ঘাড় ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
ঘাড় ব্যথা এটা এখনকার সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। ঘাড় ব্যথাতে ভুগে থাকেন না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না।তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপেই বসে অধিকাংশ কাজ করতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে কোনো ক্ষতি না হলেও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে।
Neck pain causes and remedies
ঘুমের ভঙ্গি, টেনশন বা স্ট্রেস, দীর্ঘক্ষণ মাথা ঝুঁকিয়ে থাকা, নরম গদিতে শুয়ে থাকা বা দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের অঙ্গ-ভঙ্গির সঠিক না থাকলে আপনার ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
ঘাড় ব্যথার কারণ
রাষ্ট্রীয় ওয়েবসাইট করোনা ডটগভ ডটবিডির প্রতিবেদনে ঘাড় ব্যথার বেশ কিছু কারণ তুলে ধরা হয়েছে।
ঘাড়ের পেশিতে টান ও চাপ
দৈনন্দিন কার্যকলাপে ভুল অভ্যাসের কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। যেমন: ভুল ভঙ্গিতে বসা, শোয়া বা কাজ করা, অবস্থান পরিবর্তন না করে খুব বেশি সময় ধরে ডেস্কে কাজ করা, ঘুমের সময় বেকায়দায় ঘাড় রাখা এবং ব্যায়ামের সময় ঘাড়ে ঝাঁকুনি লাগা।
আঘাত
পড়ে যাওয়া, গাড়ি দুর্ঘটনা এবং খেলাধুলার কারণে বিভিন্ন আঘাতে ঘাড় অধিকতর ঝুঁকিতে থাকে। অন্যদিকে ঘাড়ের হাড় (সারভিক্যাল কশেরুকা) ভেঙে গেলে মেরুদণ্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। হঠাৎ মাথার ঝাঁকুনি থেকে ঘাড়ের আঘাতকে সাধারণত হুইপ্ল্যাশ বা কশাঘাত বলা হয়।
হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক হলে কিংবা রক্তচাপ অনেক বেশি বেড়ে গেলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর সঙ্গে অন্য উপসর্গগুলোও দেখা দেয়। যেমন: হাঁপানি, ঘাম, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, বাহু বা চোয়াল ব্যথা। এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে।
মেনিনজাইটিস
মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকে এক ধরনের পাতলা টিস্যু। এই পাতলা টিস্যুতে জীবাণুর সংক্রমণ বা প্রদাহকে মেনিনজাইটিস বলে। মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, জ্বর। মেনিনজাইটিস প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। তাই কারও যদি মেনিনজাইটিসের লক্ষণ থাকে, তাহলে দ্রুত তাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে।
শারীরিক অসুস্থতা
কিছু রোগ আছে, যেগুলোতে ঘাড় ও এর আশপাশের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এমন কিছু উদাহরণ নিচে তুলে ধরা হলো।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা বাত: এই রোগে ব্যথা, হাড়ের জয়েন্ট ফুলে যাওয়া এবং হাড়ের অস্বাভাবিকতা হয়। ঘাড় বা এর আশপাশে এগুলো হলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
অস্টিওপোরোসিস: এতে হাড় দুর্বল হয় এবং তাতে ছোট ছোট ফাটল হতে পারে। অস্টিওপোরোসিস প্রায়শই হাতে বা হাঁটুতে ঘটে, তবে এটি ঘাড়েও হতে পারে, যার ফলে সৃষ্টি হয় ব্যথা।
স্পন্ডিলাইটিস: আপনার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সার্ভিক্যাল ডিস্ক ক্ষয়ে যেতে পারে। এটি স্পন্ডিলাইটিস বা ঘাড়ের অস্টিওআর্থ্রাইটিস নামে পরিচিত।
স্লিপড ডিস্ক: যেকোনো ট্রমা বা আঘাত থেকে যখন কশেরুকার একটি ডিস্ক বেরিয়ে আসে, তাতে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়তে পারে।
উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও জীবাণুর সংক্রমণ, ঘাড়ের চামড়ার ওপর বা ভেতরে ফোঁড়া, টিউমার ও মেরুদণ্ডের ক্যানসারের কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
প্রতিকার
ঘাড় ব্যথা হলে কী করতে হবে, তা জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্রেইন ও স্পাইন সার্জন ডা. মো. গওছুল আযম।
১. দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করবেন না।
২. মাথার ওপর কোনো ধরনের ওজন নেবেন না।
৩. শোয়ার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।
৪. সেলুনে কখনোই ঘাড় ম্যাসাজ করে নেবেন না।
৫. নিজেকে অবসাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
৬. একটানা ব্যথা থাকলে নিউরোসার্জন বা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
দীর্ঘস্থায়ী ঘাড়ে ব্যথা সাধারণত ভুল অঙ্গভঙ্গি, শারীরিক চাপ এবং খাদ্যাভাসের ফলস্বরূপও হতে পারে। প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকারেও যদি আপনার ব্যথা না কমে; তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।