বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে পেশা সমূহ
পেশা বলতে বিশেষ কোনো বিষয়ে নির্দিষ্ট জ্ঞান, দক্ষতা, নৈপূন্য, মূল্যবোধ, বিশেষ নীতি ও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বৃত্তিকে বোঝায়, যা সাধারণত জনকল্যাণমুখী এবং পেশাগত সংগঠন মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে।
Careers in Bangladesh
Careers in Bangladesh
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রকৌশলের ক্ষেত্রের চাকরিগুলোতে অনেক বেশি উপার্জন করার সুযোগ থাকায় পেশা হিসেবে ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ারদের কদর সব সময়ই অনেক বেশি হয়ে আসছে।তাছাড়া ও আইন পেশা, ব্যাংকিং পেশা, সরকারি চাকরি, ও শিক্ষকতার বেশ কদর রয়েছে। এই পেশা গুলোকে আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রচলিত পেশা হিসেবে ধরে নিতে পারি।
প্রচলিত পেশা
ডাক্তার: আমাদের দেশের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত পেশাগুলোর একটি ডাক্তারি। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাচেলর অফ মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অফ সার্জারি (M.B.B.S.) ডিগ্রিধারীরা ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারেন। এ ডিগ্রি ডাক্তারি পেশার সূচনা মাত্র। এমবিবিএসের পরে ডাক্তাররা চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে কোন বিশেষ দিকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে থাকেন। যেমন: মেডিসিন, নিউরোলজি, গাইনিকোলজি, অনকোলজি, গ্যাস্ট্রোলজি, কার্ডিওলজি ইত্যাদি।
বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) স্বীকৃত মোট ৩৬টি সরকারি ও ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি দেয়া হয়। সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেতে হলে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভর্তি হকে হবে। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত শিক্ষার খরচ প্রচুর।
ইঞ্জিনিয়ারিং ও স্থাপত্য: পছন্দের পেশা হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টির জনপ্রিয়তা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আগ্রহী মানুষের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এখনকার তরুণদের কাছেও ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল একইরকম আকর্ষণীয় পেশা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি বর্তমানে স্থাপত্য বা আর্কিটেক্টও তরুণদের পছন্দের তালিকার শুরুর দিকেই স্থান করে নিয়েছে। বর্তমানে শিল্পনির্ভরতা বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে শিল্পকারখানা। আর এর ফলে দরকার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জনশক্তির। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার। শিল্পকারখানার বাইরেও এই পেশায় দক্ষ লোকদের কাজের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার চাহিদা অন্য সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেড়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে প্রায় ১৮ হাজার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের পদ ফাঁকা থাকে যোগ্য কর্মী না পাওয়ার কারণে।
ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স ম্যানেজার: বর্তমানে চাকরির বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর। সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ করা তরুণ-তরুণীদের পছন্দের প্রথম কাতারে রয়েছে এই পেশা। কারণ এই পেশাটিকে সবাই চিন্তামুক্ত একটি পেশা হিসেবেই মনে করেন এবং এর ভবিষ্যৎও অনেক ভালো। ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই খাতে ক্যারিয়ারকে অনেক বেশি নিরাপদ মনে করা হয়। ব্যাংকিং সেক্টরে অনেক প্রাইভেট ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এই পেশায় তরুণদের সুযোগ অনেক বাড়ছে। ব্যাংকিং সেক্টরে কাজের ভালো পরিবেশের সাথে রয়েছে ভালো বেতনকাঠামো। তাই এই পেশার জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে বর্তমানে আগ্রহী হয়ে উঠছে তরুণেরা। একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা তদারকি, বিনিয়োগ কিংবা অর্থসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে লাভবান রাখার কাজটি করে থাকেন ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজার। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এই পদে দক্ষ কর্মীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর সঙ্কট প্রবল।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস): বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিসিএস এখনও সমাজের সবচেয়ে সম্মানজনক চাকরি। দু একটি ক্ষেত্র ব্যতিত চাকরি নিরাপত্তা এবং সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণে বিসিএস এর বিকল্প বাংলাদেশে নেই। বেসরকারি চাকরির বিশাল বাজার বাঙালি যুবমানসে এখনও আস্থার সৃষ্টি করতে পারেনি। এ কারণে চাকরিপ্রার্থীরা এখনও বিসিএসকেই চাকরি তালিকার শীর্ষে রাখেন। দেশের রাজনৈতিক সরকার জনগণের স্বার্থে যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সেটা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারি কর্মচারীদের উপর বর্তায় এবং সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেন বিসিএস কর্মকর্তারা। সুতরাং এ চাকরির মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রকে যেভাবে সরাসরি সেবা দেওয়া যায় অন্য কোন চাকরির মাধ্যমে সেটা অসম্ভব।
নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ: বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বা Bangladesh Public Service Commission (BPSC)
বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন’ বা BPSC (Bangladesh Public Service Commission) । সংবিধানের ১৩৩ থেকে ১৪১ নং অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন এর কাজ এবং কাজের পরিধি বর্ণিত আছে। এই কমিশনের মাধ্যমে পরিচালিত নিয়োগ পরীক্ষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিসিএস পরীক্ষা। সরকারের ২৯টি ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা নিয়োগ হয়ে থাকে প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে। বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কাজের ধরন অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: জেনারেল ক্যাডার ও প্রফেসনাল ক্যাডার।
এছাড়াও বাংলাদেশে প্রফেসনাল ক্যাডারের অন্তর্ভূক্ত এমন কিছু ক্যাডার আছে যেখানে পূর্ব অর্জিত নির্দিষ্ট ডিগ্রি থাকার দরকারনেই। যে কোন বিষয়ে অথবা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলেই চলে। যেমন- বিসিএস (ইকনমিক) ও বিসিএর (তথ্য) ক্যাডারে প্রফেসনাল পদসমূহের জন্য একক কোন বিষয় নয় বরং বিভিন্ন বিষয়ের ডিগ্রিধারীদের এসব ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং সরকারি চাকরি করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য বিভিন্ন ক্যাডারে প্রফেসনাল পদ রয়েছে।
অপ্রচলিত পেশা
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার এসব ছাড়াও ইদানীং কিছু ক্যারিয়ার পথ তৈরি হয়েছে, যাতে অনেকেই সফল হচ্ছে। যেমন ফটোগ্রাফি, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মেক-আপ আর্টিস্ট, স্টাইলিস্ট, ক্যারিয়ার গ্রুমিং, কর্পোরেট ট্রেইনার, পাবলিক স্পিকার, ফ্যাশন ডিজাইনিং, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ফিল্ম মেকিং, ব্লগিং ইত্যাদি। এসব বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার খুব একটা সুযোগ বাংলাদেশে নেই, তবে এসব বিষয়ে তাত্ত্বিক শিক্ষার চেয়েও ব্যবহারিক বা প্র্যাকটিকালি শেখার প্রয়োজন খুব বেশি হয়। এগুলো বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠছে দিন দিন।
বিকল্প পেশা
শিক্ষাজীবনে আমাদেরকে খুব কমই জানানো হয় যে ক্যারিয়ার মাত্রই চাকরি নয়। উদ্যোক্তা হওয়া, ফ্রিল্যান্সার, স্বাধীন-কন্সাল্টেন্ট হওয়া এরকম আরও অনেক ক্যারিয়ার পথ আছে। উদ্যোক্তা হলে নিজের কাজের স্বাধীনতা যেমন থাকে, তেমনি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়। বাংলাদেশের মত দেশ, যেখানে ৪৭% শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেকার, সেখানে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করাটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে। বাংলাদেশে তরুণদের প্রতিষ্ঠা করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ’ থেকে হাজার খানেক শিক্ষিত ছেলেমেয়ে কাজ করার সুযোগ পায়।
Careers in Bangladesh – পেশা পরিচিতি
পেশা নির্বাচন বিষয়টি বাংলাদেশে একটি অস্থির এবং জটিল প্রক্রিয়া। সুষম রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক উন্নয়নের অভাবে একাডেমিক শিক্ষার সাথে সঙ্গতি রেখে পেশা নির্বাচন এদেশে অত বেশি গুরুত্ব পায়নি। যেটুকু পেয়েছে পরিমাণগত দিক থেকে তা নিতান্তই সামান্য। এই প্রক্রিয়াগত জটিলতা এবং অন্য নানাবিধ সমকস্যার কারণে মানুষ যা চাচ্ছে এবং যা পাচ্ছে তার মধ্যকার ব্যবধান দিন দিন বাড়ছে। প্রত্যাশ্যা-প্রপ্তির এ দ্বন্দ্ব মানুষের মধ্যে জন্ম দিচ্ছে হতাশা। তাছাড়া বিভিন্ন পেশা এবং পেশাজীবীদের মধ্যে নানা বৈষম্য এবং ছুৎমার্গ প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় পেশাজীবীদের মধ্যে সন্তুষ্টি এবং মূল্য নির্ধারিত হচ্ছে না। এতে অস্থিরতা বাড়ছে পেশাজীবীদের মধ্যে, যার প্রভাব পড়ছে বৃহত্তর সমাজে। আমরা এ অধ্যায়ে বিভিন্ন পেশার বর্ণনা যেমন দিয়েছি তেমনি বাতলে দেবার চেষ্টা করেছি সংশ্লিষ্ট পেশা অর্জনের উপায় সমূহ। প্রয়োজনীয় তথ্য এবং নির্দেশনার অভাবে দেশের যুবসমাজ অনেক সময় পেশা নির্ধারণে নানা ভাবে বিভ্রান্ত হয়। এ অধ্যায়ের লেখাগুলো সেই বিভ্রান্তি এবং সংশয় দূর করে পেশা নির্বাচনে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা আরো বিশ্বাস করি অর্জিত পেশার প্রতি সন্তুষ্টি এবং অনুগত থাকার মাধ্যমে জীবনের সন্তুষ্টিও নিশ্চিত করা সম্ভব।
শিক্ষকতা: আভিধানিক সংজ্ঞায় শিক্ষকতা হলো শিক্ষকের কাজ বা পেশা। জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানই এ পেশার মূল বিষয়। মানুষকে পাশবিক থেকে মানবিক পর্যায়ে উন্নীত এবং অসভ্য থেকে সভ্যতার আলোয় আলোকিত করার পিছনে যে পেশার অবদান শতভাগ তা হচ্ছে শিক্ষকতা। এ পেশার মাধ্যমে একজন শিক্ষক তার উপর অর্পিত সামাজিক, মানবিক ও নৈতিক দায়িত্বগুলো অত্যন্ত সুচারু রূপে পালন করতে পারেন।
সুদূর অতীত থেকে আজ অবধি উপমহাদেশের এ ভূখণ্ডে অর্থাৎ বাংলাদেশে শিক্ষকতাকে একটি মহৎ সেবাধর্মী পেশা হিসেবে গণ্য হয়। তবে পেশার চেয়ে সেবাটাই বেশি গুরুত্ব পাবার কানণে শিক্ষকতায় পেশাদারিত্বের অভাব এখনও কোন কোন বাঙালি মানসে পরিলক্ষিত। কিন্তু দিন বদলের পালায় শিক্ষিত মানুষের পাল্লা ভারী হবার সুবাদে শিক্ষকতা এখন এখানে একটি Smart পেশা এবং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় পেশাজীবী দল এখন শিক্ষক সমাজ।
বাংলাদেশে বহুস্তর বিশিষ্ট শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষকতার সুযোগ বিদ্যমান। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নুাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রতিটি মানুষের জন্য স্বস্ব ডিগ্রি ও বিষয় অনুযায়ী শিক্ষকতার সুযোগ বিদ্যমান। ক্যারিয়ার হিসেবে বাংলাদেশে এখনও সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-এ শিক্ষকতার প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে কৃতিত্বপূর্ণ একাডেমিক ফলাফল। এ কারণে এসব পদগুলোতে যাঁদেরকে নির্বাচিত করা হয় তাঁরা শিক্ষা জীবনের প্রতিটি সার্টিফিকেট অর্জনী পরীক্ষায় বিশেষ করে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী (বা সমমানের গ্রেড) পেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশে শিক্ষকতার অন্যতম বড় ক্ষেত্র কলেজ এবং সমমানের মাদরাসা। পাঠদানের স্তর অনুযায়ী কলেজগুলো উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি কলেজ- এ দুভাগে বিভক্ত। উচ্চ মাধ্যমিক তথা এইচএসসি পর্যন্ত পাঠদানে রত কলেজকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পাঠ পরিচালনাকারী কলেজই ডিগ্রি কলেজ।
কলেজের শ্রেণী যাই হোক না কেন শিক্ষক নিয়োগের শিক্ষাগত শর্ত সব জায়গায় একই রকম। অর্থাৎ কলেজ শিক্ষকতায় যিনি আসতে চান তার অবশ্যই স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া (এ বইয়ের বিসিএস অংশে দেখুন) বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন পরিচালিত বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভাল ফলাফলই কলেজ শিক্ষক পদের অন্যতম পূর্বশর্ত।
ক্যারিয়ার হিসেবে স্কুল শিক্ষকতা নানা মাত্রায় তাৎপর্যপূর্ণ। প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা-এ দুটোই স্কুল শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত। সেবা, ত্যাগ ও আদর্শের বীজ স্কুল পর্বেই একজন মানুষের মধ্যে উপ্ত হয়ে থাকে। কেউ যদি জাতির ভাগ্য নির্মাণের কারিগর হতে চান, স্বোপার্জিত আদর্শ, ন্যায় ও কল্যাণের মাধ্যমে মানব সমাজকে উপকৃত করতে চান তাহলে তাকে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকের পদ গ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের (সরকারি ও বেসরকারি) স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষক হতে হলে কমপক্ষে স্নাতক এবং কখনো কখনো স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক পদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মহিলা (এসএসসি) এবং পুরুষ (ডিগ্রি পাশ)।
শাহরিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে যারা গ্রামীণ স্নিগ্ধ জীবনে স্বীয় আদর্শ ও বিশ্বাসের সৌরভে সুরভিত করতে চান-এ মাটির সন্তানদের, তাদের জন্য ক্যারিয়ার হিসেবে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা অনন্য।
এ পেশায় কাদের আসা উচিত
পঠন-পাঠন এবং অনুশীলনের জীবনে যারা বিশ্বাসী, বিত্তের চেয়ে চিত্তের বৈভবে যাদের পক্ষপাতিত্ব, সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা অন্যের মনোজগতের গুপ্তধন আবিষ্কারের নেশায় মত্ত মোটকথা স্রষ্টার রহস্যময় অপার সৃষ্টি যাদেরকে কৌতুহলী করে তাদের জন্য শিক্ষকতা আরামের, আনন্দের। এছাড়া শিক্ষার্থীর প্রতি মমত্ববোধ, প্রখর ধৈর্য, বহির্মুখী স্বভাব এবং অনুসন্ধিৎসু মন থাকলে এ পেশায় ভাল করা সম্ভব।
প্রস্তুতি কখন কিভাবে নেওয়া উচিত-
একজন ব্যক্তির জন্য শিক্ষকতা তখনই ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া উচিত যখন এ পেশার প্রতি তার অগাধ প্রেম এবং শ্রদ্ধাবোধ থাকবে। আমরা জানি, বাংলাদেশের পেশা নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি এখন অনেক বেশি জটিল এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও এই প্রতিযোগিতার বাইরে নয়। যার ফলে সেই তীব্র প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে দীর্ঘ মেয়াদী একটি পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক।
প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি সমসাময়িক সমাজের নানা বিষয়ে চোখ কান খোলা রাখা দরকার। বিশেষ করে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, সাধারণ গণিত বিষয়গুলোতে এসএসসি মানের দখল থাকা অপরিহার্য।
বাংলা প্রবাদ “সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র” মনে রাখলে এবং চর্চা করলে নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। মনে রাখা দরকার সুন্দর মুখ মানে সুন্দর কথা বলার ক্ষমতা।
উপসংহার: মানুষের আর্থ-সামজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি ‘শিক্ষকতা’কেও প্রভাবিত করেছে নানা মাত্রায়। যার অনিবার্যতায় শিক্ষকতা এখন আর নিছক ঐতিহ্যিক সেবা নয়, চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ারও বটে। নানা অবক্ষয়ের এদেশে এখন ক্রান্তিকাল। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে কান্ডারির বড় দরকার। একমাত্র আদর্শ দেশ প্রেমিক শিক্ষকরাই পারে সেই কান্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে।
গবেষণা পেশা:
পেশা হিসাবে গবেষণা অনেক উঁচু মানের পেশা। কোন ক্ষেত্রে গবেষণা করার জন্য যেমন যোগ্যতা দরকার তেমনি সমাজে এ ধরনের পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকেও আলাদাভাবে দেখা হয়ে থাকে। একজন গবেষক বরাবরই সমাজের উঁচু আসনে আসীন হয়ে থাকেন। আমাদের দেশে যদিও গবেষণার সুযোগ সুবিধা সীমিত তথাপি সমাজে গবেষকদের স্থান উঁচুতেই নির্ধারিত হয়েছে।
গবেষক হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জ্ঞান। এই জ্ঞান হতে হবে সম্যক, বিষয় ভিত্তিক এবং সুগভীর। তাই ছাত্র জীবনে যারা তাদের স্ব স্ব বিষয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করে থাকে তাদেরই এখতেয়ার গবেষক হওয়ার। গবেষকদের জ্ঞানের তুলনা করা যেতে পারে টর্চ লাইটের সাথে। পাশাপাশি বিসিএস অফিসারদের সাথে হেজাক লাইটের। হেজাক লাইট অল্প পরিসরে চারিপার্শ্বের অনেকটা স্থান আলোকিত করে। পক্ষান্তরে টর্চ লাইট অল্প স্থান ধরে গভীর দূরত্ব পর্যন্ত স্থানকে আলোকিত করে। একজন গবেষক পৃথিবীর অনেক বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন না কখনই, তবে তিনি যেটা নিয়ে চিন্তা করবেন তার আদ্যপান্ত ধরেই এগোবেন। যার মনোভাব এ ধরনের তার জন্য গবেষণার পেশা মানানসই হতে পারে। গবেষকরা কোন জাতির জন্য গর্বের বিষয়। এরা শুধু মাত্র জাতির জন্য নয় সমস্ত মানব জাতির জন্য অবদান রাখেন তদের গবেষণালব্ধ ফলাফল দিয়ে। বিদ্যুতের ব্যবহার যে বিজ্ঞানী শিখিয়েছেন তিনি শুধু তার নিজের দেশবাসীকেই এটা ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন তা নয়, সারা বিশ্ব এর সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করছে। এভাবেই সভ্যতা এগিয়ে চলছে আবিষ্কারের ফলাফল ধরে।
এবারে আসি কোন্ বিষয়ের উপরে গবেষণা করবো সে প্রসঙ্গে। প্রকৃত পক্ষে সকল বিষয়েই গবেষণা হয়ে থাকে। সকল বিষয়েই প্রতিনিয়ত অগ্রগতি হচ্ছে এ সকল গবেষণার কারণে। তুমি কোন বিষয়ে গবেষণা করতে চাও সেটা নির্ভর করবে তোমার ব্যক্তিগত interest এর উপরে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য বিশ্বব্যাপী গবেষণার সুযোগ সুবিধা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারই বটে। এ ক্ষেত্রে বলে রাখা প্রয়োজন যে বর্তমান শতাব্দীকে জৈব বিজ্ঞানের শতাব্দী বলা হয়। বিজ্ঞানের এই দিকটি এই শতাব্দীতেই সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্ব পাবে। এ কারণে বিজ্ঞানী হিসাবে তুমি তোমাকে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ সুবিধা বেশি পেতে পার যদি এই দিকটা নাও তোমার জন্যে। যে সমস্ত বিষয় এই আওতায় পড়ে তারা হলো Bio-Physics, Bio-Chemistry, Biology, Bio-Medical Engineering ইত্যাদি। গবেষণার কার্যক্রমকে মোটামুটি দুটো ভাগে ভাগ করা যায়- Theoretical এবং Experimentel.
আমাদের মত গরীব দেশে Experiment ভিত্তিক গবেষণা করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব অনুভূত হয়ে থাকে প্রতিনিয়ত। তাই এ ধরনের গবেষণা বাধাগ্রস্থও হয় প্রতিনিয়ত। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশে কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের অনেকগুলো ল্যাবরেটরী, সাইন্স ল্যাবরেটরী, ধান গবেষণা কেন্দ্র, পাট গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি।
গবেষক হিসেবে চাকুরি পাওয়ার জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা হচ্ছে ভাল রেজাল্ট। SSC, HSC, BA (Hons)/ B.Sc (Hons)/ BCom (Hons). MA/MSc/ MCom ইত্যাদি পরীক্ষাতে খুব ভাল মানের ফলাফল প্রয়োজন এ পেশায় যাওয়ার জন্য। এর পরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার জন্য দরকার উচ্চশিক্ষা যেমন MPhil, PhD ইত্যাদি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে Higher Training-ও কাজে লাগে সামনে এগোনোর জন্য। MPhil এবং PhD ডিগ্রি দেশ বিদেশ উভয় স্থান থেকেই পাওয়া যেতে পারে। তুমি যদি খুব ভাল ছাত্র হতে পার তবে বিদেশে পড়াশুনা করে PhD degree অর্জনের জন্য চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়ার সুবিধা অনেকভাবেই অর্জন করা যায় বর্তমান সময়ে। এর জন্যে অবশ্য কিছু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা রয়েছে, যেমন- TOEFL. GRE, GMAT ইত্যাদি। এদেশেও সীমিত পরিসরে কিছু Stipend/ Scholarship দেওয়া হয়ে থাকে কিছু public বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য অর্গানাইজেশন কর্তৃক এ সকল ডিগ্রি অর্জনের সুবিধার্থে।
গবেষণাকে প্রধান পেশা হিসাবে না নিয়েও কিছু Profession- এর লোকেরা গবেষণা করে যাচ্ছেন এ দেশে এবং বহির্বিশ্বে। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রমোশনের জন্য এই গবেষণালব্ধ Research paper- এর প্রয়োজন হয়। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে এ দেশের সমস্ত public university- এর শিক্ষকেরা কম বিশি গবেষণা করে থাকেন। তাঁদের জন্যে গবেষণা দু-ধরনের সুযোগ দিয়ে থাকে- প্রথমত, শিক্ষকতার স্বাদ এবং দ্বিতীয়ত, গবেষণার স্বাদ। এই উভয়বিধ স্বাদের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকে এদেশে সর্বোত্তম পেশা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন কেউ কেউ। এই পর্যায়ে চাকরি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন পরীক্ষাসমূহে সর্বোত্তম রেজাল্ট।
আইনজীবি
ভূমিকা
পৃথিবীর সব কিছুই কোন না কোন নিয়ম বা আইনের অধীনে পরিচালিত হয়। মানুষের জীবনও এ সকল আইনের বাইরে নয়। এ আইন ভঙ্গ করে যখন অপরাধ সংঘটিত হয় তখনই সৃষ্টি হয় বিশৃংখলা ও অশান্তি। তাই আইন ভঙ্গ তথা অপরাধ সংঘটনকে নিয়ন্ত্রণ করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধ ও অপরাধের কারণ উদঘাটন এবং অপরাধীর বিরূদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আর এ কাজে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাঁ যারা পালন করেন তারা হলেন আইনজীবী, যারা অপরাধের সামগ্রিক পর্যালোচনা, কোর্টের সামনে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি, অপরাধী ও সাক্ষীসহ সংশ্লিষ্টদেরকে প্রশ্নোত্তর এবং নিজেদের মাঝে নানা রকম আইনি যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য এবং অপরাধী চিহ্নিত করার মাধ্যমে আদালতকে তার বিচারিক কাজে সাহায্য করে থাকেন।
আইন পেশা ও এর বিভিন্ন শ্রেণী
আইন বিষয়ে পড়ালেখা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বাদী-বিবাদীকে আইনি সহায়তা প্রদান, প্রয়োজনীয় স্থানে আইনি পরামর্শ প্রদান, আদালতকে বিচারিক কাজে সহায়তা প্রদান এবং সর্বোপরি আইন সংশ্লিষ্ট বিবিধ কার্যক্রমে অংশ গ্রহণকে জীবিকা অর্জনের পথ হিসেবে বেছে নেয়াই আইন পেশা।
আইন পেশাকে দু’টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। প্রথমত আইনজীবী হিসেবে কোর্টে মামলা পরিচালনা করা।
দ্বিতীয়ত বিভিন্ন দেশি, বিদেশি ও বহু জাতিক কোম্পানীতে আইন কর্মকর্তা বা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ লাভ করে কাজ করা।
উল্লেখ্য সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন আদালতে আইনজীবীদের মধ্য থেকেই আইন কর্মকর্তা নিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্টে সরকার পক্ষ থেকে নিয়োজিত আইন কর্মকর্তাদের Attorney General, Deputy Attorney General, Assistant Attorney General বিভিন্ন পদবীতে সম্বোধন করা হয়। এছাড়া নিম্ন আদালতে নিয়োজিত আইন কর্মকর্তারা পিপি (Public Prosecutor), এপিপি (Assistant Public Prosecutor),জিপি (Government Prosecutor) ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত।
সমাজে এ পেশার প্রয়োজনীয়তা
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠর জন্য আইনজীবীর ভূমিকা অপরিসীম। মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত পর্যায়ে থেকে শুরু করে পরিবর, সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্বন্দ্ব- ফ্যাসাদ, হানাহানি একটি অনস্বীকার্য বাস্তবতা। তাই এসব সমস্যার সমাধানে রয়েছে আদালত ব্যবস্থা। আর আদালত ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় সমস্যার সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক সমাধানের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যের প্রকাশ ও বিশৃংখলা মুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সবচে’ বড় হাতিয়ার হলেন আইনজীবীগণ। আইনজীবীরা আদালতের সামনে পক্ষে-বিপক্ষে দাঁড়িয়ে স্বপক্ষের ঘচনাসমূহ ও যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠা ও সঠিক বিচারে আদালতকে সাহায্য করে থাকেন। এছাড়া আইনজীবীগণ সমাজের একটি সম্মানজনক আসনে অধিষ্ঠিত থাকায় ছোট-খাট সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে পারেন এবং লোকেরা তাঁদের এসব সমাধান মূলক উদ্যোগকে স্বাগত জানায়, এমনকি তারাও নিজেদের সমস্যাদি সমাধানের জন্যে তাঁদের (আইনজীবী) নিকট ধর্ণা দিয়ে থাকেন।
এ পেশায় যাবার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিকতা
অনেকেই এই পেশাটিকে অবজ্ঞার চোখে দেখে থাকেন। আসলে দৃশ্যত যে সব কারণে এ অবজ্ঞার সৃষ্টি, সেগুলো একটু খতিয়ে দেখলেই অবজ্ঞার পরিবর্তে শ্রদ্ধা জাগার কথা। কারণ এঁদের ইতিবাচক ভূমিকা সমাজের জন্য অপরিহার্য বটে। আর যারা এ পেশায় যেতে আগ্রহী সর্বপ্রথম তাদেরকে এর প্রতি নেতিবাচক মানসিকতা পরিহার করে ইতিবাচক দিকগুলির প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে হবে। এ পেশা যে সত্যিকারার্থে একটি সম্মানজনক পেশা তা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। এছাড়া বর্তমান সময়ে এটি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সুতরাং উচ্চাকাংক্ষা এবং এপথে বিজয়ী হবার উদ্যম সম্পন্ন একটি চ্যালেঞ্জিং মানসিকতা প্রয়োজন।
উপরন্তু অনুসন্দ্ধিৎসা, কৌতূহল, সার্বজনীনতা ও উদারতা এবং সমাজের প্রতিটি কোষে কোষে প্রবেশ করার মত কিছুটা এ্যাডভেঞ্চারাস (adventurous) মানসিকতা প্রয়োজন। যেহেতু আইনজীবীরা সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, এ কারণে এ পেশায় যাবার জন্য একটি পরিপূর্ণ সৎ মানসিকতার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। সর্বোপরি দেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে ধনাট্য ব্যক্তি পর্যন্ত এবং মুচি-মেথর থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ের জন-মানুষের মাঝে নিজেকে Matching করিয়ে নেবার মত সর্বভূক মানসিকতা নিয়েই যাত্রা শুরু করতে হবে এ পেশার গন্তব্য স্থলের দিকে।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
আইন পেশায় আসতে হলে নিম্নলিখিত কয়েকটি পর্যায় পাড়ি দিতে হয়।
প্রথমত কোন সরকারি কিংবা স্বীকৃত যে কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (আনার্স) ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। এ ছাড়াও ডিগ্রি পাশ করার পর যে কোন স্বীকৃত আইন কলেজ হতে সাধারণ এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করলেও চলবে।
দ্বিতীয়ত আইন বিষয়ে উক্ত ডিগ্রি অর্জন করার পর Advocate হিসেবে Enrolment (অন্তর্ভূক্তি) এর জন্য Bangladesh Bar Council কর্তৃক আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার জন্য আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে দশ বছরের আইন পেশায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোন আইনজীবীর অধীনে চেম্বারে অনূন্য ৬ মাস Pupil (শিক্ষানবীশ) হিসেবে নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। অত:পর বার কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। এতে কৃতকার্য হলে বার কাউন্সিল কর্তৃক আইনজীবী (Advocate) হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয় এবং আইনজীবী সনদ পত্র প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য যে, হাইকোর্ট ডিভিশনে আইনজীবী হিসেবে প্রাকটিস করতে হলে কোন আইনজীবীকে নিম্ন আদালতে তথা জজ কোর্টে কমপক্ষে দু’বছর প্রাকটিস করতে হবে। তবে যারা UK (যুক্তরাজ্য) থেকে Bar-at-Law সম্পন্ন করেছে অথবা যে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে LLM (এলএলএম) পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০% নম্বর অর্জন করে কৃতকার্য হয়েছে তাদের জন্য সুপ্রীম কোর্টের যে কোনো সিনিয়র আইনজীবী (Senior Advocate)-র সাথে কমপক্ষে এক বছর কাজ করলে High Court Division-এ প্রাকটিস করার জন্য Bar Council কর্তৃক নির্দিষ্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এতে কৃতকার্য হলেই একজন আইনজীবী সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে প্রাকটিস করতে পারবেন।
কখন থেকে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করতে হবে
যেহেতু এ পেশায় যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আইন বিষয়ের শিক্ষার্থী হতে হয়, তাই HSC পাশ করার পরই কাংক্ষিত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করতে হবে। তবে একজন সফল আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ডিগ্রি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি হলেও যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সুযোগ না হয় তাহলে Normal ডিগ্রি পাশ করে যে কোন আইন কলেজে অধ্যয়ন করে একটি এলএলবি (যাকে অনার্স বলা হয় না) ডিগ্রি অর্জন করে এ পেশায় আসা যায়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, প্রায় প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েই আইন বিভাগ কয়েছে এবং তা একটি স্বতন্ত্র অনুষদের অধীন। ভর্তি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয় একটি স্বতন্ত্র ইউনিটের Under-এ। সুতরাং উক্ত ইউনিট কর্তৃক ঘোষিত এ্যাডমিশনের বিষয় সমূহের প্রস্তুতি ভালভাবে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা দরকার।
Bar-at-Law কি ও কিভাবে অর্জন করতে হয়?
আইন জগতে Bar-at-Law বা ব্যারিস্টার একটি জনপ্রিয় নাম। আসলে এটি হলো UK, Australia, Canada ইত্যাদি দেশসমূহে উচ্চতর আদালত (Higher Court)- এ প্রাকটিস করার জন্য ঐ সব দেশের Law Society (যেটা আমাদের দেশের Bar Council এর মতো) কর্তৃক প্রদত্ত একটি Certificate. যে কেউ উক্ত দেশসমূহে Law (আইন) বিষয়ে Graduation করে Bar-at-Law এর জন্য আবেদন করতে পারে। উল্লেখ্য, এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের আইন বিষয়ে Graduation (স্নাতক) ডিগ্রি ঐ দেশ সমূহে Bar-at-Law করার জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য ডিগ্রি নয়। অবশ্য বর্তমানে বাংলাদেশ থেকেও UK-র কোন University এর অধীনে External Programme-এ ভর্তি হয়ে Law (আইন) বিষয়ে Graduation ডিগ্রি অর্জন করা যায়। পরবর্তীতে Bar-at-Law করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে UK- তে যেতে হয়। অবশ্য খুশির সংবাদ হলো বাংলাদেশে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন- Bhuiyan Academy, Newcastle Law Academy ইত্যাদি UK-র বিভিন্ন University র অধীনে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
উল্লেখ্য অতি সম্প্রতি UK- এর Nottingham Trent University বাংলাদেশের Northern University র অধীনে তাদের পরিচালিত আইন বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
বিচারক
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচারকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক যার আইন বিষয়ে প্রয়োজনীয় ডিগ্রি আছে তিনি এ পেশায় আসতে পারেন। একজন বিচারক সমাজে অতি উঁচু মর্যাদায় সমাসীন। এ পেশায় আসতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা।
নিয়োগ প্রক্রিয়া
বর্তমানে Judicial Service Commission- এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়। এ জন্য উক্ত Commission কর্তৃক আয়োজিত পরীক্ষায় একজন প্রার্থীকে অংশ গ্রহণ করতে হয়। এ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হলে প্রার্থীকে আইন বিষয়ে ডিগ্রিধারী হতে হয়। এছাড়াও সুপ্রীম কোর্টেও বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে একজন আইনজীবী (Advocate) – কে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্যূন দশ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয় অথবা কোনো বিচার বিভাগীয় পদে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
এ পেশার সুযোগ সুবিধা
আইন পেশা একটি স্বাধীন পেশা। একজন সৎ ও যোগ্য আইনজীবী সমাজের উঁচু আসনে সমাসীন ব্যাক্তি হিসেবে সকলের নিকটই স্বীকৃত। তাই সর্ব পর্যায়ের মানুষের নিকট ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পাওয়া যায় এ পেশায় গেলে। আইডি কার্ড দেখার পর কোন পুলিশ অন্যান্য সাধারণ মানুষদের মত একজন আইনজীবীকে গ্রেফতার করতে এবং তাকে ঘাটতে ও হয়রানি করতে আসে না। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত- এমন অনেক স্থানেই তাঁর প্রবেশপথে কেউ বাধা দিতে আসে না। আইনজীবী পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানসমূহে ন্যায়সঙ্গত অনেক Extra সুবিধা ও সম্মান পাওয়া যায়। সর্বোপরি ধনী-গরীব, শিল্পপতি, ক্রোড়পতি বা রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সর্ব পর্যায়ের মানুষ একজন সফল আইনজীবীকে সমীহ করে চলে।
জনসেবার সুযোগ
সমাজে এ পেশার গুরুত্ব যেমনই অপরিসীম তেমনই জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবার্থে ভূমিকা পালনের মত আইনজীবীর অভাবও প্রকট। অন্যদিকে জীবনের বিবিধ ক্ষেত্রের সমস্যা নিয়ে কখনও পক্ষ কখনও প্রতিপক্ষ হয়ে আদালতের আশ্রয় নিতে হয় প্রায় প্রতিটি মানুষকেই। আর আদালত কেন্দ্রিক এবং আইনগত অন্যান্য সমস্যাগুলোই মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা- যার সমাধান তার নিজের পক্ষে তো নয়ই বরং অন্য কোন রথি মহারথিকে দিয়েও সম্ভব নয়, একমাত্র আইনজীবী ছাড়া। তাই যোগ্য ও ভাল আইনজীবীর প্রয়োজনে ছুটে বেড়াতে হয় গুটি কয়েক আইনজীবীর দ্বারে দ্বারে।
সুতরাং খুব সহজেই আমাদের নিকট অনুমেয় হবার কথা যে, জনসেবার বিপুল সুযোগ ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে আইন পেশায়।
এ পেশার স্বাদ বা মজা
সমাজের সকল বিভাগে এবং মানব জীবনের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ অপরাধ ও সমস্যা জেঁকে বসে আছে, যার মোটামুটি একটি স্বচ্ছ চিত্র আইনজীবীর চোখে ধরা পড়তে বাধ্য। মজাটা এখানেই। মানুষের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের একান্ত সমস্যাগুলো যা সে অন্যদেরকে বলতে পারে না, বলতে চায় না- তা অনায়াসে আইনজীবীর নিকট উগরে দিয়ে থাকে।
একজন কোটিপতির জীবনের সমস্যা এবং একজন নিঃস্ব সহায়সম্বলহীন সমাজের নীচু তলার মানুষের সমস্যার স্বরূপগুলো কেমন- তার একেবারে গভীরে প্রবেশ করে হয়তো বা নিজেকে একজন আইনজীবী নতুনভাবে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় কখনও কখনও। কখনও হয়তো বা তার ব্যক্তিগত জীবন দর্শনও পাল্টে যায় এমনতর নানান ঘটনার দোলাচলে। এসব দিক সহ সকল মানুষের মাঝে শ্রদ্ধা, সম্মান, আত্মমর্যাদা এবং সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আত্মতৃপ্তির সাথে বেঁচে থাকার মজাতো আছেই।
তথ্য প্রযুক্তি
আদিকাল থেকে মানুষ নিজেদের উন্নতির জন্য, সমাজের উন্নতির জন্য, জীবনকে আরো উপভোগ্য করে তোলার জন্য বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে তুলেছে। সভ্যতার বিকাশের সাথে যে কয়েকটি পেশা ওতপ্রোতভাবে জড়িত তার মধ্যে একটি হলো প্রকৌশল বিদ্যা। এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে মানুষের উদ্ভাবনীশক্তি, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, প্রখর কল্পনা শক্তি, বাস্তব জ্ঞান, সমস্যা সমাধানের মানসিকতা ইত্যাদি।
বিজ্ঞানের এ ক্রমবিকাশের সাথে সাথে আমরা পুরো বিশ্বকে একটি গ্রামের (Global village) সাথে তুলনা করতে পারি। পুরো বিশ্বের সমস্ত তথ্যাদি নিমিষেই সংগ্রহ করতে পারি। বিশ্বের যেকোন প্রান্তের মানুষের সাথে টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারি। তাই বর্তমান যুগকে বলা হয় তথ্য প্রযুক্তির যুগ।
যে দেশ বা জাতি প্রযুক্তিতে যত ভাল সে দেশকে বর্তমানে তত উন্নত দেশ বলা হয়ে থাকে। অপরদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী লোকদের তালিকা থেকে আমরা দেখতে পাই প্রথম স্থানসহ প্রথম দশজনের অনেকেই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসার সাথে জড়িত।
অতএব আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি মনবুদ্ধি বিকাশ সাধনের জন্য, নিজেকে পুরোপুরি উপস্থাপনের জন্য, অর্থ-বিত্তশালী হওয়ার জন্য, সমাজে সম্মানজনক অবস্থানের জন্য আমরা তথ্য প্রযুক্তি ও প্রকৌশর বিদ্যাকে গ্রহণ করতে পারি।
এ পেশার সাথে জড়িত বিষয়গুলো হচ্ছে-
(ক) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (CSE)
(খ) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি (CIT)
(গ) তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল (EEE)
(ঘ) ইলেক্ট্রনিক ও কমিউনিকেশন প্রকৌশল (ECE)
(ঙ) ইলেক্ট্রনিক ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশল (ETE)
(চ) তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত কোর্সসমূহ
বাংলাদেশের মানুষ হিসাবে আমরা জীবন ধারণের জন্য দেশে বা বিদেশে সরকারি বা বেসরকারি চাকুরি করে থাকি। তথ্য প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশুনা করার পর একজন ছাত্র দেশে অথবা বিদেশে অতি সহজে সম্মানজনক চাকুরি পেতে পারে। তার জন্য খোলা রয়েছে দেশে-বিদেশে সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য চাকুরির সুযোগ। প্রয়োজনে সে তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত ব্যবসা অতি সহজে শুরু করতে পারে।
এছাড়া অতি মেধাবী, উদ্যমী ছাত্রদের জন্য রয়েছে বিশাল গবেষণার সুযোগ যা থেকে তার সম্মান ও অর্থ দুটোই পাওয়া সম্ভব।
এই বিষয়গুলো অধ্যয়নের মাধ্যমে নিম্নোক্ত পেশাসমূহ বেছে নেওয়া যেতে পারে-
(ক) টেলিকমিউনিকেশন
– মোবাইল কোম্পানিসমূহ (গ্রামীণ ফোন, একটেল, সিটিসেল, বাংলালিংক, টেলিটক, ওয়ারিদ টেলিকম ইত্যাদি)।
– মোবাইল কোম্পানির সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান (সিমেন্স, এরিকসন, নোকিয়া, হুয়াই ইত্যাদি)।
– মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত কোম্পানিসমূহ
– ল্যান্ডফোন (র্যাংগস, বে-ফোন, যুবক ফোন, সেবা টেলিকম, ইত্যাদি)
– সরকারি চাকুরি-টিএন্ডটি, বেতার, টেলিভিশন, ইন্টারনেট (Optical Fiber), Railway, গণপূর্ত (BCS-এর নমুনা বিজ্ঞাপ্তি দেখুন)।
(খ) বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন ও বন্টন
– সরকারি চাকুরি- Power station. Power grid, Power distribution (DESA, DESCO, পল্লী বিদ্যুৎ)
– বিদেশী কোম্পানিসমূহ (বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বন্টন সংক্রান্ত)
(গ) ইলেক্ট্রনিক্স
– ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী প্রস্তুতকারক কোম্পানীসমূহ (বৈদেশিক)
– বাংলাদেশী ঐ কোম্পানিগুলোর দপ্তর বা ডিলার (SINGER, RANGS, TOSHIBA, KONIKA, KONKA ইত্যাদি)
– মেডিকেল Diagnostic যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহ (SIMENS ইত্যাদি)
(ঘ) সফটওয়ার নির্মাণ
– সফটওয়ার ডেভেলপার কোম্পানিসমূহ (দেশী/বিদেশী)
– Private firm
– Corporate Company
– Consultancy
– Outsourcing
(ঙ) হার্ডওয়ার
– কম্পিউটার যন্ত্রাংশ নির্মাণ (বৈদেশিক)
(চ) নেটওয়ার্কিং ও নিরাপত্তা
– অনলাইন ব্যাংকিং
– ওয়েব ডিজাইনিং
-ISP (Internet Service Provider)
– Network Security Specialrst
– Consultancy
(ছ) শিল্পকারখানা
-বিভিন্ন কারখানার যন্ত্রপাতি প্রস্তুত ও রক্ষণাবেক্ষণ
– বৃহৎ শিল্পকারখানার স্বয়ংক্রিয়া ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ
(জ) তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত ব্যবসা
– সফটওয়্যার তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান গঠন
– বিদেশী কোম্পানির দেশীর সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠন
– বিভিন্ন হার্ডওয়্যার বিক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান গঠন
– – Consultancy firm গঠন
(ঝ) শিক্ষকতা
– স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সমূহে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষকতা
– ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক ইনিষ্টিটিউটে শিক্ষকতা
– বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে শিক্ষকতা
– বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা
(ঞ) স্বাধীন পেশা (Freelancer)
– ঘরে বসে থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের Freelancer হিসাবে কাজ করা- যার মধ্যে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট Outsourcing কাজ রয়েছে।
(ট) অন্যান্য পেশাসমূহ
তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন কোর্স করে আরো কিছু কাজের ক্ষেত্র বের করা সম্ভব
-প্রোগ্রামিং (সিসি++, জাভা, ভিজুয়াল বেসিক ইত্যাদি)
– ওয়েব ডিজাইনিং (HTML, Scripting, Java, Flash ইত্যাদি)
– এনিমেশন (3D Studio Max, Flash, Maya ইত্যাদি)
– Video editing
– Computer game making
-Office automation
– CCNA, MCSE, CCSP CCDP ইত্যাদি।
উপরোক্ত পেশাসমূহের তালিকা দেখে আমরা অতি সহজেই বুঝতে পারি তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিষয়ক subject এর বিশাল সম্ভাবনার সমাহার। এ সমস্ত পেশায় ভালো ও সম্মানজনক অর্থ উপার্জন সম্ভব। এছাড়াও এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সামাজিক মর্যাদা অনেক উঁচু মানের হয়ে থাকে।
এ পেশার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো গবেষণার অফুরন্ত সুযোগ। এ সুযোগ যেমনি নিজে করে নেয়া যায়, তেমনি প্রতিষ্ঠান নিজির প্রয়োজনেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সুযোগ করে দেয়। যেকোন প্রতিষ্ঠানের সাথে ভালোভাবে সম্পৃক্ত হতে পারলে, তারাই দেশে- বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা করে থাকে। এজন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগও রয়েছে।
উচ্চশিক্ষার মধ্যে রয়েছে MS,PhD ও বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রি। দেশের মধ্যে রয়েছে BUET, DU, JU, এছাড়া বিদেশে রয়েছে অসংখ্য সুযোগ। বিদেশের মধ্যে USA, Canada, UK, Australia, Japan, Germany, South Korea অগ্রগণ্য। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের Scholarship রয়েছে। তবে সেগুলো শিক্ষকতা ও গবেষণাকে উদ্বুদ্ধ করে- যেমন Commonwealth Scholarship, Monoboshu Scholarship ইত্যাদি।
এছাড়া বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে Website ও গবেষকদের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন ধরনের Scholarship এর ব্যবস্থা করা যায়। এই সব Scholarship এর মাধ্যমে যেমনি ভালো গবেষণা ও ডিগ্রি অর্জন করা যায় তেমনি ভালো পরিমাণে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়।
একজন প্রকৌশলী হিসাবে ও উপরোক্ত পেশাসমূহে অংশগ্রহণের জন্য চাই উল্লেখিত বিষয়সমূহে BSc বা সমমানের ডিগ্রি যা বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় কোর্স করার জন্য রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
এ পেশায় অংশগ্রহণের জন্য HSC তে অবশ্যই Physics, Chemistry ও Math থাকতে হবে। SSC তেও বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা করতে হবে। যেহেতু এই পেশাটি খুবই লোভনীয় তাই চান্স পাওয়াটাও কিছুটা কষ্টকর হয়ে থাকে। এজন্য চাই SSC ও HSC তে ভাল GPA (GPA-5 হলে ভালো হয়) এছাড়াও HSC তে Physics, Chemistry ও Math বিষয়ে অবশ্যই ভালো গ্রেড পেতে হবে।
এখানে আরো কিছু ব্যাপার লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। যে সকল ছাত্র বিভিন্ন প্রকার গাণিতিক সমস্যা নিজে সমাধান করতে ভালবাসে, মুখন্থ বিদ্যার পরিবর্তে বুঝে ও উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে পড়াশুনা করতে ভালবাসে, নিজের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে ভালবাসে, সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ করতে ভালোবাসে, নিজের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে ভালবাসে, সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ করতে ভালোবাসে, যারা দৃঢ়চেতা, কোন কাজ ধরলে শেষ না করে ক্ষান্ত হয় না তাদের জন্যা এ পেশা ভালো Adjust করবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে পারি যে, এই পেশার সাথে মানব সভ্যতার অগ্রগতি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। সুতরাং এটি মূলত মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির সেবার মাধ্যমে জনসেবারই নামান্তর। বিচ্ছিন্নভাবে জনসেবার সুযোগও রয়েছে এ পেশার মাধ্যমে।
প্রস্তুতি পদ্ধতি
স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা করা, পাশাপাশি গণিতের বিভিন্ন সমস্যা নিজে সমাধানের চেষ্টা করা। Physics ও জ্যামিতির উপর ভালো জ্ঞান রাখা। বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা যেমন কুইজ, IQ, গণিত অলিম্পিয়ার্ড প্রভৃতি।
SSC তে অকশ্যই Science গ্রুপে পড়াশুনা করা এবং ভালো GPA অর্জনের চেষ্টা করা। Math ও Physics এর সমস্ত সমস্যা (অনুশীলনী ও অন্যান্য) সমাধান করা, এবং এক্ষেত্রে যথা সম্ভব নিজের বুদ্ধি ও উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগানো। HSC পাশের পর ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করা ও একই সাথে বিষয় নির্ধারণ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার সময় সমস্ত বিষয়ে ভালো জ্ঞান অর্জন করা। বিভিন্ন সেমিনার, কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করা। কিছু প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক রাখা। সর্বোপরি চোখ কান খোলা রেখে নিজের বুদ্ধি ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানো।
বাংলাদেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা-
BUET, DU, IUT, JU, RUET, KUET, DUET, CUET, SUST, KU, NSU, AIUB, BRAC University, NUB, STAMFORD, UIU ইত্যাদি।
প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠান-
-দেশে IEB, BCC ইত্যাদি
– বিদেশে IEEE, ACM ইত্যাদি
ভূমিকা
লেখালেখিতে যিনি আনন্দ পান সাংবাদিকতাকে তিনি পেশা হিসেবে নিতে পারেন। পৃথিবী নামক এ গ্রহে ঘটে যাওয়া প্রতিদিনকার সংবাদ প্রবাহ যার মধ্যে আগ্রহের জন্ম দেয় তিনি সাংবাদিকতায় ভাল করবেন। বিশ্লেষণী শক্তি দিয়ে মানবজীবন ও মানব সমাজকে আলোচনা, সমালোচনা ও বিবেচনায় যার পক্ষপাতিত্ব তিনি সাংবাদিকতায় সন্তুষ্ট হতে পারেন। নিরপেক্ষ মানসিকতায় যিনি সমাজ ও নিজেকে সবসময় হালনাগাদ (up-to-date) দেখতে চান তাঁর জন্য এ পেশা কল্যাণের। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি যিনি নিজেকে ঋণী মনে করেন সাংবাদিকতা পেশার মাধ্যমে এ ঋণ পরিশোধের সুযোগ তাঁর অনেক বেশি। ন্যায়, কল্যাণ ও আদর্শের সেবায় সাংবাদিকতার বিকল্প নেই। মোটকথা পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা এখন অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য, সময়োপযোগী এবং সম্ভাবনাময়।
সাংবাদিকতা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ-
পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা এদেশে এখন পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক এবং সম্ভাবনাময়। বিশ্বায়নের প্রভাবে এবং গণতন্ত্র বিকাশের সাথে সাথে মিডিয়া, রাষ্ট্রযন্ত্র ও সমাজের অন্যতম শক্তিশালী অংশ হয়ে দেখা দিচ্ছে। ফলে প্রসারের সুযোগ পাচ্ছে সংবাদ মাধ্যমগুলো। দেশি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বিদেশীরাও আগ্রহ দেখাচ্ছে সম্ভাবনাময় এ সেক্টরে। আসছে বিপুল পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ। ফলে বিনোদনমূলক টিভি ও রেডিও চ্যানেলের পাশাপাশি বাংলাদেশে ২৪ ঘন্টার বাংলা নিউজ চ্যানেল ও মিউজিক চ্যানেল চালু হচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সংবাদ কেন্দ্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- সংবাদ সংস্থাগুলো। এই কিছুদিন আগেও যেখানে সাংবাদিকতা বলতে সংবাদপত্রে কাজ করা বুঝাতো সেখানে এখন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অপ্রতিরোধ্য অবস্থা। ফলে প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া যৌথভাবে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রকে করছে অনেক বেশি প্রসারিত। প্রসারের সাথে সাথে বাড়ছে প্রতিযোগিতা।
এ পেশার জন্য প্রয়োজন
পূর্বে সংবাদ মাধ্যমে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা বা নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে (যেমন- সাংবাদিকতা) ডিগ্রি থাকার দরকার ছিল না। যেকোন বিষয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত পছন্দে বা আগ্রহে সাংবাদিকতায় আসতে পারত। এখনও সাংবাদিকতায় নিয়োজিত এদেশীয় সংবাদকর্মীদের সিংহভাগের সাংবাদিকতা বিষয়ে একাডেমিক ডিগ্রি নেই। কিন্তু সাংবাদিকতায় গুণগত মান নিশ্চিত করার তাগিদে এখন মানসম্পন্ন সংবাদ সংস্থা, টিভি ও রেডিও চ্যানেল এবং সংবাদপত্রগুলো সাংবাদিকতায় ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সাংবাদিকতায় গ্রাজুয়েট সংখ্যা কম হওয়ায় বাংলাদেশে এখনও যেকোন বিষয়ের শিক্ষার্থীদের সাংবাদিক হবার সুযোগ অবারিত। এমতাবস্থায় এ রচনার ভূমিকাতে বর্ণিত বিষয়সমূহে যারাই সচেতন তারাই Career হিসেবে সাংবাদিকতাকে গ্রহণ করতে পারেন।
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এখন বিকাশমান একটি সেক্টর বাংলাদেশে। এ সেক্টরে আগ্রহী ব্যাক্তিগণের অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি ভাষার সুন্দর উচ্চারণ, কথা বলায় মুন্সিয়ানা, পোশাক পরিচ্ছদের প্রতি সচেতনতা সর্বোপরি ব্যক্তিগত Smartness বজায় রাখা প্রয়োজন। কারণ এখানে বিষয়গত দক্ষতার পাশাপাশি প্রদর্শনের একটি ব্যাপার বিদ্যমান।
বিশ্বায়নের প্রভাবে সাংবাদিকতা এখন একটি বৈশ্বিক প্রফেশন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সংবাদ সংস্থাগুলো নিজেদের ব্যবসা ও অন্যান্য স্বার্থের কারণে বিভিন্ন দেশে তাদের সংবাদদাতা নিয়োগ করে থাকেন। বাংলাদেশেও এ ধরনের বহু বিদেশী সংবাদ মাধ্যম ও সংবাদ সংস্থা বর্তমানে তাদের রিপোর্টার হিসেবে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়োগ দেন। এক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের পাশাপাশি বহুল ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজির উপর ব্যাপক দক্ষতা থাকা অপরিহার্য।
শুরুর সময়-
ছাত্রজীবনই সাংবাদিকতা শুরুর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এদেশে সাংবাদিকদের প্রায় শতভাগ ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতা পাঠ শুরু করেন। যারা সাংবাদিকতা কিংবা অন্যান্য বিষয়ে পড়েন কিন্তু সাংবাদিক হতে চান তাঁরা সকলে লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্রজীবনেই কোন না কোন সাংবাদপত্রে সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ফলে লেখাপড়া শেষে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশের পূর্বেই প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাটুকু অর্জিত হয়। সুতরাং স্নাতক প্রথম অথবা দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই একজন ভবিষ্যত সাংবাদিককে কাজ শুরু করা উচিত।
উপসংহার
সাংবাদিকতাকে কেউ যদি পেশা (Career) হিসেবে নিতে চান তাহলে যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো সাংবাদিকতা ক্রমাগত অনুশীলনে হয়ে উঠা একটি প্রফেশন। গভীর মমতা, ধৈর্য্য, সুক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ এবং দীর্ঘ অনুশীলনে এ পেশা আপনাকে পৌছে দিতে পারে সফলতার শীর্ষ চূড়ায়। আপনি হয়ে উঠতে পারেন জাতির গর্বিত সন্তান।
মিডিয়া টেকনোলজি
(Media Technolgy)
ভূমিকা
প্রযুক্তির প্রভাবে গুহাবাসী আদিম মানুষ এখন পৃথিবী থেকে বহু হাজার মাইল দূরের ভিনগ্রহে বসবাসের স্বাদ পেতে যাচ্ছে। জীবনের প্রতিটি অর্জন এখন প্রযুক্তিময়। প্রযুক্তির স্পর্শ ছাড়া সমৃদ্ধ, সুন্দর এবং আনন্দময় মানব জীবন এখন ভাবনার অতীত। আধুনিক মানুষের জীবন ভাবনায় অন্যতম প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান হচ্ছে গণমাধ্যম বা মিডিয়া, যার সিংহভাগ প্রযুক্তি নির্ভর। গণমাধ্যমের সাহায্যে মানুষের উপর যে প্রভাব বিস্তার করা যায় অন্যকোন মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। এ কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হওয়া সত্ত্বেও ইহুদিরা শুধুমাত্র মিডিয়াকে ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী তাদের প্রভাব অক্ষুন্ন রেখেছে যুগের পর যুগ। কিন্তু মিডিয়া পরিচালনার জন্য পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং সে প্রযুক্তি প্রয়োগের জন্য দক্ষ প্রযুক্তিকর্মী – যারা মিডিয়ার নেপথ্য নায়ক।
মিডিয়া টেকনোলজিতে বাংলাদেশ
বহু আগে থেকেই বাংলাদেশে মিডিয়া টেকনোলজির ব্যবহার ছিল, সিনেমা, নাটক, টিভি প্রোগ্রাম নির্মাণ, পত্রিকা প্রকাশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে। হালে স্যাটেলাইট সম্প্রচার ও কম্পিউটার প্রযুক্তির কারণে এ গতিতে অভূতপূর্ব নতুন মাত্রা সংযুক্ত হয়েছে। ফলে চাহিদা বেড়েছে-মিডিয়া টেকনিসিয়ানদের। Media related যন্ত্রপাতি অপারেটরদের এ কাজ এখন বাংলাদেশে একটি মূল্যবান পেশা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। তাছাড়া বহির্বিশ্বেও এ পেশার লোকদের চাহিদা ব্যাপক।
মিডিয়া টেকনোলজি যেভাবে
মিডিয়া টেকনোলজি গণমাধ্যমের নানাবিধ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে শুধু মিডিয়ার ক্ষেত্রে যেগুলো দরকার তা হলো-প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রে প্রেস পরিচালনায় দক্ষ টেকনিশিয়ান এবং ফটো সাংবাদিক। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে বিষয়টি ব্যাপক, কারণ Audio এবং Video দুটি বিষয়ই ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সমভাবে প্রযোজ্য। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আধুনিক বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা পরিচালনার দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। ক্যামেরায় ধারণকৃত বিষয়গুলো এডিটিং, ডাবিং, রেকর্ডিং ইত্যাদি প্রয়োজনে ল্যাব অপরিহার্য। ল্যাব মানেই সেখানে প্রয়োজন টেকনিসিয়ান।
যেভাবে এ পেশায় আসা যায়
ব্যক্তিগত আগ্রহ হচ্ছে এ পেশায় আসার একমাত্র উপায়। শখ হিসেবে এক সময় যে ব্যক্তিবর্গ ক্যামেরা হতে নিয়েছিলেন- তাদের অনেকেই এখন এ বিষয়ের পেশাজীবী। যেকোন একাডেমিক যোগ্যতা নিয়ে এ ক্ষেত্রে কাজ করা যেতে পারে। তবে এ পেশায় উন্নতি করতে হলে ট্রেনিং ও একাডেমিক ডিগ্রির বিকল্প নেই।
আজকাল যে কেউ Video Photo ইত্যাদি প্রশিক্ষণ নিয়ে Photo সাংবাদিক অথবা Video সাংবাদিক হয়ে বিভিন্ন Audio, Video অথবা Print Media- তে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে পারেন। এজন্য মূলত দরকার একাগ্রতা এবং কাজকে আপন করে নেওয়ার মানসিকতা।
একজন শিক্ষার্থী ছাত্রাবস্থায়ই এ কাজ শুরু করতে পারেন। কারণ ডিগ্রি বড় হবার পাশাপাশি দক্ষতার ব্যবহারের ক্ষেত্র অনেক বড় হতে থাকবে। Print, Photo এবং Video একটি ডকুমেন্ট বা দলিল হিসাবে কাজ করে এবং তা মানুষের কাছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়।
এ বিষয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান
ক) জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউট
খ) প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (PIB)
গ) ফটোগ্রাফির উপর বিভিন্ন কোর্স-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় TSC- তে এ ধরনের সংগঠন আছে।
ঘ) ফটোগ্রাফিক ইনস্টিটিউট ইত্যাদি
এইচএসসি উত্তর সম্ভাবনাময় পেশাসমূহ
আমাদের দেশে সর্বাগ্রে ভাল চাকুরি পাওয়ার সুযোগ বলতে গেলে শুধুমাত্র সশস্ত্র বাহিনীতেই রয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরেই এই পেশায় প্রবেশের জন্য দরখাস্ত করা যায়। এখানে Chance পাওয়ার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে সাহসিকতা, প্রখর বুদ্ধিমত্তা, শারিরীক যোগ্যতা ও সুস্থতা, সঠিক (Proper) মনোস্তাত্ত্বিক মান, নেতৃত্বদানের যোগ্যতা, ক্ষিপ্রতা ইত্যাদি। সবকিছু মিলিয়ে বলা চলে শুধুমাত্র চৌকষ ছেলে/ মেয়েরাই এই পেশায় Selected হওয়ার উপযোগী। বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষার উপরে কথ্য এবং লেখ্য উভয় পর্যায়ে ভাল মানের দখল এই পেশায় সুযোগের অন্যতম পূর্ব শর্ত।
Selection পাওয়ার জন্য এখানে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এবং এর পরে দুই বছরের কঠিন ট্রেনিং গ্রহণ করতে হয়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী অর্থাৎ এ সকল ক্ষেত্রেই এই নিয়ম একই ধরনের। তবে সেনা মেডিক্যাল কোরের জন্য ক্যাডেট নির্বাচনে দু’ধরনের প্রথা চালু রয়েছে। প্রথমতঃ এইচএসসি পাশ করার পরে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নির্বাচিত হওয়া এবং সেনাবাহিনীর খরচে এম বি বি এস পড়া। আর্মড কোর্সেস মেডিকেল কলেজে এই ধরনের ক্যাডেটদেরকে এম বি বি এস ডিগ্রি অর্জন করার সুযোগ প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে প্রার্থী এম বি বি এম পাশ করার পরে আর্মি মেডিকেল কোরের অফিসার হিসাবে নির্বাচনী পরীক্ষাসমূহে অংশ গ্রহণ করবে।
সামরিক বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগের পাশাপাশি এইচএসসি পাশ Candidate- এর অল্প বয়সে ভাল চাকুরি পাওয়ার আরও একটি ভাল সুযোগ রয়েছে। তা হলো মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পেশা গ্রহণ করার। এই সুযোগও একই রয়সে আসে।
এসব পেশাসমূহে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণভাবে একটি নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। তা হলো নির্বাচিত হওয়ার পরে দুই বছরের ট্রেনিং। এই ট্রেনিং চলাকালীন ট্রেনিং-এর পাশাপাশি বিএ/বিএসসি ডিগ্রি অর্জনের জন্য অধ্যয়নের সুযোগ। তাই ট্রেনিং সমাপ্তির সাথে সাথেই Candidate গ্রেজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করে থাকে।
এই ট্রেনিং এর আর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তা হচ্ছে ট্রেনিং প্রাপ্তির পরে ব্যক্তি ভিন্ন ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হবে। বলা হয়ে থাকে যে কোথাও যদি একশত জন ব্যক্তি একত্রে জটলা করতে থাকেন আর সেখানে যদি সামরিক বাহিনীর একজন মাত্র অফিসার উপস্থিত থাকেন তবে তাকে সহজেই Identify করা যাবে। কেননা সামরিক বাহিনীর ট্রেনিং একজন ব্যক্তির চলা, ফেরা, বসা, দাঁড়ানো, কথা বলার ভঙ্গি তথা পম্পূর্ণ ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করে দেয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সমস্ত ক্ষেত্রে এই ট্রেনিং-এর প্রভাব অপরিসীম। এরা জানে ঝড়ের গতিতে সমস্যার অকুস্থলে পৌঁছাতে, ঠান্ডা মাথায় সমস্যার সমাধান করতে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে এবং দৃঢ় পদক্ষেপে গৃহীত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে। তাই সাহসী সৈনিক জীবন যুদ্ধে সাধারণত হেরে যায় না। বরং যুদ্ধ ক্ষেত্রের ক্ষিপ্রতা তার সকল কর্মকাণ্ডে পরিলক্ষিত হয়- এমনকি বেসামরিক কর্মক্ষেত্রেও। সে জানে সামষ্টিক কর্মকাণ্ডে কিভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়।
সামরিক বাহিনীতে কমিশন্ড প্রাপ্তি এবং মেরিন একাডেমীতে অধ্যয়নের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরে আলোচনা করা হলো।
দেশ যখন বহিশত্রুর আক্রমণের সম্মুখীন হয়। জাতীয় জীবনে যখন সমূহ বিপদের ঘনঘটা, স্বাধীনতা যখন সংকটময় অবস্থায় পৌঁছে, তেমনি দূর্দিনে এই সাহসী সৈনিকেরাই দেশের কান্ডারী হয়ে থাকেন। জীবন বাজী রেখে তারা এগোতে থাকেন শত্রু মুক্ত করার মানসে। এই যুদ্ধ জীবন-মরণের। তাই এর স্বাদ ভিন্নতর। দেশপ্রেম তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে যুদ্ধ ক্ষেত্রে সামনে এগোনোর, আর প্রেরণা যোগায় সমস্ত দেশবাসী সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে যেতে।
সশস্ত্র বাহিনীতে চাকুরি
সশস্ত্র বাহিনীতে চাকুরি প্রকৃতপক্ষে যৌবনের জন্য একটি উপযোগী পেশা। পেশা হিসেবে উত্তম ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে এটা একটা। এই পেশায় যেমন রয়েছে একদিকে সম্মান, দেশ সেবার সুযোগ, সুন্দরভাবে জীবন যাপনের সুযোগ আবার পাশাপাশি বেতন, ভাতা, প্রমোশন, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা। সর্বোপরি অল্প বয়সে ভাল চাকুরি পাওয়ার এটি সবচেয়ে বড় সুযোগ।
সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখা রয়েছে। এগুলো হলো- সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী। এই বাহিনীসমূহ যথাক্রমে স্থলভূমি, জলভূমি (সমুদ্র ভাগ) এবং আকাশ অঞ্চল পাহারা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা সর্বাপেক্ষা বেশি বলে সেনাবাহিনীর সেপাইদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই তাদের পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীর সেপাইদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই তাদের পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীর অফিসারদের সংখ্যাও বেশি প্রয়োজন হয়ে থাকে। সে কারণে সেনাবাহিনীতে প্রমোশনের সুযোগও বেশি হয়ে থাকে। এর পরে এই ধরনের সুযোগ যথাক্রমে নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
সাধারণভাবে এই তিনটি বাহিনীতে চাকুরির জন্য বা চাকুরি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলী হচ্ছে: সাহসিকতা, শৃংখলাবোধ, বুদ্ধিমত্তা, আনুগত্য, আজ্ঞানুবর্তিতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ইত্যাদি। বাংলাপ এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় লেখ্য ও কথ্য উভয় ক্ষেত্রেই ভাষার উপরে দখল এই পেশায় চাকুরি পাওয়ার প্রাথমিক শর্ত। এই বাহিনীসমূহে চাকুরি পাওয়ার জন্য উপরোক্ত গুণাবলী ব্যতিরেকেও শারীরিক যোগ্যতার প্রয়োজন রয়েছে। তা হলো ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা (কম পক্ষে) এবং শারীরিক ভাবে সুস্থতা। বুকের মাপ : পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৭৬ সে.মি. (স্বাভাবিক), ৮১ সে.মি. (সম্প্রসারিত); মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৭১ সে.মে (স্বাভাবিক), ৭৬ সে.মি. (সম্প্রসারিত)। বৈবহিক অবস্থা : অবিবাহিত। নৌবাহিনীর ক্ষেত্রে অবশ্যই সাঁতার জানতে হবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে সাধারণভাবে উচ্চ মাধ্যমেক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন:
সেনাবাহিনী : মাধ্যমিক/ উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট/ সমমান পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ২.৫০/ ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ। তবে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এমন প্রার্থীগণও শর্তসাপেক্ষে আবেদন করতে পারবে।
নৌবাহিনী : গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানসহ জিপিএ ৩.০/ ২য় বিভাগে এসএসসি (বিজ্ঞান)/ ও লেভেল এবং এইচএসসি (বিজ্ঞান), এ লেভেল অথবা সমমানের পরীক্ষায় পাস।
বিমান বাহিনী : উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান) পরীক্ষায় গণিতসহ দ্বিতীয় বিভাগ/ সমমানের জিপিএ ৩.০০ পেতে হবে। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এমন প্রার্থীরাও শর্তসাপেক্ষে আবেদন করতে পারবে।
বিমানবাহিনীর অন্যান্য শাখা : মেইন্টেন্যান্স টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং : মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগ/সমমান (জিপিএ-৩) সহ উভয় পরীক্ষায় গণিত ও পদার্থ বিদ্যায় সর্বনিম্ন ৫০% নম্বর অথবা সমতুল্য গ্রেডপ্রাপ্ত। এছাড়া মেইন্টেন্যান্স টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন এন্ড ইলেকট্রনিক্স এবং মেইন্টন্যান্স টেকনিক্যাল আর্মামেন্ট শাখায় একই ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। লজিস্টিক শাখার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ অথবা সমমান জিপিএ (৩.০০)। এটিসি (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) শাখার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ/সমমান (জিপিএ ৩.০০)। এডিডব্লিউসি (এয়ার ডিফেন্স ওয়েপন্স কন্ট্রোলার)-এর জন্য একই যোগ্যতা লাগে। একাউন্টস শাখার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান/ ব্যবসায় শিক্ষা) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ অথবা সমমান জিপিএ (৩.০০)। মেটিয়রলজি শাখার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান) পরীক্ষায় পদার্থ ও গণিতসহ দ্বিতীয়/ সমমান জিপিএ (৩.০০)।
প্রার্থীকে নিম্নোক্ত বয়স সীমার মধ্যে থাকতে হবে: ১৭ বৎসর- ২১ বৎসর
ভর্তি প্রার্থীর অযোগ্যতা
সেনা/ নৌ/ বিমান বাহিনী অথবা যে কোন সরকারি চাকুরি হতে অপসারিত/ বরখাস্ত।
আইএসএসবি কর্তৃক স্ক্রিনড আউট/ প্রত্যাখ্যান (একবার স্ক্রিনড আউট ও একবার প্রত্যাখ্যাত হলে আবেদন করা যাবে
যে কোন বিচারালয় হতে দণ্ডপ্রাপ্ত।
সিএমবি বা আপিল মেডিক্যাল বোর্ড কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত।
ক্রটিপূর্ণ/ অসম্পূর্ণ আবেদনপত্র।
সশস্ত্র বাহিনীতে অফিসার হওয়ার জন্য নিম্নলিখিত ধাপসমূহ অতিক্রম করতে হবে:
(ক) প্রাথমিক ইন্টারভিউ
এ পর্যায়ে শুধুমাত্র একটি মৌখিক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে প্রার্থীকে। যে সমস্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তা সাধারণতঃ প্রার্থীর নিজস্ব পরিচয় সম্পর্কিত, পরিবার সম্পর্কিত, যে বিষয়ে পড়াশুনা করছে সেই বিষয়ের উপরে, বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্ব সম্পর্কে। এর বাইরে কিছু মনস্তাত্তিক বিষয়ক প্রশ্নও জিজ্ঞাসা করা হতে পারে।
(খ) লিখিত পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষার সময় ও মানবন্টনঃ বিভিন্ন বাহিনীর ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার সময় ও মানবন্টন এক পলকে জেনে নেয়া যাক।
সেনাবাহিনী
বিষয় সময় নম্বর
বাংলা
ইংরেজী
গণিত
সাধারণ জ্ঞান ১ ঘন্টা
১ ঘন্টা
৩০ মিনিট
১ ঘন্টা ৫০
৫০
৫০
৫০
নৌবাহিনী
বিষয় সময় নম্বর
পদার্থ বিজ্ঞান
ইংরেজী
গণিত
সাধারণ জ্ঞান ১ ঘন্টা
১ ঘন্টা
১ ঘন্টা
১ ঘন্টা ১০০
১০০
১০০
১০০
বিমানবাহিনী
বিষয় সময় নম্বর
আইকিউ
ইংরেজী ১ ঘন্টা
১ ঘন্টা ১০০
১০০
এই পরীক্ষাসমূহে উচ্চ মাধ্যমিক মানের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। অবশ্য গনিতের প্রশ্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার সাধারণ গণিতের মানের মত প্রশ্ন হয়ে থাকে।
গ) ISSB পরীক্ষাঃ সশস্ত্র বাহিনীর নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হচ্ছে ISSB । এটা ৩/৪ দিনের পরীক্ষা যে সময়ের মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর অনেকগুলো পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে- (ক) আই কিউ (Intelligence Quotient), (খ) ব্যাক্তিগত বাধা অতিক্রম, (গ) দলগত বাধা অতিক্রম, (ঘ) অর্ধদলগত বাধা অতিক্রম, (ঙ) গল্প লেখা (ছবি দেখে এবং অসমাপ্ত গল্প সমাপ্ত করা), (চ) অতি অল্পসময়ের মধ্যে প্রদত্ত শব্দ ব্যবহার করে বাক্য গঠন, (ছ) অসমাপ্ত বাক্য সমাপ্ত করণ, (জ) প্ল্যানিং, (ঝ) রচনা লিখন, (ঞ) কিছু মনস্তাত্তিক বিষয়ক পরীক্ষা, (ট) ISSB এর প্রেসিডেন্টের সাথে ভাইভা।
এ সকল পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীকে অতি অল্প সময় দিয়ে অনেক কাজ করতে বলা হয়ে থাক দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে পারাই হচ্ছে এই পরীক্ষাসমূহের সবচেয়ে বড় বিষয়। এর বাহিরে দুটো বিষয় অতি জরুরি – পরীক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তা এবং তার মনস্তাত্তিক মান। সবগুলো পরীক্ষাতেই দ্রুততার সাথে বুদ্ধি খাটিয়ে উত্তর দিতে হয়। পরীক্ষার্থীর উপস্থিত বুদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এসকল পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে।
উপরোক্ত পরীক্ষা ছাড়াও আর এক ধরনের পরীক্ষা রয়েছে, তা হচ্ছে ডাক্তারী পরীক্ষা। বেশ নিখুত ভাবেই এই পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে পরীক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য।
ব্যক্তিগত বাধা অতিক্রম: পরীক্ষায় ভাল করার জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি দরকার। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীকে ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে ৮টি বাধা অতিক্রম করতে হয়। এগুলো হলো- উচ্চ লম্ফ (চার ফুট উচ্চতা), দীর্ঘ লম্ফ (নয় ফুট), টারজান সুইং, বার্মা ব্রীজ, উপরে ঝুলানো টায়ারের মধ্যে দিয়ে পার হওয়া, মানকিজ রোপ, Jig jug obstacle । এই বাধাসমূহে পাশ করার জন্যে শারীরিক stamina সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় কৌশলের প্রসঙ্গ বাদ দিলেও এই আড়াই মিনিট সময় পরিপূর্ণ রূপে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন প্রার্থীর শারীরিক stamina বৃদ্ধির। সেজন্যে প্রত্যহ কমপক্ষে ২ মাইল জগিং করা দরকার।
Presidenntial viva- তে ভাল করার জন্য সুন্দরভাবে কথা বলার দক্ষতা রপ্ত করতে হবে। ভাইভতে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ঠিকভাবে বুঝে অল্প কথায় সঠিক উত্তর দিতে হবে। ISSB পরীক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ অংশে ভাল করার জন্য সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপরে পড়াশুনা করতে হয়।
সশস্ত্র বাহিনীতে চাকুরি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। একই সাথে যেমন শারীরিক প্রস্তুতি দরকার পাশাপাশি ভাষার উপরে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য প্রার্থীকে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় লেখ্য ও কথ্য উভয় দিকেই যোগ্যতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা দরকার। এর জন্য জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া দরকার নিষ্ঠার সাথে।
ব্যাংকার
ভূমিকা একটি দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির অন্যতম পূর্ব শর্ত হল সেই দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধন করা। ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা অর্থনৈতিক অবকাঠামোর মূলস্তম্ভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। একটি দেশের ব্যাংকিং খাত যত বেশী সুপ্রতিষ্ঠিত সেই দেশের অর্থনীতি তত দ্রুত উন্নতি লাভ করবে। স্বাধীনতালগ্নে এই দেশে গুটিকয়েক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিানের সূচনা হলেও ৯০ এর দশকের পর এই দেশে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটেছে। বর্তমানে দেশে সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দেশের ব্যাংকিং কাঠামোতে এক আমূল পরিবর্তন এসেছে। এইসব ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান যেমনভাবে অবদান রাখছে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, তেমনিভাবে অবদান রেখে চলেছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধানে। অধিক বেতন আর সুন্দর ও স্বচ্ছল জীবন-যাপনের আশায় আজ দেশের বহু শিক্ষিত যুবক পেশা হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংককে বেছে নিতে শুরু করেছে।
কেন পেশা হিসেবে ব্যাংকে চাকুরি?
প্রায় ১৪.৪৪ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এদেশে বেকার সমস্যা একটি প্রকট সমস্যা। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৮ শতাংশ বেকার। তার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ শিক্ষিত বেকার। বেকার সমস্যা দূরীকরণের জন্য প্রয়োজন অধিক কর্মসংস্থান। ৯০ দশকের পর বাংলাদেশে একটি বিকাশমান কর্মসংস্থান হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৬ অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক ৪টি, বিশেষায়িত ব্যাংক ৫টি, বেসরকারি ব্যাংক ৩০টি, বিদেশী ব্যাংক ৯টি। এই সকল ব্যাংকগুলোর মোট শাখা রয়েছে ৬৪১২টি। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রসারের সাথে ব্যাংকিং খাতেরও প্রসার ঘটছে যেখানে প্রতিবছর কর্মসংস্থান হচ্ছে বহু শিক্ষিত বেকার যুবকের। ব্যাংক একটি চ্যালেঞ্জিং চাকুরি। পাশাপাশি রয়েছে অধিক বেতনের নিশ্টয়তা এবং উন্নত ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ। প্রযুক্তি প্রসারের এই যুগে ব্যাংককে পেশা হিসেবে নিয়ে দেশ বিদেশে নিজেকে একজন চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী যতই অর্থনীতির প্রসার ঘটবে ব্যাংক খাতেরও প্রসার ঘটবে সেই অনুপাতে। সুতরাং নিজেকে বেকারত্বের হাত থেকে মুক্ত করা, দেশকে অর্থনৈতিক উন্নতিতে সাহায্য করা, উন্নত জীবন-যাপন, নিজেকে দেশ বিদেশে অর্থ ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্যাংক হতে পারে একটি অন্যতম ক্ষেত্র।
সমাজে এই Profession এর প্রয়োজনীয়তা
ব্যাংকে চাকুরি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা, এই চ্যালেঞ্জিং পেশার মাধ্যমে সমাজকে বিভিন্ন ভাবে সেবা প্রদান করা যায়। যার মাধ্যমে সমাজে সামাজিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের শক্ত ভিত তৈরি করা যায়, যা সমাজে এই পেশার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য-
দেশ ও সমাজকে অর্থনৈতিক মুক্তি দান।
সমাজ থেকে দারিত্র বিমোচন করা।
অর্থনৈতিকভাবে নারী-পুরুষের সমতা আনয়ন।
ব্যাংক প্রদত্ত ঋণের অর্থ সঠিক ও বৈধ উপায়ে ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ভিতের উপর প্রতিষ্ঠা করা।
অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূর করা।
দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ।
ভু-স্বামী ও জোতদারদের হাত থেকে সমাজকে মুক্ত করা।
ঋণ প্রদান ও তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র মানুষদেরকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করা।
সমাজে সৎ ও যোগ্য মানুষ সৃষ্টিতে সহায়তা করা।
উপরোক্ত দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে একজন ব্যাংকার সমাজ ও দেশকে সহায়তা করতে পারে বিভিন্নভাবে। প্রতিষ্ঠা করতে পারে অর্থনৈতিক সুশাসন, মুক্ত করতে পারে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান যা দেশ ও জাতিকে দিতে পারে দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি। সুতরাং দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ, সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান লাঘব, সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা সর্বোপরি সমাজ ও দেশে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠায় একজন ব্যাংকার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে যা বহু পেশার মানুষেল দ্বারা সম্ভব নয়। তাই বলা যায় সমাজে একজন সৎ ও যোগ্য ব্যাংকারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
এই Profession এ যাওয়ার জন্য কোন ধরনের মানসিকতা প্রয়োজন
ব্যাংক যেহেতু একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা সুতরাং এই পেশায় আসার পূর্বে নিজেকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতার জন্ম দিতে হবে। সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, পরিশ্রম করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। উধ্বতনদের মতামতের প্রাধান্য দেওয়া, ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা ও অন্যের কাছ থেকে শেখার মানসিকতা থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
ব্যাংকিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য নিম্নলিখিত যোগ্যতা থাকতে হবে। যথা-
(ক) শিক্ষাগত যোগ্যতা। যে কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট হলে ব্যাংককে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ থাকবে, তবে বিশেষ করে বিবিএ ও এমবিএ (হিসাব বিজ্ঞান, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি) ডিগ্রি থাকলে বর্তমানে ব্যাংকে চাকুরি পাওয়ার জন্য সুবিধা হয়। তবে বিশেষ কোন বিষয় উল্লেখ না থাকলে যে কোন বিষয়ে পাশ করে ব্যাংকে চাকুরির জন্য আবেদন করা যেতে পারে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোতে অফিসার ও সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়োগ সকল বিষয়ের জন্য উন্মক্ত থাকে। তবে টেকনিক্যাল পোস্টে (যেমন কম্পিউটার) নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ থাকতে পারে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে নিয়োগের জন্য কর্মার্সের ছাত্রদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। Computer বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে বর্তমান ব্যাংকিং ব্যবস্থা Computer ভিত্তিক।
শারীরিক যোগ্যতা
সরকারি/ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের পূর্বে শারীরিক যোগ্যতা পরিমাপের জন্য মেডিকেল বোর্ডের মুখোমুখি হতে হয়। আর এই জন্য একজন প্রার্থীকে অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।
মানসিক যোগ্যতা
ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে সর্বদাই আর্থিক লেনদেনের হিসাব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। আর্থিক লেনদেনকে সঠিক ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন সততা ও কর্তব্য নিষ্ঠার। ব্যাংক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে সততা, নিয়মানুবর্তিত, সময়ানুবর্তিতা ও কর্তব্য নিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। আপনি যদি উল্লেখিত বিষয়গুলো নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তাহলে নিজেকে একজন ভলো ব্যাংকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
নিয়োগ পরীক্ষায় কৃতকার্য
ব্যাংকে চাকুরি পেশা হিসেবে নিতে হলে আপনাকে যোগদানের পূর্বে একটি প্রতিযোগিতা মূলক লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে।
লিখিত পরীক্ষা
ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, পরীক্ষা পরিচালনা ও খাতা মূল্যায়ন সংক্রান্ত সমূদয় কাজ মূলতঃ সম্পাদন করে থাকে আইবিএ ও বিআইবিএম। এর ফলে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য থাকে না। দুই অংশে বিভক্ত (MCQ I Written) পরীক্ষার সময় ৩ ঘন্টা (১ ঘন্টা + ২ ঘন্টা) ও পূর্ণমান ২০০ (১০০+১০০)। তবে এটি ব্যাংক ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। MCQ অংশের সবকটি প্রশ্নের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি ভাষা, গাণিতিক যুক্তি, আইকিউ, দৈনিন্দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নে ৩৫/৪০ নম্বরের গাণিতিক বিষয় আসে। এছাড়া English Language & Communication Skill, Grammar & Composition থেকেই ৪০/৫০ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়। অন্যান্য যে বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে সেগুলো হচ্ছে ব্যাংক সংক্রান্ত, IQ Test, Computer literacy, Data Presentation ইত্যাদি। তবে ইসলামী ব্যাংকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন পত্রে একটি অংশ থাকে ইসলামী বিষয়ের উপর।
মনে রাখতে হবে লিখিত পরীক্ষা মোটামুটি Standard এবং ইংরেজি বিষয়ের উপর বেশি নজর দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার কোন নির্দিষ্ট নম্বর নেই তবে সাধারণত ৭০ শতাংশ এর উপর নম্বর পেলে কৃতকার্য হওয়া যেতে পারে। সুতরাং একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রচেষ্টার মাধ্যমে আপনি নিজেকে লিখিত পরীক্ষার জন্য তৈরি করে তুলতে পারেন। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য সহজ ও সোজা কোন পথ নেই। এর জন্য আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদী এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
মৌখিক পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার পর প্রার্থীকে একটি মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। এখানে আপনাকে বিষয়ভিত্তিক, চাকুরি সংক্রান্ত, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞানের (বিশেষ করে চলমান বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গের) উপর প্রশ্ন করা হতে পারে। মনে রাখতে হবে মৌখিক পরীক্ষায় একটি পদের জন্য একাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। তাই এখান থেকেও বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে কৃতকার্য হওয়ার জন্য নিজেকে তথ্য বহুল করে গড়ে তুলতে হবে।
এই পেশার সুযোগ সুবিধা
ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এর মাধ্যমে দেশ ও সমাজকে সেবা করার যেমন সুযোগ আছে তেমনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার ও বিশেষ সুযোগ সুবিধা আছে। যেমন-
(ক) Social Status: সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ আছে এই পেশার মাধ্যমে। যার কারণে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষ একজন ব্যাংকারকে শ্রদ্ধা করে থাকেন যদি তিনি একজন সৎ ও কর্তব্য পরায়ন ব্যাংকার হয়ে থাকেন। সমাজের বিভিন্ন প্রকার নীতি নির্ধারণে একজন ব্যাংকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যা তার Social Status কে বৃদ্ধি করে থাকে।
(খ) পদোন্নতির সুযোগ: প্রত্যেক চাকুরিজীবী তার চাকুরি জীবনে পদোন্নতির আশা করে থাকে। সময়মত পদোন্নতি হলে কাজে আসে গতিশীলতা। ব্যাংকে দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া যায় যদি আপনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন একজন কর্মঠ, কর্তব্যপরায়ণ, সৎ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিষ্ঠাবান অফিসার হিসেবে।
(গ) বেতন ভাতার সুযোগ সুবিধা: সরকারি ব্যাংকগুলোতে জাতীয় বেতনস্কেল অনুসারে বেতন প্রদান করা হয়। তবে এখানে রয়েছে ভবিষ্যৎ তহবিল সুবিধা, কর্মচারী কল্যাণ সুবিধা, যৌথ বীমা সুবিধা, মেডিক্যাল সুবিধা, বেনা ভোলেন্ড ফান্ড সুবিধা, বাসা ভাড়া সুবিধা, বোনাস সুবিধা ইত্যাদি। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকে জাতীয় বেতনস্কেলের পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে সঠিক হারে বেতন প্রদান করে থাকে যা এই চাকুরিতে আসার জন্য সবাইকে আকৃষ্ট করে থাকে। এখানে রয়েছে যাতায়াত ভাতার সুবিধা, বাড়ি ভাড়া সুবিধা, পিএফ সুবিধা একাধিক বোনাস সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা।
(ঘ) ঋণ পাওয়া সুবিধা: একজন ব্যাংকার হিসেবে আপনি আপনার ব্যাংক থেকে ব্যাংক রেটে House building loan, Car loan, Motor cycle loan, Marriage loan, Computer loan, সহ অন্যান্য loan পেতে পারেন যা অন্য কোন চাকুরি থেকে ব্যাংক রেটে পাওয়া সম্ভব নয়। এই Loan পরিশোধ করাও আপনার জন্য সুবিধা। করাণ বেতন থেকে তা কর্তনের মাধ্যমে Adjust করা হয়।
(ঙ) প্রশিক্ষণ সুবিধা: ব্যাংক চাকুরি করার সুবাদে আপনি আপনার চাকুরি জীবনে Basic Training থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন যা আপনাকে একজন সঠিক Prefessional person হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। অধিকতর যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারলে আপনি বিদেশেও প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতে পারেন। ব্যাংক যেহেতু একটি টেকনিক্যাল পেশা সেহেতু এখানে প্রশিক্ষণের সুবিধা অনেক বেশি। (Basic Training, Credit Management Training, Time Management Training, Human Resources Development Training, Computer Training, File Management Training, Import & Export Management Training, Money Laundering Training, Branch Management Training, Rural Credit Management Training, Small and Cottage Industries Development Training ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুবিধা আছে)।
জনসেবার সুযোগ
মানুষের বেশিরভাগ পার্থিব কর্মকান্ডের মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ব্যাংক জনসাধারণকে নিয়ে কাজ করে থাকে। তাই একজন ব্যাংকার হিসেবে অন্য যে কোন পেশার চেয়ে সমাজকে সেবা করার সুযোগ অনেক বিশি। নিম্নলিখিতভাবে আপনি ব্যাংকার হিসেবে সমাজকে সেবা করতে পারেন। যথা :-
(ক) Micro Credit এর মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করা।
(খ) ব্যাংকের অর্থ ঋণ গ্রহীতাকে প্রদান ও তা সঠিক তদারকীর মাধ্যমে শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নে সাহায্য করা।
(গ) মানুষের কাছে পড়ে থাকা অলস অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে এবং তা ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়তা দান করা।
(ঘ) একজন সৎ কর্তব্যপরায়ণ নিয়মানুবর্তী, সহযোগী ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিদেরকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে যা দেশ ও জাতির বড়ই প্রয়োজন।
কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন
অধিক জনসংখ্যায় ভরপুর এবং বেকারত্বের অভিশাপ যুক্ত এই দেশে চাকুরি একটি সোনার হরিণ। এই সোনার হরিণকে বাগে পাওয়ার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রমের। প্রতিবছর হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হয়ে প্রবেশ করছে চাকুরি বাজারে। সেইভাবে সৃষ্টি হচ্ছে না কর্মসংস্থানের। লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবকের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মাধ্যমে আপনাকে ধরতে হবে চাকুরি নামের সোনার হরিণটি। নিম্নলিখিতভাবে প্রস্তুতি নিলে একজন ব্যাংকার হিসেবে চাকুরি নামের সোনার হরিণটি ধরা গেলেও যেতে পারে। আর এ জন্য দরকার
(ক) বিষয়ভিত্তিক পড়া লেখা সঠিকভাবে পরিচালনা করা।
(খ) ইংরেজি শিখার উপর জোর দেওয়া এবং প্রতিদিন তা চর্চা করা।
(গ) সাধারণ জ্ঞান শেখার পাশাপাশি আই কিউ বৃদ্ধি করা।
(ঘ) নিয়মিত পত্রিকা পাঠ এবং তা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে নথিভূক্ত করা।
(ঙ) Time table & life table প্রণয়নের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা।
(চ) দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া, (গানিতিক যুক্তির জন্য ৯ম/১০ম শ্রেণীর পাটিগনিত, বীজগনিত, জ্যামিতি ও অংশিদ্বারিত্বের অংক বেশি চর্চা করা)
(ছ) বেশি বেশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা (এই ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কিংবা বাজার থেকে প্রশ্নব্যাংক বই কিনে তা চর্চা করা)।
(জ) ইসলামী জ্ঞান চর্চা করা।
(ঝ) কম্পিউটার এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি করা।
(ঞ) গ্রুপ ভিত্তিক পড়া লেখা করা।
(ট) বেশি বেশি লেখার অভ্যাস করা।
(ঠ) সর্বোপরি নিজেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি করে তোলা।
(ড) সময় ও সুযোগ থাকলে বিবিএ অথবা এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করা।
শেষ কথা
সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বিশ্বব্যাপী ব্যবসা যেভাবে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন এবং ঝুকিপূর্ণ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে সেখানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবসা এখন আর পূর্বের মত সহজ নয়। নতুন নতুন কৌশলের বহুমাত্রিক ব্যবহার এখন ব্যাংকিং ব্যবসায় এসে পড়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহারের সাথে সাথে ম্যানেজমেন্ট টেকনিক ও প্রোডাক্ট ডিজাইনারের প্রতিযোগিতা চলছে। এখন ব্যাংক মানে প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো ছাপানো কাগজের নির্দেশাবলী নয়। এখন ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গ্রাহকের বন্ধু হয়ে যেতে হয়। যার মাধ্যমে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা এবং আমানতকারী সকলেই উপস্থিত হন। সতরাং নিজেকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী এবং তথ্য প্রযুক্তির যুগের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে একজন সফল ব্যাংকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নে সাহায্য করা সম্ভব।
অফিস এক্সিকিউটিভ
ব্যবসা সম্পর্কিত সকল কাজ পরিচালনা করাই হচ্ছে ব্যাবস্থাপনা এবং যিনি পরিচালনা করেন তিনিই হচ্ছেন ব্যবস্থাপক। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ ঘটেছে জ্যামিাতক হারে। আর এই সম্প্রসারণের সাথে বাংলাদেশ তালমেলাতে চাচ্ছে সমন্তরালভাবে। ব্যাবসা যতই বাড়ছে, বাড়ছে ততই ব্যবস্থাপকের প্রয়োজনীয়তা। ব্যবস্থাপনায় (Management- এ) দক্ষ ব্যক্তিরাই হতে পারেন ব্যবস্থাপক। Management- কে বলা হয় Function of Executive Leadership. একদিনের Management Trainee Graduate, Trainee, Probationary Officer এক কথায় সকল Entry Level Officers or Executives পরিপূর্ণতা পেয়ে হয়ে যান ব্যবস্থাপক (Manager) ।
এই পেশার প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা
Business এর প্রকৃতি যাই হোক না কেন প্রত্যেক Business- এ প্রয়োজন Business Executives, যারা কাজ করে থাকেন Management Trainee, Graduate Trainee, Director of the Business, Assistant General Manager, Divisional General Manager, General Manager ইত্যাদি হিসেবে। দীর্ঘ দিনের Business Experience কাজে লাগিয়ে অনেকেই আবার নিজেই ব্যবসা (Business) শুরু করে হয়ে যান Managing Director বা Chairman of the Business ।
কারা আসবেন এই পেশায়
যারা অধিক স্নায়ুবিক চাপ সহ্য করতে পারেন, যাদের আছে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ-ক্ষমতা (Decision Making), পুর্বানুমান (Forcasting), এবং সাংগঠনিক (Organizing) যোগ্যতার অধিকারী ব্যক্তিগণই এ পেশার উপযুক্ত। এছাড়া Business Executives- গণ কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন (Coordinating), নিয়ন্ত্রণ (Controlling) ও উৎসাহ দানের (Motivating) যোগ্যতা সম্পন্ন হবেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
এই পেশায় আসার জন্য ব্যবসায় প্রসাশনে উচ্চতর ডিগ্রি থাকা প্রয়োজন। এই ডিগ্রি গুলি হতে পারে Business এর উপর Bachelor অথবা Masters, যেমন BBA (Bachelor in Business Administation), MBA (Masters in Business Administration) । বর্তমানে Specialized Degree-কে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং এগুলোর চাহিদাও বেশি। আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের দেশেও এখন Accounting, Management, Finance, Marketing, Human Resources Management, Development Economics, Management Information System, Entrepreneurship Development ইত্যাদির উপর BBA এবং MBA ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। এখন সাধারণত General BBA, MBA দেওয়া হয় না।
কোথা থেকে ডিগ্রি নিবেন
বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেতে পারেন এই ডিগ্রি গুলি। যেমনঃ Institue of Business Administration (IBA)- ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়, Department of Business Administration- জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা ও সিলেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং Faculty of Business Studies ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন MBA Program এবং দেশের সকল Private University থেকে এই ডিগ্রি নেওয়া যাবে, তবে এই উভয় ক্ষেত্রেই ব্যয়ের পরিমাণ বেশি।
কোথায় পাবেন এই পেশার সুযোগ
এই পেশার সুযোগ সরকারি-বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রে থাকলেও সকরারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ বেশি। দেশে-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি Multinational company- তেও আছে ব্যাপক সুযোগ।
কিভাবে হবেন একজন Business Exerutive
সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজন মত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। বর্তমানে আরো একটি পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সেটি হচ্ছে নিজ থেকে প্রতিষ্ঠানের Human Resources Division-এ Curriculum Vitae Drop করা। এটি সারাসবি অথবা ডাকযোগে করা যেতে পারে।
এছাড়াও অনেক Business Organization Website এর মাধ্যমে Advertisement দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে bdjobs.com এর উদাহরণ উল্লেখযোগ্য। এটি বাংলাদেশের বৃহৎ Jobsite, সুতরাং ভাল চাকুরি পেতে হলে আপনাকে Internet এর মাধ্যমেও CV Subrnit করতে হবে।
Recruitment Test-এবং প্রস্তুতি
মৌখিক অথবা লিখিত আবার কখনও উভয় ধরনের Test এর মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। Manager Entry Level এর জন্য সাধারণত উভয়টিই এবং Mid level এবং Top level এর জন্য শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। Business Organization- গুলি Candidate-দের Academic Field এর পাশাপাশি English, General Math, Analytical Ability এর উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মৌখিক পরীক্ষায় Candidate-এর Smartness এবং Communication Capability দেখা হয়।
কেন আসবেন এই পেশায়
এই পেশাতে পাবেন নিজেকে বিকশিত করার পুরো সুযোগ, পারবেন নিজের সৎ চিন্তাকে কাজে লাগাতে। পাশাপাশি জীবন নির্বাহ করার জন্য পাবেন বড় অংকের আয়ের সুযোগ। একজন Business Executive Entry Level- এ Remuneraution পেতে পারেন ১০,০০০-৩৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। এটি নির্ভর করবে ব্যক্তির দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার উপর। সাধারণত দেশি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বিদেশি এবং Multination প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি বেতন দিয়ে থাকে। সুতরাং আপনি ইচ্ছে করলে হতে পারেন একজন অফিস এক্সিকিউটিভ। এজন্য আপনাকে আপনার Undergraduate Level থেকে Preparation নেওয়া জরুরি। আপনার Math, English, Critical Reasoning, Analytical ability-এর ভিত মজবুত হওয়া দরকার আগে থেকেই। Smartness এবং সুন্দর Attitude নিয়ে যেতে পারে আপনাকে অনেক দূর।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা
স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে সম্মানজনক পেশা গ্রহণের সুযোগ পায়। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বছরের যে কোন সময়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন মারফত এসব পদে নিয়োগ দান করে। এ পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দ্রুত প্রতিষ্ঠা লাভ, সম্মানজনক জীবিকা অর্জন সেই সাথে দেশ ও জাতির কল্যাণে ভাল ভূমিকা রাখা যেতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে সফলতার জন্য চাই প্রস্তুতিমূলক পড়াশুনা এবং কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়।
সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১ম ও ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে এ পেশায় লোক নিয়োগ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিম্নের প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লেখযোগ্য-
সরকারি প্রতিষ্ঠান
ক) পাবলিক ইউনিভার্সিটি
খ) সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও অন্যান্য অফিসে
গ) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহে
ঘ) সামরিক বাহিনীর বেসামরিক পদে
ঙ) লাইব্রেরি ইত্যাদি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান
ক) প্রাইভেট ইউনিভার্সিাট
খ) প্রাইভেট কলেজ ও ইন্সটিটিউট
গ) গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি
ঘ) বায়িং হাউজ
ঙ) প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক
চ) জাতীয় ও বহুজাতিক কোম্পানী
ছ) আন্তর্জাতিক সংস্থা
জ) ব্যবসায়িক সংগঠনের অফিস
ঝ) বিভিন্ন কারখানার অফিসে
চাহিদা
পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ, অনুষদ, হলসহ মূল প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগ যেমন একাডেমিক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, সংস্থাপনসহ বিভিন্ন বিভাগের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা, সকল প্রকার তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের মূল দায়িত্ব প্রশাসনিক কর্মকর্তার। তিনি তার বিভাগের অধঃস্তন কর্মচারীদের মাধ্যমে তার কাজ সমাধা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অনান্য সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগকে দেখাশুনার জন্য নির্বাহী দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিই Admin offcer হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এসব পদগুলো হলো-
(ক) জনসংযোগ কর্মকর্তা/ পরিচালক, জনসংযোগ বিভাগ।
(খ) মানব সম্পদ উন্নয়ন কর্মকর্তা।
(গ) হিসাব কর্মকর্তা।
এছাড়া সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী দায়িত্বে অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়। যেমন-
(ক) উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা
(খ) পল্লী-উন্নয়ন বোর্ড পরিচালক ইত্যাদি
যোগ্যতা
বিএ/ বিএসসি/ বিকম/ বিএসএস পাশ/ সম্মান। (সকল ক্ষেত্রে ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ, তবে কখনও কখনও একটি তৃতীয় বিভাগকেও সুযোগ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কোন একটিতে ১ম বিভাগ প্রয়োজন হতে পারে।)
কোন কোন ক্ষেত্রে মাস্টার্স ডিগ্রির প্রয়োজন হয়।
অনেক সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে সম্পর্কিত Subject- এ স্নাতক/ স্নাতকোত্তর চাওয়া হতে পারে। লাইব্রেরিয়ানের ক্ষেত্রে লাইব্রেরি সায়েন্সএ স্নাতক/ স্নাতকোত্তর চাওয়া হতে পারে। সমাজসেবা অফিসারের ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ, সমাজকর্মকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
অগ্রাধিকার
Computer এ দক্ষতা। এক্ষেত্রে MS Word, Excel, Power Point এর Program জানাই যথেষ্ট।
English এ বলা, লেখাকে প্রাধান্য দেয়া হয় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে।
আজকাল এমবিএকে বেশ প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
অভিজ্ঞতা
কোন কোন প্রতিষ্ঠান ১-৫ বছরের সংশ্লিষ্ট চাকুরির অভিজ্ঞতা চায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়াও চাকুরি করা সম্ভব।
বিষয়ভিত্তিক অবস্থান
এ পেশাকে ১ম ও ২য় শ্রেণীর মান দেয়া হলেও সিদ্ধন্ত গ্রহণকারী ক্ষমতা না থাকায় এ পেশাকে বোরিং লাগাতে পারে। ১ম শ্রেণীর পেশা হলেও বিসিএস ক্যাডারদের মত সমাজে তাদের সম্মান দেয়া হয় না।
মজা
নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ
পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট পেশা
আধুনিক যুগের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ার
সুযোগ সুবিধা
পর্যপ্ত Bonus এর এর ব্যবস্থা
Promotion এর ব্যবস্থা
সেবার সুযোগ
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিতে কোন কোন কর্মকর্তা জণগণের সাথে অধিক সম্পর্কিত আবার অনেকেই অফিসের টেবিলেই বসে কাজ করে থাকেন।
নির্বাচন পদ্ধতি
Step-1
জাতীয় পত্র-পত্রিকা মারফত বিজ্ঞাপন দিয়ে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়।
দরখাস্তের সাথে সাধারণত ফটো, বায়োডাটা, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অভিজ্ঞতার সনদ (যদি থাকে) সত্যায়িতসহ ফটোকপি জমা দিতে হয়।
বিজ্ঞাপ্তির সাধারণত ৭-২০ দিনের মধ্যে দরখাস্ত জমা দিতে হয়।
Step-2
আবেদনপত্র জমা হওয়ার পর তা ইস্যু করে প্রবেশপত্র তৈরি করে পরীক্ষার অন্তত ১ সপ্তাহ পূর্বে প্রার্থীর নিকট পাঠানো হয়।
Step-3
আবেদনপত্রসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।
পরীক্ষার বর্ণনামূলক বা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন হতে পারে। কখনও ৫০% বর্ণনামূলক এবং ৫০% সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন হয়ে থাকে।
পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, সাধারণ জ্ঞান, সাধারণ দক্ষতা, আইকিউ, দৈনন্দিন জ্ঞানের উপরই হয়ে থাকে।
পরীক্ষার একটা অংশকে বাছাইয়ের জন্য মূল্যায়ন করা হয়।
বাছাইকৃত প্রার্থীদেরকে তার ফলাফল পত্রিকা মারফত জেনে নিতে হয়।
Step-4
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়।
এখানকার মৌখিক পরীক্ষায় তেমন কোন কঠিন প্রশ্ন থাকে না, মূলত প্রার্থীর মনোভাব যাচাই করা হয়।
মৌখিক পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলেই তার ঠিকানায় নিয়োগ পত্র পাঠানো হয়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কখনও কখনও অবশ্য PSC এর মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। আবার কিছু পদে ঐ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব সার্কুলারে লোক নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
ফার্মাসিস্ট
ফার্মাসিস্ট এর কাজ একটি মহৎ পেশা। ডাক্তারদের মত তারাও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমাদের দেশে ডাক্তারদেরকে মানুষ যেভাবে চেনে, ফার্মাসিস্টরা সেভাবে পরিচিত নন। বলতে গেলে তারা অনেকটা নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। রোগী, ডাক্তার এবং ফার্মাসিস্টকে একই ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষ হিসেবে গণ্য করা হয়, অর্থাৎ একজন রোগীর চিকিৎসায় কারও অবদানই কম নয়, যেমনটি শিশুর জন্য মা-বাবার অবদান সমান। কিন্তু বাংলাদেশে এ চিত্রটি দেখা যায়না। দেখা যেত যদি উন্নত দেশের মত আমাদের দেশে hospital ও community pharmacy থাকতো। তারপরও আমরা আশা করি আমাদের দেশেও একসময় hospital ও community pharmacy হবে এবং ফার্মাসিস্টরাও পৌঁছে যাবেন সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায়।
এবার আসা যাক আমাদের দেশে ফার্মেসী পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায়।
ফার্মেসী কোথায় পড়ানো হয়
ফার্মেসী একসময় শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলোতে পড়ানো হলেও এখন অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ানো হচ্ছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনেক বেশী ব্যয়বহুল। বর্তমানে যেখানে ফার্মেসী পড়ানো হয় তার মোটামুটি একটি তালিকা তুলে দিচ্ছি।
সরকারি: ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রাইভেট: North South South East, East-West, Stamford, UDA, Manarat, Eastern, Atish Diponkor, Northern, Asia Pacific, Dhaka International University, USTC
এখন পাবলিকি ও প্রাইভেট দুই ক্ষেত্রেই চারবছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে year ও semester system থাকলেও, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র semester system.
খরচ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: অনেক কম এবং সাবার আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়: Tution fee বাবদ খরচ ২ লক্ষ টাকা প্রায়। তবে North-South সহ আরো কয়েকটি University- তে খরচ আরো অনেক বেশি।
ভর্তি পরীক্ষা
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে পরীক্ষার্থীকে কঠিন অগ্নি পরীক্ষার মত কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। এজন্য আগে থেকে ভাল রকম প্রস্তুতির সাথে সাথে ভাল রেজাল্ট প্রয়োজন হয়। ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি MCQ এবং লিখিত উভয় পদ্ধতিই চালু আছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সবচেয়ে কঠিন এবং প্রশ্ন হয় MCQ পদ্ধতিতে। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশাল Tution fee দেওয়ার মত আর্থিক ক্ষমতা।
প্রস্তুতি
এইচ এস সি পরীক্ষা পাসের পরপরই ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে। থাকতে হবে বইয়ের উপর প্রচন্ড দখল। এজন্য কোচিং এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে, তবে মনে রাখবে কোচিং ছাড়াও চান্স পাওয়া সম্ভব। কারণ কোচিং অপরিহার্য নয় বরং প্রয়োজন। প্রশ্ন করা হয় সাধারণত পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও জীব বিজ্ঞান থেকে। তবে ফার্মেসীতে ভাল করতে হলে রসায়নে ভাল দখল থাকতে হবে।
বিষয়বস্তু
ফার্মেসীতে মূলত ঔষুধ নিয়েই পড়াশুনা। তবে একজন শিক্ষার্থীকে ঔষধ সম্বন্ধে দক্ষ করে তোলার জন্য যা প্রয়োজন সব শেখানো হয় এখানে। তাছাড়াও ঔষুধ প্রস্তুতি, বিপনন, নতুন ঔষুধ আবিষ্কার থেকে শুরু করে hospital ও community pharmacy পড়ানো হয়।
চাহিদা ও চাকুরি সুবিধা
যতদিন মানুষ থাকবে ততদিন রোগ ব্যাধি থাকবে এবং মানুষকে ঔষধ থেতে হবে। তাই আমাদের দেশে ফার্মেসী বিষয় খোলার পর থেকেই চাকুরির ক্ষেত্রটা সব সময়ই অবারিত। কারণ বাংলাদেশে ঔষূধ কোম্পানী ক্রমাগতভাবে বাড়ছে, বাড়ছে চাকুরি সুবিধা। ঔষুধ কোম্পানীতে চাকুরি ছাড়াও রয়েছে hospital ও community pharmacy তে নিজের career গড়ার সুবিধা। যদিও বাংলাদেশ এ দু’ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে কিন্তু বিদেশে রয়েছে hospital ও community pharmacist এর ব্যাপক চাহিদা। তবে আমাদের দেশে hospital ফার্মাসিস্ট হিসাবে নিয়োগ শুরু হলেও পরবর্তিতে যেকোন ভাবেই হোক তা বন্ধ রয়েছে। আরো রয়েছে শিক্ষকতার মত মহৎ পেশা ছাড়াও বিসিএস এর সুবিধা। যদিও ডাক্তারদের মত ফার্মাসিস্টদের জন্য কোন special বিসিএস নেই। সব মিলিয়ে বলা যায়- ফার্মেসী একটি ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়। তা আরো অনেকদিন চাকুরীর বাজারে ভালভাবেই রাজত্ব করবে।
সম্ভাবনা
বর্তমানে বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রথম তৈরি পোশাক, আর দ্বিতীয় ঔষধ। ধারণা করা হচ্ছে আর কয়েক বছরের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতকে ছাড়িয়ে ঔষধ শিল্প চলে আসবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস হিসাবে। বর্তমানে চাহিদার ৯৭% ঔষধ দেশেই তৈরি হয় এবং বাংলাদেশের ঔষধ পৃথিবীর প্রায় ৫৬টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। যে কয়েক শতাংশ ঔষধ বাংলাদেশে তৈরি হয়না সেগুলো এশিয়ার কোন দেশে তৈরি হয়না। এমনকি আমাদের ঔষধ প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও অনেক বেশি মানসম্পন্ন। তবে এখনও আমরা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ঔষধ রপ্তানি করতে পারিনা। কারণ আমাদের কোন Reference Laboratory নেই। তবে এ অভাব পূরণ হলে ঔষধ শিল্প আরো সাফল্য লাভ করবে। আর এ কৃতিত্ব এদেশের ফার্মাস্টিদের, যাদের মেধা আর পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পের আজ এ অবস্থান।
Scholarship
বর্তমান যুগ হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগ। যার কারণে ফার্মেসীর ছাত্র ছাত্রীদের জন্য রয়েছে Scholarship এর অনেক সুযোগ। আমাদের দেশের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ভাল করে উচ্চ শিক্ষার জন্য Scholarship নিয়ে যাওয়া যায় বিশ্বের নামী দামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। সেখানে রয়েছে আকর্ষণীয় চাকুরি সুবিধা। তাছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাওয়া যায়। এছাড়াও ভাল ফলাফলের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে Scholarship এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রয়েছে Tution fee-র বিশাল ছাড়।
চারুকলা
বর্তমান সময়ে উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও ফাইনআর্টস (Fine Arts) বা চারুকলা শুধুমাত্র সাজ-সজ্জার বিষয় হিসেবে কিংবা সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে আর গণ্য করা হচ্ছে না। এখন এর ব্যবহারিক প্রয়োগ নানাবিধ এবং দিন দিন উত্তরোত্তর তা বেড়েই চলেছে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা নানামুখী কর্মক্ষেত্রে তাদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
যেভাবে শুরু করবেন
ছবি আঁকা, নকশা, ডিজাইন ইত্যাদি বিষয়ে যারা আগ্রহী, কিংবা সৃজনশীল বিষয় নিয়ে ভাবতে যারা ভালোবাসেন তারা এদিকে এগুতে পারেন।
যেখানে পড়বেন
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু চারুকলা মহাবিদ্যালয় ও কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতক অর্থাৎ বিএফএ (ব্যাচেলর অব ফাইন আর্টস) এবং স্নাতকোত্তর অর্থাৎ এসএফএ (মাস্টার্স অব ফাইন আর্টস) এই দুই পর্বের ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।
আগ্রহ ও ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীরা চিত্রকলা, ডিজাইন, সিরামিকস, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, ফ্যাশন ডিজাইন ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে তাদের মেধার বিকাশ ঘটচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে নানাবিধ সরকারি, বেসরকারি, প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছেন।
১। ফ্রিল্যান্স শিল্পী
চারুশিল্পীদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা নিজেদেরকে স্বাধীন রেখে তাদের কাজ পরিচালনা করে। এরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে স্বাধিনভাবে ইচ্ছামত শিল্পকর্মের কাজ করে। বিনিময়ে ভাল অংকের আর্থিক সম্মানী লাভ করে।
২। মিডিয়াতে
প্রিন্টিং মিডিয়ায় ডিজাইনার হিসেবে কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন নির্মাণ থেকে শুরু করে সেট ডিজাইন, অলংকরণ, ক্যামেরার পেছনে চারুকলার শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সাফল্য দেখাতে সক্ষস হচ্ছেন। চলচ্চিত্র শিল্পেও একজন চারুকলার শিক্ষার্থীর অনেক ধরনের ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রাইভেট চ্যানেল টিভি ও রেডিও এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসমূহে চারুকলার শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি কদর। বিভিন্ন পত্রিকার কার্টুন তৈরি, বইয়ের প্রচ্ছদ অংকনের মাধ্যমেও শিল্পীদের রয়েছে দেশ জোড়া সুনাম।
৩। শিক্ষাক্ষেত্রে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে – হাইস্কুল, প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (PTI) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে।
৪। ড্রেস ডিজাইন কিংবা ফ্যাশন শিল্পে
এই সেক্টরে বর্তমান সময়ে দেশে ও বিদেশে চারুশিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লক্ষণীয়। নিত্য নতুন ও অভিনব ড্রেস ডিজাইনসহ পোশাকের শৈল্পিক সৌন্দর্যের অন্বেষণ ও বিকাশ আমাদের নজর কাড়ে।
৫। সিরামিকস, টেরাকোটাশিল্পসহ গিফট আইটেম
এখানেও শিল্পী তার মনকে গড়ে তোলে সৌন্দর্যের চিরন্তন প্রতিচ্ছবি। সর্বোপরি বর্তমান সময়ে চারুকলা (Fine Arts) শুধুমাত্র সাজ-সজ্জা কিংবা সৌন্দর্য বর্ধনের অংশই নয় বরং নানাবিধ ব্যবহারিক ক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে।
আত্ম কর্মসংস্থান বা ব্যবসাঃ
আমাদের সমাজে রয়েছে অসংখ্য আলোক বর্তিকা, অসংখ্য সম্ভাবনা, অফুরন্ত সম্পদ ভান্ডার, শুধু দুই চক্ষু মেলে দেখতে হবে, আর দেখার মত চোখ থাকতে হবে। অমিত সম্ভাবনার এই বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ২ কোটি উচ্চ শিক্ষিত যুবক যারা প্রতিদিন চাকুরি নামক সোনার হরিণ ধারার জন্য আবেদন পত্র লিখতে লিখতে হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কোথায়?
এখন থেকে নিজেই এমন কোন পেশা পছন্দ করুন যাতে আপনিই হতে পারেন অন্যের চাকুরিদাতা। আর এজন্যই প্রয়োজন সমাজে ব্যাপকহারে চালু করা সেলফ ইমপ্লয়মেন্ট বা আত্ম-কর্মসংস্থান পদ্ধতি। আর দেরি না করে আজই নেমে পড়ুন আত্ম-কর্মসংস্থানে।
পেশা হিসেবে আত্মকর্মসংস্থান বলতে আমরা মূলত ব্যবসাকেই প্রাধান্য দিতে চাই। এক্ষেত্রে ব্যবসা হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে পণ্য অথবা সেবা উৎপাদন, বিপনন এবং ক্রয় বিক্রয়কেই বুঝায়। ব্যবসা মানব সভ্যতার সমবয়েসি। সময়ের বিবর্তনে মানুষের চাহিদার ধরন এবং মাত্রাতেও এসেছে নানা বৈচিত্র। এসব বৈচিত্রময় চাহিদার অনিবার্য ফলাফল ব্যবসা জগতের সীমাহীন বিস্তৃতি। ব্যবসা এখন ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রকে অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করছে সমানতালে। পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী এবং প্রভাবশালী পেশাজীবী গোষ্ঠী এখন ব্যবসায়ী সমাজ। ক্ষেত্র বিশেষে রাষ্ট্রও এখন বড় ব্যবসায়ী সংগঠন।
ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য আর্থিক দিক দিয়ে তেমন কোন বেগ পেতে হয় না। এক্ষেত্রে নিজের অল্পকিছু মূলধন দিয়ে এবং ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনমত ঋণ গ্রহণ করলেই এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে মুনাফার হার যেমন কম তেমনি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সহজ। ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান একক মালিকানায় হওয়া ভাল তাতে নিজেকে অন্তত প্রতিষ্ঠানের একক অধিপতি মনে হবে এবং সেই সঙ্গে উঠে আসবে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর।
যে কোন কাজে সাফল্য লাভের জন্য চাই কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। আত্মকর্মসংস্থানও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে পরিশ্রমটা অবশ্যই হতে হবে পরিকল্পনা মাফিক, অন্যথায় পরিশ্রম হবে পান্ত ভাতে ঘি ঢালার মত। অন্যদিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রতিষ্ঠন এমন স্থানে স্থাপন করা দরকার যেখানে সহজে ও স্বল্পমূল্যে জনশক্তি পাওয়া যায় এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজার ভাল। পণ্যের বিজ্ঞাপন/ প্রচার এমনভাবে দিতে হবে যাতে অল্প খরচে অধিক সংখ্যক ক্রেতার নিকট তথ্য উপস্থাপন করা যায়।
Thank you very much for sharing, I learned a lot from your article. Very cool. Thanks.
Your article helped me a lot, is there any more related content? Thanks! https://accounts.binance.com/zh-TC/register-person?ref=VDVEQ78S
I don’t think the title of your article matches the content lol. Just kidding, mainly because I had some doubts after reading the article. https://accounts.binance.info/register?ref=P9L9FQKY
Vi gjør det enklere for alle å få registrert EU-pass, førerkort, ID-kort med mer, uansett hvor du kommer fra.
Kjøp registrerte IELTS | TOEFL-sertifikat
På nett
https://www.drivingpermits.de/ich-mochte-fuhrerschein-machen/
Review about (https://expressfuhrerscheinverkauf.com/)” Hello there. I found this site via Google even as searching for a comparable subject to my docucument,it site came up. It appears great. I have bookmarked it in my google bookmarks to come back then and then apply for my drivers license
Review about (https://documenteverywhere.com/) ” Hello there. I found this site via Google even as searching for a comparable subject to my docucument,it site came up. It appears great. I have bookmarked it in my google bookmarks to come back then and then apply for my drivers license
Review about (https://kopakorkorthar.com/ )Hello there. I found this site via Google even as searching for a comparable subject to my docucument,it site came up. It appears great. I have bookmarked it in my google bookmarks to come back then and then apply for my drivers license
Review about (https://friedmanndocuments.com/) Hello there. I found this site via Google even as searching for a comparable subject to my docucument,it site came up. It appears great. I have bookmarked it in my google bookmarks to come back then and then apply for my drivers license
Review about (https://licenciauniversal.com/) Hello there. I found this site via Google even as searching for a comparable subject to my docucument,it site came up. It appears great. I have bookmarked it in my google bookmarks to come back then and then apply for my drivers license
Thanks for sharing so amazing https://licenciaenminutos.com/