল-১ যা দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়াতে জনপ্রিয় ফল। এ ফলের আকার বড়, পাকলে খোসার রং লাল হয়ে যায় ,শাঁস গাঢ় গোলাপী রঙের, লাল ও সাদা এবং রসালো প্রকৃতির । ফলের বীজগুলো ছোট ছোট কালো ও নরম । একটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ড্রাগন ফল পরিচিতি

ড্রাগন ফল সাধারণত তিন প্রজাতির হয়ে থাকে-

১) লাল ড্রাগন ফল বা পিটাইয়া। এর খোসার রঙ লাল ও শাঁস সাদা। এই প্রজাতির ফলই বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
২) কোস্টারিকা ড্রাগন ফল। খোসা ও শাঁস উভয়ের রঙই লাল।
৩) হলুদ রঙের ড্রাগন ফল। এই জাতের ড্রাগন ফলের খোসা হলুদ রঙের ও শাঁসের রঙ সাদা।

জাতঃ বাংলাদেশে উদ্ভাবিত জাতগুলো হলো-

বারি ড্রাগন ফল-১, বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ,বাউ ড্রাগন ফল-২ ( লাল ), বাউ ড্রাগন ফল-৩

ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ

ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত।ফলে ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিণ, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন ,ক্যালসিয়াম, আয়রন রয়েছে।

প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য ড্রাগন ফলে যে পুস্টিমান পাওয়া যায় তা দেওয়া হলো-

পানি- ৮০-৯০ গ্রাম
শর্করা- ৯-১০ গ্রাম
প্রোটিন- ০.১৫-০.৫ গ্রাম
আঁশ- ০.৩৩-০.৯০ গ্রাম
খাদ্যশক্তি- ৩৫-৫০ কিলোক্যালরি
চর্বি- ০.১০-০.৬ গ্রাম
ক্যালসিয়াম- ৬-১০ মি গ্রাম
আয়রন- ০.৩-০.৭ মি.গ্রাম
ফসফরাস- ১৬-৩৫ গ্রাম
ক্যারোটিন- (Vitamin A থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন সামান্য
ভিটামিন- বি-৩ – ০.২ – ০.৪ মি গ্রাম

ড্রাগন ফলের গুরুত্বঃ

১. ক্যারোটিন সমৃদ্ধ থাকায় চোখ ভালো রাখে।

২. আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজমে সহায়তা করে। এছাড়া আঁশ শরীরের চর্বি কমায়।

৩. এই ফলে বিদ্যমান প্রোটিন শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে।

৪. এর ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত ও দাঁত মজবুত রাখে।

৫. ভিটামিন বি-৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ত্বক মসৃণ রাখে।

৬. ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক , দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি

সুনিষ্কাশিত উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে এবং ২-৩ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিতে হবে।

রোপণ পদ্ধতি ও রোপণ সময়ঃ

সমতল ভূমিতে বর্গাকার বা ষঢ়ভূজাকার এবং পাহাড়ি ভূমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে ড্রগন ফলের কাটিং রোপণ করতে হবে। ড্রগন ফল রোপণের জন্য উপযোগী সময় হলো মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য ওক্টোবর।

বংশবিস্তারঃ

অঙ্গজ পদ্ধতি বা বীজের মাধ্যমে ড্রাগন ফলের বংশবিস্তার হয়ে থাকলেও মাতৃ গুনাগুণ বজাই রাখার জন্য অঙ্গজ পদ্ধতিতে অর্থাৎ কাটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করাই ভালো। কাটিং এর সফলতার হার প্রায় শতভাগ এবং তাড়াতাড়ি ধরে। কাটিং থেকে উৎপাদিত একটি গাছে ফল ধরতে ১২-১৮ মাস সময় লাগে। সাধারণত বয়স্ক এবং শক্ত শাখা ১ থেকে ১.৫ ফুট কেটে হালকা ছায়াতে বেলে দোআঁশ মাটিতে গোড়ার দিকের কাটা অংশ পুতে সহজেই চারা উৎপাদন করা যায়। তারপর ২০ থেকে ৩০দিন পরে কাটিং এর গোড়া থেকে শিকড় বেরিয়ে আসবে। তখন এটা মাঠে লাগানোর উপযুক্ত হবে। তবে উপযুক্ত পরিবেশে ও প্রয়োজন অনুযায়ী কাটিংকৃত কলম সরাসরি মূল জমিতে লাগানো যায়।

প্রনিং ও ট্রেনিংঃ

ড্রাগন ফল খুব দ্রুত বাড়ে এবং মোটা শাখা তৈরি করে। একটি ১ বছরের গাছ ৩০টি পর্যন্ত শাখা তৈরি করতে পারে এবং ৪ বছরের বয়সী একটি ড্রাগন ফলের গাছ ১শ’ ৩০টি পর্যন্ত প্রশাখা তৈরি করতে পারে। তবে শাখা প্রশাখা উৎপাদন উপযুক্ত ট্রেনিং ও ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১২ থেকে ১৮ মাস পর একটি গাছ ফল ধারণ করে। ফল সংগ্রহের ৪০ থেকে ৫০টি প্রধান শাখায় প্রত্যেকটি ১ বা ২টি সেকেন্ডারি শাখা অনুমোদন করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে টারসিয়ারী ও কোয়ার্টারনারী প্রশাখাকে অনুমোদন করা হয় না। ট্রেনিং এবং প্রনিং এর কার্যক্রম দিনের মধ্যে ভাগে করাই ভালো। ট্রেনিং ও প্রনিংকরার পর অবশ্যই যে কোন ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তানা হলে বিভিন্ন প্রকার রোগবালাই আক্রমণ করতে পারে।

গর্ত তৈরীও চারা রোপণঃ

১.৫ মিটার x ১.৫ মিটার x ১ মিটার আকারের গর্ত করে তা রোদে খোলা রাখতে হবে। গর্ত তৈরির ২০-২৫ দিন পর প্রতি গর্তে ২৫-৩০ কেজি পচা গোবর , ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি, ১৫০ গ্রাম জিপসাম এবং ৫০ গ্রাম জিংক সালফেট সার গর্তের মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। গর্ত ভরাটের ১০-১৫ দিন পর প্রতি গর্তে ৫০ সেমি দূরত্বে ৪ টি করে চারা সোজাভাবে মাঝখানে লাগাতে হবে। চারা রোপণের ১ মাস প থেকে ১ বছর পর্যন্ত প্রতি গর্তে ৩ মাস পর পর ১০০ গ্রাম করে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।

পরিচর্যাঃ

আগাছা অপসারণ করে নিয়মিত সেচ প্রদান এবং প্রয়োজনে চারপাশে বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ লতানো এবং ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হওয়ায় সাপোর্টের জন্য ৪ টি চারার মাঝে ১টি সিমেন্টের ৪ মিটার লম্বা খুঁটি পুততে হবে। চারা বড় হলে খড়ের বা নারিকেলের রশি দিয়ে বেধে দিতে হবে যাতে কাণ্ড বের হলে খুতিকে আঁকড়ে ধরে গাছ সহজেই বাড়তে পারে। প্রতিটি খুঁটির মাথাই একটি করে মটর সাইকেলের পুরাতন টায়ার মোটা তারের সাহায্যে আটকিয়ে দিতে হবে। তারপর গাছের মাথা ও অন্যন্য ডগা টায়ারের ভিতর দিতে বাইরের দিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে। কেননা এভাবে ঝুলন্ত ডগাই ফল বেশি ধরে ।

সার প্রয়োগঃ

গাছের বয়স বাড়ার সাথে নিম্নলিখিতভাবে সার দিতে হবে-

গাছের বয়সমাদা প্রতি সারের পরিমাণ/বছর
     
 গোবর সার (কেজি)ইউরিয়া(গ্রাম)টিএসপি (গ্রাম)এমওপি (গ্রাম)
১-৩ বছর৪০-৫০৩০০২৫০২৫০
৩-৬ বছর৫০-৬০৩৫০৩০০৩০০
৬-৯ বছর৬০-৭০৪০০৩৫০৩৫০
১০ বছের ঊর্ধে৭০-৮০৫০০৫০০৫০০
Dragon fruit plant

সেচ ব্যবস্থাপনাঃ

ড্রাগন ফল খরা ও জলাবর্ধতা সয্য করতে পারে না। তাই শুস্ক মৌশুমে ১০-১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।এছাড়া ফলন্ত গাছে ৩ বার অর্থাৎ ফুল ফোটা অবস্থায় একবার, ফল মটর দানা অবস্থায় একবার এবং ১৫ দিন পর আরেকবার সেচ দিতে হবে।

রোগ ও বালাই ব্যবস্থাপনাঃ

ফলে রোগ বালাই খুবই একটা চোখে পড়ে না। তাবে কখনো কখনো এ গাছে মূলপঁচা, কান্ড ও গোড়া পঁচা রোগ দেখা যায়।

মূলপচা:

গোড়ায় অতিরিক্ত পানি জমে গেলে মূল পঁচে যায়। এ রোগ হলে মাটির ভিতরে গাছের মূল একটি দুটি করে পঁচতে পঁচতে গাছের সমস্ত মূল পঁচে যায়। গাছকে উপরের দিকে টান দিলে মূল ছাড়া শুধু কান্ড উঠে আসে। তবে এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে উঁচু জমিতে এ ফলের চাষ করা ভালো। এ রোগটি Fusarium sp দ্বারা সংঘটিত হয়।

কাণ্ড ও গোড়া পচা রোগ:

ছত্রাক অথবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগ হলে গাছের কাণ্ডে প্রথমে হলুদ রং এবং পরে কালো রং ধারণ করে এবং পরবর্তীতে ঐ অংশে পঁচন শুরু হয় এবং পঁচার পরিমাণ বাড়তে থাকে। এ রোগ দমনের জন্য যে কোন ছত্রাকনাশক (বেভিস্টিন, রিডোমিল, থিওভিট ইত্যাদি) ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করে সহজেই দমন করা যায়।

পোকা মাকড়ঃ

ড্রাগন ফলের জন্য ক্ষতিকর পোকা মাকড় খুব একটা চোখে পড়ে না, তবে মাঝে মাঝে এফিড ও মিলি বাগের আক্রমণ দেখা যায়। এফিডের বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাছের কচি শাখা ও পাতার রস চুষে খায়, ফলে আক্রান্ত গাছের কচি শাখা ও ডগার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায় ও গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে। এ পোকা ডগার উপর আঠালো রসের মতো মল ত্যাগ করে ফলে শুটিমোল্ড নামক কালো ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয়। এতে গাছের খাদ্য তৈরি ব্যাহত হয়। এতে ফুল ও ফল ধারণ কমে যায়। এ পোকা দমনে সুমিথিয়ন/ডেসিস/ম্যালাথিয়ন এসব কীটনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলিলিটার বা ৫ কাপ ভালো ভাবে মিশিয়ে স্প্রে করে সহজেই এ রোগ দমন করা যায়।

ড্রাগন ফল সংগ্রহ

ড্রাগন ফলের কাটিং থেকে চারা রোপনের পর ১ থেকে ১.৫ বছর বয়সের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল যখন সম্পূর্ণ লাল রঙ ধারণ করে তখন সংগ্রহ করতে হবে। গাছে ফুল ফোঁটার মাত্র ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। বছরে ৫-৬টি পর্যায়ে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রথমত জুন-অক্টোবর, দ্বিতীয় ডিসেম্বর-জানুয়ারি।

6 Comments

  • abrir uma conta na binance

    7 months ago / September 30, 2024 @ 12:12 pm

    Thank you for your sharing. I am worried that I lack creative ideas. It is your article that makes me full of hope. Thank you. But, I have a question, can you help me?

  • Registrera dig

    7 months ago / September 27, 2024 @ 8:33 am

    Can you be more specific about the content of your article? After reading it, I still have some doubts. Hope you can help me.

  • Create Personal Account

    7 months ago / September 9, 2024 @ 10:13 pm

    Your point of view caught my eye and was very interesting. Thanks. I have a question for you.

  • Binance Buksan ang Account

    1 year ago / March 9, 2024 @ 10:45 pm

    Thank you for your sharing. I am worried that I lack creative ideas. It is your article that makes me full of hope. Thank you. But, I have a question, can you help me?

  • Binance

    1 year ago / March 3, 2024 @ 11:25 am

    Thank you for your sharing. I am worried that I lack creative ideas. It is your article that makes me full of hope. Thank you. But, I have a question, can you help me? https://accounts.binance.com/zh-CN/register-person?ref=PORL8W0Z

  • nimabi

    1 year ago / November 23, 2023 @ 6:14 pm

    Thank you very much for sharing, I learned a lot from your article. Very cool. Thanks. nimabi

Leave a Comment

Leave a Reply