আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পাসপোর্টটি সচল রাখতে রিনিউ করতে হয়।পাসপোর্ট কিভাবে সহজে নবায়ন করতে হবে তা বিস্তারিত নিচে তুলে ধরে হল।
Epassport renew
পাসপোর্ট নবায়ন কিংবা রিনিউ করতে চাইলে অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়মে আবেদন করতে হবে। দালাল ছাড়া নিজেই অনলাইনে আবেদন করে স্বল্প খরচে Epassport renew করতে পারেন।
পাসপোর্ট রিনিউ এবং নতুন পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া প্রায় একই। যেহেতু ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশে ই পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হয়েছে। এবং পাসপোর্ট এর মেয়াদকাল সর্বনিম্ন ৫ বছর। তাই রিনিউ করার উপযুক্ত পাসপোর্ট গুলো সাধারণত MRP পাসপোর্টই হবে। এক্ষেত্রে আপনার পূর্ববর্তী এমআরপি পাসপোর্টের তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে। তাই সঠিকভাবে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়মটি বিস্তারিত জেনে নিন এখানে।
অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম
বাংলাদেশি পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য, পুনরায় নতুন পাসপোর্টের মতো আবেদন করতে হবে। আবেদন করার জন্য সর্বপ্রথম epassport.gov.bd -এই লিংকে ভিজিট করুন। এবার “Apply Online for e-Passport/ Re-Issue” অপশনে ক্লিক করুন।
তারপর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্বাচন করুন। তারপর ইমেইল এড্রেস দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলুন। তারপর ধারাবাহিকভাবে পাসপোর্ট আবেদন সম্পন্ন করুন।
তবে ভিন্নতা হলো, আবেদনের ক্ষেত্রে ID Documents অপশনে কিছুটা ব্যতিক্রম তথ্য দিতে হবে। এখানে আপনার পূর্ববর্তী MRP পাসপোর্টের তথ্য উল্লেখ করতে হবে। কিভাবে সেই তথ্যগুলো পূরণ করবেন তা ছবিসহ নিচে দেখানো হলো:
ধাপ ১: e-Passport Portal – এ আবেদন:
অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন শুরু করুন। ওয়েবসাইটে ধারাবাহিকভাবে, অ্যাকাউন্ট খুলে ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানার তথ্য পূরণ করুন।
ধাপ ২: ID Documents অপশনে তথ্য পূরণ:
এই ধাপে, ID Documents অপশন দেখতে পাবেন। এখানেই আপনার পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর তথ্য দিতে হবে। আগের এমআরপি পাসপোর্টের তথ্য দেওয়ার জন্য প্রথমে Yes, I have a Machine Readable Passport (MRP) – অপশনে ক্লিক করুন।
এবার, What is the reason for your passport request? -এই লেখাটি দেখতে পাবেন। নিজের ঘরের Arrow চিহ্নতে ক্লিক করুন। তারপর আপনার পাসপোর্ট রিনিউ করার কারণ সিলেক্ট করে দিন। এখানে:-
- মেয়াদ শেষ হলে- EXPIRED।
- হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে- LOST/ STOLEN।
- তথ্য সংশোধন করতে চাইলে- DATA CHANGE।
- পাসপোর্ট নষ্ট হলে বা ছিড়ে গেলে- UNUSABLE।
- অন্যান্য কারন থাকলে- OTHER।
এসকল অপশন গুলো পাবেন। এখান থেকে আপনার জন্য সঠিক কারণটি নির্বাচন করুন।
ধাপ ৩: পুরাতন/ MRP পাসপোর্টের নম্বর ও তথ্যাবলী:
ID Documents অপশনের নিচের দিকে Previous Passport Number অপশন পাবেন। একইসাথে, Select date of issue এবং Select date of expiration -এই তিনটি ঘর থাকে। এখানে-
- Previous Passport Number অপশনে আপনার পূর্বের MRP পাসপোর্টের নাম্বার লিখুন।
- Select date of issue – পূর্ববর্তী পাসপোর্ট ইস্যুর তারিখ লিখুন।
- Select date of expiration – পূর্ববর্তী পাসপোর্ট মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লিখুন।
এ সকল তথ্যাবলী পাসপোর্টের তথ্য পেজে দেখতে পাবেন।
ধাপ ৪: অন্যান্য তথ্য পূরণ ও আবেদন সাবমিট:
ID Documents অপশন সম্পন্ন হলে, বাকি ধাপগুলো পাসপোর্ট আবেদনের মতোই সম্পন্ন করুন। এখানে পিতা-মাতা ও অভিভাবকের তথ্য দিন। তারপর স্বামী বা স্ত্রীর তথ্য দিন। তারপর পাসপোর্টের ধরণ ও ডেলিভারীর ধরণ সিলেক্ট করে আবেদটি সম্পন্ন করুন।
আবেদনের প্রিন্ট কপি সংরক্ষণ করুন। পাশাপাশি অন্যান্য কাগজপত্র ও ফি দিন। Lastly, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন।
সঠিকভাবে পাসপোর্ট হাতে পেতে, অনলাইনে আবেদন ফরম পূরন করতে হবে। তারপর নিচের কার্যক্রম গুলো ধারাবাহিকভাবে করতে হবেঃ
- অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ আবেদন সাবমিট।
- আপনার অনলাইন আবেদন ফরমটি A4 কাগজে প্রিন্টআউড করে নিয়ে যেতে হবে।
- এ-চালান এর মাধ্যমে পাসপোর্ট রিনিউ ফি পরিশোধ।
- পাসপোর্ট রিনিউয়ের জন্য লিখিত আবেদন পূরণ।
- অনেক সময় পাসপোর্টের কোন তথ্য পরিবর্তন করতে হতে পারে। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্টের তথ্য সংশোধনের অঙ্গীকারনামা সংগ্রহ করতে হবে। তারপর যথাযথভাবে পূরণ ও স্বাক্ষর করে আবেদনের জন্য প্রস্তুতকরন।
- পূর্ববর্তী পাসপোর্টের কপিসহ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে পাসপোর্টের কোন তথ্য পরিবর্তন করলে, আবেদনের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস লাগবে।
- এছাড়াও পাসপোর্টের তথ্য সংশোধন ফরম, পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গীকারনামা ইত্যাদি কাগজপত্র একত্রে জমা দিতে হবে।
- পাসপোর্ট হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলে তার জিডির কপি সাথে নিতে হবে।
- পাসপোর্ট অফিসে অবশ্যই বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হবে।
- তারপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগুলো যাচাই-বাছাই করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করা হবে। পরবর্তীতে এগুলো পাসপোর্ট হাই কমিশনে পাঠানো হবে।
- সবকিছু সঠিক থাকলে খুব শীঘ্রই নবায়ন করা নতুন পাসপোর্টটি পাসপোর্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
এমআরপি থেকে ই পাসপোর্টে রিনিউ করার নিয়মঃ
আপনার একটি এমআরপি পাসপোর্ট থাকলে এবং তার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলে, এটি রিনিউ করে ই পাসপোর্ট পেতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে এক্ষেত্রে পাসপোর্ট রিনিউ করার আবেদন করতে হবে না।
উপরোক্ত নিয়ম অনুসরণ করেই নতুনভাবে আবেদন করতে হবে। আবেদনের ক্ষেত্রে ID Documents অপশন থেকে আপনার পূর্ববর্তী MRP পাসপোর্টের তথ্য দিলেই হবে।
বিদেশে থেকে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়মঃ
বাংলাদেশের প্রায় এক কোটিরও বেশি মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। প্রয়োজনের তাগিদে অনেকেই দীর্ঘদিন যাবত বিদেশে রয়েছে। সেখানে থাকা অবস্থায় অনেকেরই পাসপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
কারো কারো পাসপোর্ট হারিয়ে যায়। এছাড়াও অনেকে আবার বিদেশে কর্মসংস্থানে পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতায় পড়ে। তাই বিদেশে থাকা অবস্থাতেই বাংলাদেশী দূতাবাসে পাসপোর্ট রিনিউয়ের জন্য আবেদন করা যায়।
বিদেশ থেকে পাসপোর্ট রিনিউ করতে চাইলে উপরোক্তভাবে একই নিয়মে আবেদন করতে হবে। প্রথমে, epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। তারপর সম্পূর্ণভাবে আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন। আবেদনের সময় ID Documents অপশন থেকে পূর্ববর্তী পাসপোর্ট সিলেক্ট করুন। এবার পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর তথ্য দিন। তারপর অনলাইন আবেদনের বাকি কার্যক্রম গুলো সম্পন্ন করুন।
আবেদন পত্রের প্রিন্ট কপি, পাসপোর্ট ফি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন। নিজস্ব সময়ের মধ্যে আপনার নবায়নকৃত পাসপোর্ট বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে হাতে পাবেন।
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে
নতুন পাসপোর্ট আবেদন এবং পাসপোর্ট রিনিউ করতে একই রকম ডকুমেন্ট লাগে। শুধুমাত্র পুরাতন পাসপোর্ট এর ফটোকপি দিতে হয়।
পাসপোর্ট নবায়ন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে, তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
- অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন ফরমের Summary এর রঙিন কপি। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফরম বা আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র/ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য পেজের ফটোকপি।
- পাসপোর্ট ফি প্রদানের রশিদ/ এ চালান/ মানি অর্ডার/ ব্যাংক সার্টিফাইড চেকবুক।
- আবেদনকারীর পেশা প্রমানের ডকুমেন্টস।
- সরকারি চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রে GO or NOC প্রযোজ্য। (যদি থাকে)
- কোন তথ্য সংশোধন করতে চাইলে, তার জন্য উপযুক্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
পাসপোর্ট রিনিউ ফি
Passport renew করতে নতুন পাসপোর্ট করার সমান ফি দিতে হয়। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট মেয়াদকাল, পৃষ্ঠা সংখ্যা ও ডেলিভারি অপশনের উপর নির্ভর করে। বর্তমানে ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট রিনিউ ফি ৪,০২৫ টাকা। ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট রিনিউ ফি ৬,৩২৫ টাকা।
অন্যদিকে, ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট রিনিউ ফি ৫,৭৫০ টাকা। ১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট রিনিউ ফি ৮,০৫০ টাকা। পাসপোর্ট নবায়ন ফি এর সম্পূর্ণ তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
ই পাসপোর্ট রিনিউ ফি (E Passport Reissue Fee)
ডেলিভারির ধরন | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৬৪ পৃষ্ঠা |
৫ বছর | ১০ বছর | ৫ বছর | ১০ বছর | |
রেগুলার ডেলিভারি | ৪,০২৫ টাকা | ৫,৭৫০ টাকা | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,০৫০ টাকা |
এক্সপ্রেস ডেলিভারি | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,০৫০ টাকা | ৮,৬২৫ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা |
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি | ৮,৬২৫ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা | ১২,০৭৫ টাকা | ১৩,৮০০ টাকা |
পাসপোর্ট রিনিউ করে কি কি তথ্য সংশোধন করা যায়
সাধারণত পাসপোর্টে ব্যক্তির পরিচয়বাচক তথ্যগুলো পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে সংশোধনের আবেদন করে উপযুক্ত ডকুমেন্টস থাকলে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো পরিবর্তন করা যায়ঃ
- জন্ম তারিখ।
- নিজের নাম বাংলায়।
- নিজের নাম ইংরেজিতে।
- পিতার নাম (ভোটার আইডি কার্ড আনুসারে)।
- মাতার নাম (ভোটার আইডি কার্ড আনুসারে)।
- পেশা।
- অন্যান্য তথ্যাদি।
পূর্বের পাসপোর্টে ভূল তথ্য লিপিবদ্ধ হয়ে থাকলে, সেটা সহজেই পরিবর্তনযোগ্য। তবে আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা পেতে অবশ্যই উপযুক্ত প্রমাণাদি জমা দিতে হবে।
উপরোক্ত ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়মে আপনার নতুন পাসপোর্টটি সংগ্রহ করতে পারেন। অনেকেই দালালের শরণাপন্ন হয়। এক্ষেত্রে দালালরা প্রায় দ্বিগুণ টাকা রাখে। তাই প্রতারণা থেকে বাঁচতে নিজে নিজে অনলাইনে E Passport Renew/ Re-Issue আবেদন করুন।