ডাক্তারি পেশা

মহৎ পেশা হিসাবে যে বিষয়গুলো অতি প্রাচীন কাল থেকেই গণ্য, চিকিৎসা পেশা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাইতো এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও চিকিৎসা পেশাকে বলা হচ্ছে ‘The most noble profession of the world’. তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এই পেশায় সৎ থেকে বিপুল অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে যা তাকে নিজস্ব আর্থিক স্বচ্ছলতা আনয়নের পাশাপাশি সমাজের দুঃখ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিবে। এই পেশায় যে ব্যাক্তি-স্বাধিনতা থাকে তা অন্য পেশায় সত্যিই বিরল। চিকিৎসকগণ ইচ্ছা করলে কোন ধরনের সরকারি কাজে যোগদান করতে পারেন অথবা, “প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মাধ্যমেও সুনাম ও অর্থ বিত্ত লাভ করতে পারেন। পাশাপাশি সমাজ সেবার সুযোগও নিতে পারেন।

Doctor Career

Doctor Career

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আকাক্ষিত পেশাগুলোর মধ্যে ডাক্তারি একটি। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাচেলর অফ মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অফ সার্জারি (M.B.B.S.) ডিগ্রিধারীরা ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারেন। এ ডিগ্রি ডাক্তারি পেশার সূচনা মাত্র। তাই অধিকাংশ এমবিবিএস ডাক্তার চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে কোন বিশেষ দিকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে থাকেন। যেমনঃ মেডিসিন, নিউরোলজি, গাইনিকোলজি, অনকোলজি, গ্যাস্ট্রোলজি, কার্ডিওলজি ইত্যাদি।

এক নজরে একজন এমবিবিএস ডাক্তার:

সাধারণ পদবী: মেডিকেল অফিসার, ডিউটি ডক্টর
বিভাগ: স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারি, বেসরকারি, প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি
ক্যারিয়ারের ধরন: পার্ট-টাইম, ফুল টাইম
লেভেল: এন্ট্রি
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা: ন্যূনতম এক বছরের ইন্টার্নশিপ
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য গড় বেতন: ৳১৫,০০০ – ৳৫৫,০০০
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়স: ২৫-৩০ বছর

মূল স্কিল: সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের দক্ষতা, রোগীকে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারা, ঔষধ ও চিকিৎসা প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখা

বিশেষ স্কিল: সেবার মানসিকতা থাকা, যোগাযোগের দক্ষতা

একজন এমবিবিএস ডাক্তার কোথায় কাজ করেন?

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল
সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র
রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণার প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে একজন ডাক্তারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রিজিওনাল মেডিকেল অফিসার পদে কাজ করতে হয়।

গতানুগতিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে আপনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ব্র্যাক (BRAC), কেয়ার (CARE) আর ইউনিসেফের (UNICEF) মতো আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও এনজিওতে কনসালট্যান্ট হিসাবে কাজের সুযোগ পাবেন।

এমবিবিএস ডাক্তার এর কাজ

উপজেলা পর্যায়ে মেডিকেল অফিসাররা হাসপাতালের আউটডোরে রোগী দেখেন। জরুরি ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন;
রোগের লক্ষণ বুঝে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলে রোগীকে ঔষধের প্রেসক্রিপশন দেন;
রোগের লক্ষণ বুঝে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব না হলে রোগীকে প্রয়োজনীয় টেস্ট করতে বলেন;
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের নিয়মিত চেকআপ করেন ও খাদ্যাভ্যাস নির্ধারণ করে দেন;
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ রাখেন;
বড় কোন সার্জারির সময় অপারেশন থিয়েটারে সাহায্য করেন। যেমন, নবজাতকের স্বাভাবিক প্রসবের দায়িত্বে থাকা অভিজ্ঞ গাইনিকোলজিস্টকে সহায়তা দেন;
পরিবার পরিকল্পনা ও টিকাদান কর্মসূচিতে কাজ করেন।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে নিযুক্ত এমবিবিএস ডাক্তাররা চিকিৎসা কার্যক্রমের পাশাপাশি সংলগ্ন মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার সময় অধ্যাপকদের সাহায্য করেন।

একজন এমবিবিএস ডাক্তারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ একজন মেডিকেল অফিসার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল অনুমোদিত কলেজ থেকে ৫ বছর মেয়াদী এমবিবিএস ডিগ্রি পাশ করতে হবে।
বয়সঃ সাধারণত ২৫-৩০ বছর।
অভিজ্ঞতাঃ ডিগ্রির শেষে মেডিকেল হাসপাতালে এক বছরের ইন্টার্নশিপ করতে হবে।
লাইসেন্সঃ বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে চিকিৎসা সেবা দেবার জন্য লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক।
একজন এমবিবিএস ডাক্তারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
ডাক্তারি একটি সেবামূলক পেশা। তাই একজন ভালো ডাক্তার হতে সাধ্য অনুযায়ী রোগীদের সেবা দেবার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন।

চিকিৎসা জ্ঞানের পাশাপাশি আলাদা কিছু দক্ষতাও অর্জন করতে হবে আপনাকে। এর মধ্যে রয়েছেঃ

রোগীর সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা;
চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন নতুন পদ্ধতি ও গবেষণা সম্পর্কে খোঁজ রাখা ও তার চর্চা করা;
আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির ব্যবহার শেখা;
হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা থাকা।
একজন দক্ষ ডাক্তার হতে হলে হাসপাতালগুলোতে আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হবে আপনাকে। তাছাড়া, চিকিৎসার বিশেষ ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত পড়াশোনা করা প্রয়োজন। আলট্রাসনোগ্রাফি থেকে শুরু করে রেডিওলজি – ব্যক্তিগত আগ্রহের ভিত্তিতে যে কোন বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে আপনার।

কোথায় পড়বেন এমবিবিএস?

বাংলাদেশে বিএমডিসি স্বীকৃত মোট ২৩ টি সরকারি ও ৫৫ টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি দেয়া হয়। সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেতে হলে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত শিক্ষার খরচ প্রচুর। এছাড়া বহু মেডিকেল কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত ও ভর্তি প্রস্তুতি নেয়া দরকার।

একজন এমবিবিএস ডাক্তারের মাসিক আয় কেমন?

একজন এমবিবিএস ডাক্তারের আয় চিকিৎসা কেন্দ্রের স্থান ও মানের উপর উপর নির্ভর করে।
৫ বছরের এমবিবিএস কোর্স শেষে একজন ইন্টার্ন মাসে ৳১৫,০০০ পান;
সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে বিসিএস ক্যাডার হিসাবে একজন এমবিবিএস ডাক্তারের মাসিক আয় সাধারণত ৳৫০,০০০ – ৳৫৫,০০০;
বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মাসে গড়ে ৳১৭,০০০ – ৳৫০,০০০ দেয়া হয়;
পার্ট টাইম ডিউটির ক্ষেত্রে প্রতিদিন গড়ে ৮৫০ – ২৫০০ টাকা দেয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য যে, কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি নেয়া শুরু করার পর আপনার আয়ও বেড়ে যাবে।

একজন এমবিবিএস ডাক্তারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

এমবিবিএস ডিগ্রি দিয়েই ডাক্তারি শুরু হয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (যেমন, গাইনিকোলজিস্ট) হতে হলে কিংবা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে হলে উচ্চতর ডিগ্রির কোন বিকল্প নেই। কিন্তু তার আগের সময়টুকু কাজ করে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। এ অভিজ্ঞতা আপনার ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করবে।

উন্নত বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে প্রচুর কাজ হলেও বাংলাদেশে এর সুযোগ এখনো সীমিত। তাই অনেকে পাবলিক হেলথ সেক্টরে কাজ করেন। সাধারণত বিভিন্ন দেশী-বিদেশী এনজিও আর আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো এ সেক্টর নিয়ে কাজ করে।

একটা বিষয় সবসময় মনে রাখা দরকার। এ পেশা সরাসরি জনকল্যাণের সাথে জড়িত। আপনার জ্ঞান-দক্ষতা আর আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাঁচাতে পারেন বহু মানুষের জীবন।