মাথাব্যথা দূর করার উপায়
প্রতিদিনের যে সমস্যাটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে তার নাম মাথা ব্যথা। ছোট বড় প্রায় সকলেই নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। অনেকেই আবার ভুগে থাকেন মাইগ্রেনের সমস্যায়। এই ধরনের ব্যথা খুব হঠাৎই শুরু হয়ে যায় এবং ৩/৪ দিন পর্যন্ত টানা ব্যথা চলতে থাকে।
How to reduce headache
ব্যথা দূর করার জন্য অনেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন, অনেকে আবার ব্যথানাশক ঔষধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু আপনি জানেনে কি? খুব সহজে কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে এই মাথাব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চলুন তবে দেখে নেয়া যাক সেই উপায়গুলো কি কি।
আদা ও আদা চা
মাথা ব্যথা উপশমে আদার জুড়ি নেই। কারণ আদায় রয়েছে ‘প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন সিনথেসিস’ যা অ্যাসপিরিন অ ব্যথানাশক ঔষধে ব্যবহার করা হয়। তাই মাথা ব্যথা শুরু হলে সামান্য আদা ছিলে নিয়ে চিবনো শুরু করুন। এতে মাথা ব্যথা দ্রুত উপশম হবে। এর পাশাপাশি এক কাপ পানি ফুটিয়ে এতে আদা সামান্য ছেঁচে নিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে সামান্য মধু দিয়ে পান করতে পারেন আদা চা। এতেও মাথা ব্যথা দ্রুত দূর হবে।
আইসব্যাগ
বাজারে নানা আকারের অনেক আইসব্যাগ কিনতে পাওয়া ইয়া। একটি আইসব্যাগে বরফ ভরে নিয়ে তা মাথার ওপরে অর্থাৎ ঠিক মাথার তালুতে খানিকক্ষণ ধরে রাখুন। দেখবেন মাথা ব্যথা উপশম হচ্ছে। তবে জাদের হুটহাট ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার প্রবণতা আছে তারা এই পদ্ধতি পালন করবেন না।
মিষ্টিকুমড়োর বিচি খান
মিষ্টি কুমড়োর বিচি ভেজে খেলে মাথা ব্যথার সমস্যা থেকে দুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারণ মিষ্টি কুমড়োর বিচিতে হয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট যা মাথা ব্যথা উপশমে কাজ করে থাকে।
কাঠবাদাম খাওয়ার অভ্যাস রাখুন
অনেক সময় আবহাওয়া, ধুলোবালির কারণে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়, আবার অনেক সময় মানসিক চাপের কারণেও মাথা ব্যথা শুরু হয়। এই সকল ধরনের ব্যথা কমানোর জন্য একমুঠো বা দুইমুঠো কাঠবাদাম চিবিয়ে খান। কাঠবাদামে রয়েছে ‘স্যালিসিন’ যা ম্যথা ব্যথা উপশমে কাজ করে রবং দ্রুত ব্যথা নিরাময় করে।
মনোযোগ দিয়ে গান শুনুন
মন ভালো করার পাশাপাশি মাথা ব্যথা উপশমে সব চাইতে ভালো কাজ হচ্ছে গান শোনা। ‘জার্নাল অফ পেইন’ গবেষণাপত্রে প্রকাশ হয় গান শোনা প্রায় ১৭% ব্যথা কমিয়ে দিতে সহায়তা করে। কারণ গান মনোযোগ দিয়ে শোনার সময় আমাদের লক্ষ্য মাথা ব্যথা থেকে সরে যায় যা আমাদের মাথা ব্যথার কথা অনেক সময় ভুলিয়ে দেয়। এতে করেই সেরে উঠে মাথা ব্যথা।
মাথাব্যথার চিকিৎসার জন্য সাধারণত ব্যবহৃত কিছু ওষুধ রয়েছে। তবে, মাথাব্যথার ধরন, তীব্রতা, এবং ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ওপর ভিত্তি করে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করা উচিত। নিচে কিছু সাধারণ মাথাব্যথার ওষুধের তালিকা দেওয়া হলো:
১. প্যারাসিটামল (Paracetamol)
- ব্যবহার: সাধারণত মৃদু থেকে মাঝারি মাথাব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ৫০০ মিগ্রা থেকে ১০০০ মিগ্রা (একটি বা দুটি ট্যাবলেট), দিনে ৩-৪ বার সেবন করা যেতে পারে।
২. আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen)
- ব্যবহার: সাধারণত মৃদু থেকে মাঝারি মাথাব্যথা, মাইগ্রেন বা ব্যথা প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ২০০ মিগ্রা থেকে ৪০০ মিগ্রা, দিনে ৩-৪ বার সেবন করা যেতে পারে।
৩. ন্যাপ্রক্সেন (Naproxen)
- ব্যবহার: মাথাব্যথা এবং প্রদাহজনিত ব্যথা নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ২৫০ মিগ্রা থেকে ৫০০ মিগ্রা, দিনে ২-৩ বার সেবন করা যেতে পারে।
৪. এসপিরিন (Aspirin)
- ব্যবহার: মৃদু থেকে মাঝারি মাথাব্যথা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এটি রক্ত পাতলা করারও কাজ করে, তাই রক্তপাতের ঝুঁকি থাকলে এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
- ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ৩২৫ মিগ্রা থেকে ৬৫০ মিগ্রা, দিনে ৩-৪ বার সেবন করা যেতে পারে।
৫. মাইগ্রেনের জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ
- সুমাট্রিপটান (Sumatriptan), এর্গোটামিন (Ergotamine) প্রভৃতি: মাইগ্রেনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৬. অন্য কোনো কারণে মাথাব্যথা হলে
- যদি কোনো নির্দিষ্ট রোগের কারণে মাথাব্যথা হয়, তবে সেই রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা করা দরকার।
সতর্কতা:
- চিকিৎসকের পরামর্শ: কোনো ওষুধ শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি আপনি গর্ভবতী হন, স্তন্যদান করছেন, বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকুন। যদি কোনো অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মাথাব্যথার সমস্যার যদি ঘন ঘন বা তীব্র আকারে দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি অন্য কোনো গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে।