এজেন্ট ব্যাংকিং এর ধারণা

এজেন্ট ব্যাংকিং এর ধারণা

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিতদের সেবা দিতে ২০১৭ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করা হয়। গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সেবা দেওয়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মূল লক্ষ্য।

ব্যাংকের শাখা নেই এসব এলাকায় নিজস্ব বিক্রয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এমন ব্যক্তি ব্যাংকের এজেন্ট হতে পারেন। কোনো ধরনের বাড়তি চার্জ ছাড়া এ সেবা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে কোনোভাবেই গ্রাহক যেন প্রতারিত না হন, সে জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগের আগে অবশ্যই তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা, বিশ্বস্ততা ও সততার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা রয়েছে।

Agent banking in Bangladesh

 

প্রথমে শুধু পল্লী এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হলেও, পরে পৌর ও শহরাঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিং করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কাজের সুযোগ
ব্যাংকিং সেবা বাড়াতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এজেন্ট ব্যাংকিং। এজেন্ট ব্যাংকিং হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত একটি নতুন ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বৈধ এজেন্সি চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগকৃত এজেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হয়। যেসব এলাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা নেই, সেখানে এর মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয় ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিতদের। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য করা হয় এজেন্ট ব্যাংকিং, বিশেষ করে স্কুল, পথশিশু, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক, চর এলাকা ও দ্বীপবাসীর কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ। ফলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেখানে তাদের শাখা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। কারণ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ব্যাংকগুলোর তেমন খরচ নেই। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকের এজেন্টকেই সব খরচ বহন করতে হয়। এ জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২০টি তফসিলি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ব্যাংক মাঠপর্যায়ে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এজেন্ট ব্যাংকিং শুরুর পর অল্প সময়েই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ লাখ। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বেশি প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ জীবনে। এটা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটা সোপান। সব ব্যাংকের শাখা প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেই। এসব অঞ্চলে মানুষ ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে রয়ে গেছে। সেখানে ব্যাংকের আউটলেট খুলে মানুষের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। এই ব্যাংকিংয়ের সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ গ্রাহক ছোট ব্যবসায়ী। এর পরই দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন গৃহিণীরা, যার পরিমাণ ১৮ শতাংশ। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মোট গ্রাহকের ৩ শতাংশ দিনমজুর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে হিসাব খুলেছেন। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ২৯ শতাংশ গ্রাহক ছোট ব্যবসায়ী। এ ছাড়া মোট গ্রাহকের ৭ শতাংশ কৃষক। বিআইবিএমের প্রতিবেদনে বলা হয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ১৫ শতাংশ গ্রাহক সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও ৭ শতাংশ গ্রাহক শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশ ব্যাংক-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে রেমিট্যান্স সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এজেন্ট ব্যাংকিং অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। মার্চ পর্যন্ত ১৬ ব্যাংকের ৪ হাজার ৯০৫টি আউটলেটের মাধ্যমে গ্রাহকদের ২ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা রেমিট্যান্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে বিতরণকৃত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং শহরাঞ্চলে বিতরণকৃত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৭৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা প্রায় ছয় গুণ বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ছয়টি ব্যাংক গ্রাহকদের ১২২ কোটি টাকার ঋণও দিয়েছে।

সুবিধা
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, জামানত তুলনামূলকভাবে কম লাগে। অল্প জায়গায় করা যায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা। লোকবল কম লাগে।

সেবাসমূহ:
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, ক্লিয়ারিং চেক ও ঋণের আবেদন গ্রহণ, বিতরণ ও কিস্তি সংগ্রহ, রেমিট্যান্স অর্থ প্রদান, বিদ্যুৎ বিল জমা, ভাতা বিতরণ, অ্যাকাউন্ট ব্যাল্যান্স জানা ও সংক্ষিপ্ত বিবরণী প্রদান, ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা, চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সুবিধা, বীমা প্রিমিয়াম সংগ্রহ, দৈনিক লেনদেনে ব্যাংক ও এজেন্টের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি এবং সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা প্রোগ্রামের অধীনে নগদ অর্থ প্রদান করা ছাড়াও যে কোনো ব্যাংকের হিসাবে টাকা পাঠানো যাবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত যে কোনো ধরনের ব্যাংকিং সেবা নেওয়া যাবে।

যারা এজেন্ট হতে পারবে
কোম্পানি আইনের আওতায় অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান, আইটিভিত্তিক আর্থিক সেবা দিতে সক্ষম এ রকম প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি, ফার্মেসির মালিক, পেট্রল পাম্প কিংবা গ্যাস স্টেশনের মালিক, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অফিস, এমআরএর অধীনে অনুমোদন পাওয়া এনজিও, কো-অপারেটিভ সোসাইটির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কুরিয়ার, ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র এজেন্ট হতে পারবে।

যারা এজেন্ট হতে পারবে না
ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত, আদালত থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি, সাজা হওয়ার পর তিন বছর পর্যন্ত জেল, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়নের দায়ে অভিযুক্ত, ঋণখেলাপি, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত, অন্য ব্যাংকের বিদ্যমান এজেন্ট ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি।

চুক্তি বাতিল
অনেক কারণে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের চুক্তি বাতিল হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে – এজেন্ট তার কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিলে; আদালত কর্তৃক এজেন্টের ব্যবসা বন্ধ হলে; এজেন্ট ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে তিন মাসের মধ্যে আবার চালু না করলে; ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া মালিকানা কিংবা ঠিকানা পরিবর্তন করলে; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অমান্য করলে; ভুল তথ্য দিলে; এজেন্ট হওয়ার অনুপযুক্ত ব্যক্তির কাছে আংশিক মালিকানা হস্তান্তর করলে।

প্রশিক্ষণ
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জন্য চার থেকে পাঁচ দিন ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবে ব্যাংকভেদে প্রশিক্ষণের সময়সীমা কমবেশি হতে পারে।

আয়
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মোট লেনদেনের ওপর আয় নির্ভর করে। যত বেশি লেনদেন হবে, তত বেশি কমিশন পাওয়া যাবে।

2 Comments

  • nimabi

    nimabi

    1 year ago / November 24, 2023 @ 4:35 am

    Thank you very much for sharing, I learned a lot from your article. Very cool. Thanks. nimabi

  • Bonus de recomandare Binance

    Bonus de recomandare Binance

    8 months ago / September 22, 2024 @ 4:46 pm

    Thanks for sharing. I read many of your blog posts, cool, your blog is very good.

Leave a Comment

Leave a Reply to nimabi Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

Close
FREELANCE
JOBS
Business
Entrepreneur
About us
Privacy Policy
DMCA
Disclaimer
Contact