ফেসবুক থেকে আয় করার সহজ উপায়
ফেসবুক থেকে টাকা আয় করা যায় এই কথাটি এখন আর গুজব নয়। ফেসবুক হলো সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিদিন গড়ে ১.৪৯ বিলিয়ন লোক ফেসবুক ব্যবহার করে।ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার অনেকগুলো উপায় রয়েছে। আপনি চেষ্টা করলে আপনার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটির মাধ্যমেই ফেসবুক থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
How to earn from Facebook
আজকের পোস্টে আমরা ফেসবুক থেকে আয় করার উপায়গুলো পয়েন্ট আকারে আলোচনা করব। ফেসবুক থেকে আয়ের বিষয়ে আপনার কোন ধারনা না থাকলে আজকের পোস্টটি পড়ার পর বিস্তারিত জেনে যাবেন।
১. ফেসবুক ভিডিও থেকে আয়ঃ
ফেসবুকে ভিডিও এবং লাইভ করে টাকা আয় করা যায়। ফেসবুকে টাকা আয় করার এই সুবিধাকে বলা হয় Facebook Ads Break। অর্থাৎ আপনার ভিডিওতে ফেসবুক অ্যাড দেখাবে, সেই অ্যাড থেকে আয়ের কিছু অংশ আপনাকে দিবে। এই সুবিধাটি পেতে হলে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রথমত আপনার পেইজ-টি তাদের কাছে মনোনীত হতে হবে। এক্ষেত্রে শর্তসূমহ হলো:-
আপনার ফেসবুক পেজে ১০,০০০ হাজার ফলোয়ার থাকতে হবে।
শেষ ৬০ দিনে ১৫,০০০ হাজার মানুষের নিকট আপনার পোস্ট/ভিডিও পৌছাতে হবে।
শেষ ৬০ দিনে আপনার ফেসবুক পেজের ভিডিওতে কমপক্ষে ৩০,০০০ হাজার ভিউস থাকতে হবে এবং প্রত্যেকটি ভিউ কমপক্ষে ১ মিনিটের হতে হবে। তাছাড়া আপনার প্রত্যেকটি ভিডিও কমপক্ষে ৩ মিনিট লম্বা হতে হবে। কারণ ৩ মিনিটের ছোট ভিডিওতে ফেসবুক বিজ্ঞাপন দেখায় না।
আপনার বয়স অবশ্যই কপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
ফেসবুক এর Partner Monetization Policies মেনে ভিডিও তৈরি করতে হবে।
এছাড়া লাইভ ভিডিও করে টাকা আয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে লাইভ ভিডিওর শর্তসমূহ হলো:-
ভিডিও ৪ মিনিটের বেশী হতে হবে।
কমপক্ষে ৩,০০ জন ভিডিওটি দেখতে হবে।
২. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়ঃ-
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো অন্যের পণ্য আপনি প্রচার করবেন এবং আপনার প্রচারে যদি কোন পণ্য বিক্রয় হয় তবে তার একটি অংশ আপনি পাবেন। মজার ব্যাপার হলো এই কাজটি আপনি খুব সহজে একটি ফেসবুক পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে ঘরে বসে করতে পারবেন।
অনলাইনে প্রোডাক্ট বিক্রি বলতে এখন শুধুমাত্র ডিজিটাল প্রোডাক্টকে না বুঝিয়ে সব ধরনের প্রোডাক্টকে বুঝায়। আপনি নিশ্চয় দেখে থাকেন যে, Amazone, eBay, Daraz, BD Shop এর মত আরো বিভিন্ন ধরনের অনলাইন মার্কেট থেকে মানুষ এখনও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করে থাকে। আপনি চাইলে এ ধরনের মার্কেটপ্লেসগুলোতে একটি একাউন্ট খুলে খুব সহজে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য প্রথমে আপনি Amazone, eBay, Daraz, BD Shop সহ অন্যান্য ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস গুলোতে একাউন্ট খুলে নিবেন। তারপর ঐ ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস গুলোর প্রোডাক্ট হতে আপনার পছন্দমত বিভিন্ন পন্যের রেফারাল লিংক তৈরি করে সেটি ফেসবুক পেজ বা গ্রুপে শেয়ার করবেন।
আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করে যখন কেউ সেই পন্য কিনবেন তখন পন্যটির দাম হতে শতকরা হিসেবে আপনাকে কিছু টাকা দেওয়া হবে। এভাবে আপনি যত বেশি পন্য সেল করে দিতে পারবেন আপনি তত বেশি টাকা আয় করতে পারবেন। সাধারণত ফেসবুকে যাদের প্রচুর পরিমানে ফলোয়ার আছে তারা এই কাজটি খুব সহজে করতে পারে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট হলো Amazone।
৩. ফেসবুকে পন্য বিক্রি করে আয়ঃ
আমাদের মধ্যে অনেকেই কমবেশি ব্যবসা করে। এর মধ্যে অনেকের ই-কমার্স ব্যবসায়ের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইট তৈরি কিংবা এর প্রচার প্রসারে প্রচুর অর্থ খরচের ভয়ে অনেকে কাজ শুরু করতে পারছেন না। অনলাইন মার্কেটিং এর কাজটি ফেসবুক অনেকাংশে সহজ করে দিয়েছে।
আপনার যেকোন ধরনের ছোট-খাটো ব্যবসা থাকলে খুব সহজে সেই পণ্যগুলোর ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে আপনার পন্য ক্রেতাদের হাতে পৌছে দিতে পারেন। আপনার ফেসবুক পেজ বা গ্রুপে লাইক বেশি থাকলে লোকজন আপনার প্রোডাক্টগুলো দেখতে পাবে এবং কেউ কেউ সেটি কিনতে অবশ্যই আগ্রহ দেখাবে।
আপনি যদি সততার সাথে পন্য ডেলিভারি দেন, তাহলে প্রশংসা শুনে আরো হাজারো লোক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আপনার প্রোডাক্ট কিনার জন্য আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। আর এভাবে আপনি খুবই সহজে এমনকি ঘরে বসে ফেইসবুক থেকে আয় করতে পারবেন।
৪. ফেসবুক গ্রুপ থেকে টাকা আয়ঃ
অনলাইনে পন্য বেচা-কেনার ক্ষেত্রে ফেসবুক গ্রুপ আরো অধিক জনপ্রিয়। ফেসবুকে এমন হাজারো গ্রুপ আছে যেখানে লক্ষ লক্ষ মেম্বার রয়েছে। আপনার কোন ব্লগ থাকলে ব্লগের পোস্ট বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করে আপনার ব্লগের আয় সহজে বাড়িয়ে নিতে পারেন।
তাছাড়া ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটার গ্রুপ রয়েছে। আপনি সেই গ্রুপগুলোতে জয়েন করে আপনার প্রডাক্ট বিক্রি করে ফেসবুক থেকে আয় করে নিতে পারেন।
তাছাড়া যদি আপনার নিজস্ব একটি বড় ধরনের গ্রুপ থেকে থাকে, তাহলে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-সিস্টেমটি প্রয়োগ করে টাকা আয় করতে পারবেন।
৫. ফেসবুক লাইক বিক্রি করে আয়ঃ
আপনার কাছে যখন জনপ্রিয় একটি ফেসবুক পেজ থাকবে এবং আপনার পেইজে প্রচুর পরিমানে ফলোয়ার থাকবে, তখন বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটার বা কোম্পানি আপনাকে তাদের পেজে লাইক বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বা কোনো ইভেন্ট প্রচার করা কিংবা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের পোস্ট শেয়ার করে সেটা মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য অফার করবে।
তখন আপনি তাদের নিকট হতে ভাল অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের ফেসবুক পেজ কিংবা ওয়েবসাইটের পোস্ট আপনার ফেসবুক পেজে শেয়ার করার মাধ্যমে ক্লাইন্টের নিকট থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
যদিও ফেসবুকে লাইক বিক্রি করাটা একটি বিতর্কিত বিষয় কিন্তু তারপরেও অনেকেই ফেসবুকে লাইক এনে দিলে টাকা দিয়ে থাকে। ফাইভারার মার্কেট-প্লেসে এরকম অনেক অফার দেখা যায়। সাধারণত বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটারগণ ১,০০০ লাইকের বিনিময়ে ৫০০-৭০০ টাকা নিয়ে থাকেন। যাদের ফেসবুক পেজে ভাল পরিমানে ফলোয়ার আছে, তাদের ক্ষেত্রে ১,০০০ লাইক পাইয়ে দেওয়া সামান্য কিছু সময়ের ব্যাপার।
৬. ব্লগ বা ওয়েবসাইটের প্রচার করে আয়ঃ-
যদি আপনার একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকে এবং সেখান থেকে টাকা আয় করে থাকেন বা আয় করতে ইচ্ছুক থাকেন। তাহলে সেই টাকা আয়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম এই ফেসবুক। কেননা এর মাধ্যমে আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট প্রচার করলে খুব ভাল মানের ভিজিটর পাবেন।
আপনি আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের কনটেন্টগুলো ফেইসবুক পেজ বা গ্রুপে শেয়ার করতে পারেন। অনেকেই আগ্রহী হয়ে সেই লিংক বা কনটেন্টে ক্লিক করে ভিজিট করবে। তাছাড়া যদি আপনার ই-কমার্স সাইট থাকে তাহলে আপনার পণ্য বিক্রির অন্যতম সহজ মাধ্যম হবে এটি।
৭. শর্ট লিংক শেয়ার করে আয়ঃ
URL বা লিংকে ক্লিক করার মাধ্যমেই আমরা যেকোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারি। মজার ব্যাপার হলো এই লিংকে ক্লিক করানোর মাধ্যমে টাকা আয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আপনার কাজ হলো শর্ট লিংকে টাকা প্রদানকারী ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা। তারপর সে-সকল সাইট থেকে প্রয়োজনীয় লিংক শর্ট করে আপনার পেজ বা গ্রুপে পোস্ট বা শেয়ার করা।
বর্তমানে জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট হলো:-
shorte.ST
Adf.LY
Ouo.IO
ShrinkMe.IO
Shortzon.COM
মনে করুন, আপনি একটি শর্ট ফিল্ম ডাউনলোড লিংক শেয়ার করতে চাচ্ছেন। এখন সেটাকে শর্টেন সাইট থেকে শর্ট করে ফেসবুকে প্রচার করলেন। এখন কেউ যদি এই লিংকে ক্লিক করে তাহলে আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়ে যাবে।
৮. ফ্রিল্যান্সিং করে ফেসবুক থেকে আয়ঃ
ফ্রিল্যান্সিং জব পাওয়ার জন্য ফেসবুকে নির্দিষ্ট কিছু ভালোমানের গ্রুপ আছে। আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয় নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং করে ফেসবুক থেকে আয় করতে পারেন। যেমন: ফ্রিল্যান্স রাইটিং, ফ্রিল্যান্স ডিজাইনিং, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি, ফ্রিল্যান্সিং সোশাল মিডিয়া ইত্যাদি। তবে গ্রুপ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এক্টিভ গ্রুপগুলো নির্বাচন করে নিতে হবে। সাধারণত কোন গ্রুপগুলো ভালো সেটা আপনি দেখলে নিজেই বুঝতে পারবেন।
৯. ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে আয়ঃ
অনলাইন বিজ্ঞাপন বা ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ফেসবুক বিজ্ঞাপন বর্তমানে অনেকটাই জনপ্রিয়। আপনি চাইলে ফেসবুকে বিভিন্ন জিনিসের বিজ্ঞাপন দিয়ে আপনার যেকোনো পণ্য বিক্রি করে অনলাইন থেকে আয় করতে পারেন।
মনে করুন, আপনার একটি মোবাইল ফোন বা যেকোনো পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে আপনি খুব সহজে অল্প কিছু টাকা খরছ করে ফেসবুকে পন্যটির বিজ্ঞাপন দিয়ে সেটি খুবই সহজে বিক্রি করতে পারেন।
১০. একাউন্ট পরিচালনা করে আয়ঃ
অনেক সময় বিখ্যাত ব্যক্তি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ বা একাউন্ট পরিচালনা করলে অর্থ প্রদান করে থাকে। এই কাজগুলো ঘরে বসেও করা সম্ভব। যদি আপনি ফেইসবুক পরিচালনায় অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন তাহলে, আপনার এই অভিজ্ঞতা-কে এ ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই ফেসবুক থেকে টাকা আয় করতে পারেন।
১১. পেইজ বিক্রি করে আয়ঃ
অনলাইন মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ফেসবুক পেজের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আপনার কাছে ভালোমানের ফেসবুক পেজ থাকলে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানির কাছে আপনার ফেসবুক পেজটি বিক্রি করে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করতে পারেন। সাধারণ এক লক্ষ Like থাকা একটি ফেসবুক পেজ এক লক্ষ টাকার চাইতে অধিক দামে বিক্রি করা যায়।
যদি এই বিষয়ে আপনার ভালো ধারণা থাকে তবে আপনি অল্প দিনে ভালো মানের পেইজ তৈরি করতে পারবেন। এবং সেটি বিক্রি করে টাকা আয় করতে পারেন।
র্সবশেষ বলব পৃথিবীতে কোন কাজ সহজ নয়। বরং কাজ করতে করতে তা সহজ হয়ে যায়। তাই আপনার যদি ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ইচ্ছা থাকে তাহলে বসে না থেকে আজই শুরু করে দিতে পারেন।