মুখের ব্রণ দূর করার উপায়

মুখে ব্রণ হওয়াটা খুবই সাধারণ একটা সমস্যা। কিন্তু যখন এই সমস্যা হয়, তখন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বয়ঃসন্ধির সময় তো বটেই নানা বয়সেই এই সমস্যা হতে পারে। লোমকূপের তলায় তৈলনিঃসরণ গ্রন্থি এবং মৃত কোষের জুগলবন্দিতে এই সমস্যা হয়। এই সমস্যা থেকে আমরা খুব সহজেই উত্তরণ হতে পারি।

মুখের ব্রণ দূর করার উপায়

How to get rid of acne scars
মুখের ব্রণ দূর করার উপায়

চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি।

১। গ্রীষ্মকালে যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদের ব্রণের সমস্যা বেশি হয়। তৈলাক্ত ত্বকের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে মুখে মুলতানি মাটি পানি দিয়ে পেস্ট করে লাগাতে হবে। মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে নেই, ফলে ব্রন উঠা কমে যায়।

২। শশার রস তৈলাক্ততা দূর করতে খুবই উপকারি। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে শশার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে তৈলাক্ত ভাব একদম কমে যায়।

৩। আবার শসাকে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে শসার সাথে চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিতে হবে। যাদের মধুতে অ্যালার্জি নেই, তারা এই মিশ্রণে সামান্য মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন। সপ্তাহে দুই দিন এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার হবে। ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর হয়ে যাবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, ব্রণ থাকলে স্ক্রাব করা যাবে না।

৪। কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো ব্রণের জন্য খুবই উপকারি দুটো উপাদান। একইপরিমাণ কাঁচা হলুদ বাটা এবং চন্দন কাঠের গুঁড়ো একত্রে নিয়ে এতে পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে নিতে হবে। এবার মিশ্রণটি ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে রাখতে হবে কিছুক্ষণ। তারপর শুকিয়ে গেলে মুখঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি শুধুমাত্র ব্রণ দূর করার কাজ করে না বরং ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।

৫। আপেল এবং মধুর পেষ্ট ব্রণের দাগ দূর করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া উপায়। প্রথমে আপেলের পেষ্ট তৈরি করে তাতে ৪-৬ ফোঁটা মধু মিশাতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে এরপর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বকের টানটান ভাব দূর করে। সপ্তাহে ৫-৬ বার এটি ব্যবহার করবেন। কয়েকদিনের মধ্যে পরিবর্তনটা অনুভব করতে পারবেন।

৬। ব্রণের সমাধানের জন্য তুলসি পাতার রস খুব উপকারী। কারণ তুলসি পাতায় রয়েছে আয়ূরবেদিক গুণ। শুধুমাত্র তুলসি পাতার রস ব্রনের স্থানে লাগিয়ে রেখে, শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

৭। প্রথমে চন্দন কাঠের গুড়োঁর সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করতে হবে। এরপর এতে ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশাতে হবে। গোলাপজল অনেকের ত্বকের সাথে এডজাষ্ট হয় না। তারা সেই ক্ষেত্রে গোলাপ জলের পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণ আপনার ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে ৩-৪দিন ব্যবহার করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

৮। গোলাপজলের নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ কমে যায়। দারুচিনি গুঁড়ার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ব্রণের ওপর লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সংক্রমণ, চুলকানি এবং ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।

৯। এছাড়া রাতে শোয়ার আগে ডিমের সাদা অংশ ব্রনের স্থানে ম্যাসেজ করে সারারাত রাখতে হবে। এটি আপনার ত্বকের খসখসে ভাব দূর করবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি এর সাথে লেবুর রস যোগ করা যায়। লেবুর রস দিলে এটি আধ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলবেন।

১০। কমলা লেবুর খোসা শুকিয়ে মিক্সিতে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এবার মসুরির ডাল আর চাল ভিজিয়ে ভালো করে পিষে নিতে হবে। ঐ পেস্টের মধ্যে চন্দন পাউডার, মুলতানি মাটি, কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মিলিয়ে নিয়ে। চাইলে এই মিশ্রণের মধ্যে দুই চামচ দুধও মিশিয়ে নিতে পারেন। এবার মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটা নিয়মিত মুখে লাগাতে হবে। ত্বকের উজ্জ্বলভাব বাড়বে। ব্রণের দাগও দূর হয়ে যাবে।

১১। ব্রণ হবার একটি অন্যতম কারণ হলো অপরিষ্কার ত্বক। তাই ত্বক রাখতে হবে পরিষ্কার। নিয়মিত স্ক্রাবিং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এক কাপ পাকা পেঁপে চটকে নিয়ে । এর সাথে মেশাতে হবে এক টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চালের গুঁড়ো। মিশ্রণটি মুখসহ পুরো শরীরে লাগিয়ে। ২০-২৫ মিনিট ম্যাসাজ করে গোসল করতে হবে। পেঁপে ছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন ঘৃতকুমারীর রস।

১২। চার-পাঁচটা নিম পাতা ভালো করে ধুয়ে পিষে নিতে হবে। এর মধ্যে এক চামচ মুলতানি মাটি, অল্প গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে হবে। প্যাকটা যদি গাঢ় হয়ে যায় তাহলে এর মধ্যে গোলাপ জল মিশিয়ে নিলে ভাল হবে। মুখে লাগিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে। প্যাকটা মুখে শুকিয়ে গেলে হালকা পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলতে হবে।

১৩। অতিরিক্ত গরমের কারণে ত্বকে যেসব ফুসকুড়ি এবং ব্রণ হয় সেগুলো দূর করতেও পুদিনা পাতা উপকারী। টাটকা পুদিনা পাতা বেটে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রেখে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে।

How to get rid of acne scars

 

 

ব্রণের দাগ দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
১। লেবু
(ক) লেবু একটি প্রাকৃতিক ব্লিচ। লেবুর রসের সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে একটি তুলার বলের সাহায্যে তা মুখে ৩-৪ মিনিট ঘষতে হবে।

(খ) যদি সেনসিটিভ স্কিন হয় তাহলে এর সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে নিতে হবে। সম্ভব হলে ১ চামচ লেবুর রসের সাথে ২ চামচ ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া আপনি চাইলে একটানা ৭-১০ দিন নিচের ফেস প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

লেবুর ফেসপ্যাক
১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ আমন্ড তেল, ২ টেবিল চামচ দুধ একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। ব্রণ থাকা অবস্থায় দুধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন।

২। মধু
(ক) রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ভালো করে ধুয়ে মধু লাগাতে হবে। সারারাত মধু রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে ধুয়ে ফেলতে হবে।
(খ) মধুর সাথে দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে শুধুমাত্র দাগের উপর লাগিয়ে ১ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে। চাইলে সারারাতও রাখা যাবে।

মধুর ফেসপ্যাক
২-৩ টি এস্পিরিন ট্যাবলেট এর সাথে ২ চামচ মধু ও ২-৩ ফোঁটা পানি মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্রনের দাগের উপর দিতে হবে। এস্পিরিন এর স্যালিসাইলিক এসিড ব্রণের দাগ দূর করতে খুবই উপকারি।

৩। অ্যালোভেরা জেল
দিনে দুইবার অ্যালোভেরা জেল মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি শুধুমাত্র ব্রণের দাগই দূর করবে না, বরং আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে এবং টানটান ভাব চলে যাবে।

শিক্ষা
মাসিক হোস্টিং মাত্র ১৩০ টাকা !