সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া

সঞ্চয়পত্র হল জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনে জনগণকে সঞ্চয়ী হতে উৎসাহিত করা ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয় স্কীমের মাধ্যমে আহরণ করার উদ্দেশ্যে এবং সাধারণের নির্ঝঞ্ঝাট অর্থ বিনিয়োগের পথ প্রশস্থ করার অন্য নাম সঞ্চয়পত্র।

 

National savings certificate of Bangladesh

 

সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে সাধারণত সরকার জনগণের কাছ থেকে ঋণ সংগ্রহ করে এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প পরিচালনা করে। সঞ্চয়পত্র সাধারণত বিভিন্ন মেয়াদে দেওয়া হয় এবং নির্দিষ্ট সুদের হারে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন প্রদান করা হয়।

সঞ্চয়পত্র কি ?

সঞ্চয়পত্র হলো এমন একটি বিনিয়োগ মাধ্যম, যেখানে সাধারণ জনগণ তাদের সঞ্চয় ব্যাংক বা সরকারী সংস্থার মাধ্যমে জমা রেখে নির্দিষ্ট সময় পর মূল অর্থসহ সুদ পায়। এটি একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত, বিশেষ করে বাংলাদেশে।

সঞ্চয়পত্রের বৈশিষ্ট্য

-সঞ্চয়পত্র সরকারি নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এটি অত্যন্ত নিরাপদ।

-সঞ্চয়পত্রে সুদের হার নির্দিষ্ট থাকে এবং সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে যে সময়ে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়, সেই সময়ের হারে সুদ প্রযোজ্য থাকে।

-সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্তি হলে বিনিয়োগকারী মূলধনসহ সুদ পেয়ে থাকে।

-নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের আয়ে কর ছাড় পাওয়া যায়, তবে এর জন্য ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN) থাকা বাধ্যতামূলক।

সঞ্চয়পত্রের ধরন

বাংলাদেশে মূলত চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে, যা বিভিন্ন প্রয়োজন অনুসারে বিনিয়োগকারীদের জন্য উপলব্ধ:

১. পারিবারিক সঞ্চয়পত্র

  • মেয়াদ: ৩ বছর
  • সুবিধাভোগী: কেবলমাত্র নারীরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা (স্বামী বা সন্তানদের জন্য) কিনতে পারেন।
  • সুদ হার: ১০-১১% এর মধ্যে থাকে।
  • বিনিয়োগের সীমা: ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৫ লক্ষ টাকা।

২. তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র

  • মেয়াদ: ৩ বছর
  • সুবিধাভোগী: সাধারণত সকলের জন্য উন্মুক্ত।
  • সুদ প্রদানের সময়: প্রতি ৩ মাসে মুনাফা প্রদান করা হয়।
  • সুদ হার: ১১.০৪% (সাম্প্রতিক হার অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে)।
  • বিনিয়োগের সীমা: সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা।

৩. ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র

  • মেয়াদ: ৫ বছর
  • সুবিধাভোগী: সকলের জন্য উন্মুক্ত।
  • সুদ হার: ১১.২৮% (সাম্প্রতিক হার অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে)।
  • বিনিয়োগের সীমা: সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা।

৪. পেনশনার সঞ্চয়পত্র

  • মেয়াদ: ৫ বছর
  • সুবিধাভোগী: শুধুমাত্র সরকারী ও আধাসরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য।
  • সুদ হার: ১১.৭৬%
  • বিনিয়োগের সীমা: সর্বোচ্চ ৬০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

সঞ্চয়পত্র কেনার পদ্ধতি

  • সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে বিনিয়োগকারীকে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN) এবং ব্যাংক হিসাবের বিবরণী জমা দিতে হয়।
  • পোস্ট অফিস, বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।
  • ব্যাংক চেক বা নগদ অর্থ দিয়ে বিনিয়োগ করা যায়।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের যোগ্যতা

সবাই সব ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। এ ব্যাপারে সরকার কিছু শর্ত ঠিক করে দিয়েছে। যেমন ১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী, যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী ও পুরুষেরা শুধু একক নামে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।

পেনশনার সঞ্চয়পত্রও কিনতে পারেন না সবাই। অবসরভোগী সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত সরকারি চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সবার জন্য উন্মুক্ত। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ একক বা যুগ্ম নামে এ দুই ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। নাবালকের পক্ষে সঞ্চয়পত্র কেনার এখন আর সুযোগ নেই।

সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো

৫০ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পেনশনার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। আর পরিবার সঞ্চয়পত্র রয়েছে ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের। এগুলো কেনা যায় জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কার্যালয়, সব তফসিলি ব্যাংক ও সব ডাকঘর থেকে। একই জায়গা থেকে ভাঙানোও যায়। ভাঙানোর দিন গ্রাহককে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে।
পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১ লাখ টাকায় মাসিক মুনাফা পাওয়া যায় ৮৬৪ টাকা। ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ত্রৈমাসিক মুনাফা ২ হাজার ৪৮৪ টাকা। আর পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ত্রৈমাসিক মুনাফা ২ হাজার ৬৪৬ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে একেক বছরের জন্য একেক হারে মুনাফা পাওয়া যায়।

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

Close
FREELANCE
JOBS
Business
Entrepreneur
About us
Privacy Policy
DMCA
Disclaimer
Contact