একজন ড্রাইভারের দায়িত্ব ও কতর্ব্য
দিন দিন পেশাদার ড্রাইভারদের চাহিদা বাড়ছে। দেশে উবার কিংবা পাঠাও কারস-এর মতো সার্ভিসগুলো চালু হওয়ার পর থেকে দেশে ড্রাইভারের চাকরির সুযোগ ও সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
Driving jobs description
Driving jobs descriptionএকজন কমার্শিয়াল ড্রাইভার বা পেশাদার চালক সরকারি, বেসরকারি যে কোন ধরনের অফিস বা প্রতিষ্ঠানের যানবাহন কিংবা শিল্পকারখানা, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির ভারি যানবাহন চালিয়ে থাকে। একজন পেশাদার চালকের দক্ষতার উপর সড়কে জানমালের নিরাপত্তা নির্ভর করে।
একজন ড্রাইভারের দায়িত্ব ও কতর্ব্য
ড্রাইবার এর করণীয় কি কি ?
-জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গাড়ি চালানো
-রাস্তার অবস্থার সাথে মানানাসই গতি, ট্রাফিক আইন মেনে চলা, স্পিড লিমিট এবং ব্রেকিং এর দূরত্ব বজায় রাখা
-যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যে সীট বেল্ট বাধা নিশ্চিত করা
-গাড়ির যাবতীয় কাগজপত্র যথা: লগবুক, ব্লু বুক, ট্যাক্স টোকেন, ইন্সুরেন্স, রুট পারমিট যথাযথ ভাবে নবায়ন এবং গাড়িতে সংরক্ষণ করা
-গাড়িকে সব সময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা
-প্রতি ট্রিপের জন্যে পর্যাপ্ত ফুয়েল রাখা নিশ্চিত করা
-গাড়ির জ্বালানী খরচ পর্যবেক্ষণ করে যথাসম্ভব খরচ হ্রাস করা
-নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসারে যান বাহনের যত্ন নিশ্চিত করা এবং ম্যানেজারের নিকটে কোন সমস্যার জন্যে রিপোর্ট করা
-গাড়ি চালনার পূর্বে চেক লিস্ট অনুযায়ী সকল জিনিসপত্র ঠিকমত আছে কি না তা পরীক্ষা করা
-সর্বদা গাড়ির চলাচলের তথ্য প্রতিষ্ঠানের লগবুকে রেকর্ড করা
-দুর্ঘটনাক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নিয়ম মেনে চলা
-এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য জরুরি সেবার চালকদের নিরাপদে, দ্রুত গতিতে, সংক্ষিপ্ততম সময়ে গন্তব্য স্থলে পৌছাতে হবে।
ড্রাইভারের কি কি যোগ্যতা থাকতে হয়?
সরকারি এবং অধিকাংশ বেসরকারি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতে চাইলে ন্যূততম অষ্টম শ্রেণি পাশ হতে হবে। অনেক বিদেশী বা বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করতে চাইলে ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগের দক্ষতা থাকতে হবে। যেমন ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ রেডক্রসে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতে চাইলে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশের পাশাপাশি ইংরেজিতে যোগাযোগ করার দক্ষতা থাকতে হবে।
একজন পেশাদার চালকের কী কী দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
যেকোন ধরনের রাস্তায় গাড়ি চালনায় দক্ষ হতে হবে
ট্রাফিক আইন এবং বিভিন্ন সংকেত সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে
গাড়ির যন্ত্রাংশ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে
গাড়ির ছোটখাটো যান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকতে হবে
কর্মক্ষেত্রে ও আশপাশের এলাকার রাস্তা নিয়ে ধারণা রাখতে হবে
যেকোন ধরনের পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডা মাথায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে গাড়ি চালাতে হবে
দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালাবার অভ্যাস থাকতে হবে
কোথায় প্রশিক্ষণ নিবেন চালক হতে চাইলে?
বাংলাদেশে অধিকাংশ পেশাদার চালক অন্য কোন পেশাদার চালকের সহকারি হিসেবে কাজ করে গাড়ি চালাবার অভিজ্ঞতা অর্জন করে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (BRTA) অনুমোদিত ড্রাইভিং স্কুল সারা দেশে মাত্র ৭৭টি। অথচ এর বাইরেই ঢাকা শহরে আনুমানিক ৫০০ এর মত অবৈধ ড্রাইভিং স্কুল গড়ে উঠেছে । এসব স্কুলে অদক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এজন্য ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হবার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে সারাদেশে ১৭টি বিআরটিসি (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন) ট্রেনিং ইন্সটিটিউটেও ড্রাইভিং শেখার সুযোগ আছে
লাইসেন্স কীভাবে করবেন?
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রথমে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি(BRTA) তে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে। এরপর লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্টে উত্তির্ণ হলে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স পাওয়া যায়। শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের মেয়াদ থাকাকালীন অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।
পেশাদার হালকা (মোটরযানের ওজন ২৫০০ কেজি’র নিচে) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে। পেশাদার মধ্যম (মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে। পেশাদার ভারী (মোটরযানের ওজন ৬৫০০ কেজির বেশি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে।
এছাড়া পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীকে প্রথমে হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। এর ন্যূনতম তিন বছর পর তিনি পেশাদার মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার কমপক্ষে তিন বছর পর ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়।
লাইসেন্সের আবেদনের জন্য ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। মৃগী রোগ, হৃদরোগ, রাতকানা, বধিরতা, বর্ণান্ধ, শারীরিক অক্ষমতা/ স্বল্পতা, মাসসিক সমস্যা ইত্যাদি রোগ থাকলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
ড্রাইভিং এর কর্মক্ষেত্র কি কি?
বর্তমানে বাংলাদেশে দক্ষ ও বৈধ পেশাদার চালকের অনেক অভাব। কাজেই গাড়ি চালনায় দক্ষ হলে এবং বৈধ লাইসেন্স থাকলে বাংলাদেশে এ কাজের সুযোগ অনেক। সরকারি বিভিন্ন অফিস, আদালত, প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার সহ অন্যান্য বাহিনী, সামরিক বাহিনী, বেসরকারি সংস্থা, বাণিজ্যিক সংস্থা ও প্রাইভেট অফিস, শিল্পকারখানা, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ সকল স্থানেই চালকের প্রয়োজন। এসব স্থানে চালকেরা অনেক সময় ভারি যানে মালামাল বহনের কাজ করেন। কেউ কেউ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আনা-নেওয়ার কাজ করেন। অনেকে ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশন, বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসে সেবা দানের কাজে নিয়োজিত থাকে।
একজন পেশাদার চালকের মাসিক আয় কেমন?
সরকারি যে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে ড্রাইভারদের বেতন গ্রেড-১৫ অনুযায়ী ১০-২৪ হাজার টাকা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ড্রাইভারের বেতন শুরুতে ১২-১৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে। তবে বেতন প্রতিষ্ঠানের আকার আর চালকের দায়িত্বের উপর নির্ভর করে। ৮-১০ বছরের অভিজ্ঞদের বেতন ২০-২৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে। যেমন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশে চালকের বেতন মাসিক ২০-৩০ হাজার টাকা
ড্রাইভারদের ওভার টাইম ডিউটি করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। ব্র্যাকে ছুটির দিন ওভার টাইম ডিউটির জন্য একজন চালক প্রতি ঘন্টায় ৬০ টাকা আর কর্মদিবসে কর্মঘন্টার পর ওভার টাইম ডিউটির জন্য ৫৫ টাকা প্রতি ঘন্টা হিসেবে পান।
কুরিয়ার সার্ভিস, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি ও অন্যান্য দুরপাল্লার ভারি যানবাহনের চালকদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বেতন না হয়ে অনেক জায়গায় ট্রিপ অনুযায়ী বেতন দেওয়া হয়।
ড্রাইভিং ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে ?
একজন ড্রাইভার হিসেবে যে কোন প্রতিষ্ঠানে অন্য কোন পদে পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব না যদি না অন্যান্য কারিগরি বা শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকে। তবে ড্রাইভার হিসেবে সেনাবাহিনী, সরকারি, বেসরকারি, বাণিজ্যিক, আন্তর্জাতিক বা বহুজাতিক যে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানেই কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। প্রথমে হালকা যান চালনা শুরু করে ধীরে ধীরে মধ্যম ও ভারি যান চালাবার অনুমতি পাওয়া সম্ভব। সরকারি গুরুত্বপুর্ন কাজে ড্রাইভার হিসেবে কাজের সুযোগ পাওয়া সম্ভব। দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এ পেশায় বেতন বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে চাকুরীর স্থায়িত্বকরণ ও হয়ে থাকে।